একটি দেশের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যতটা শক্তিশালী হয় সেই দেশের আকাশসীমা ততটাই সুরক্ষিত থাকে। বর্তমানে অনেক দেশই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করছে। যেমন রাশিয়া এস-৪০০, মিসাইল, শত্রুপক্ষের সব দূরপাল্লার মিসাইল, মাঝারী পাল্লার মিসাইল ও পরমাণু অস্ত্র সজ্জিত বোমারু বিমান, জঙ্গি বিমান দ্বারা নিক্ষিপ্ত সকল শ্রেণীর মিসাইল, ক্লাসটার বোমা, নাপাম বোমার মতো ভয়ংকর অস্ত্রকে ভূমিতে আঘাত করার পূর্বেই এস-৪০০ মিসাইল ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে। রাশিয়ার তৈরি সর্বাধুনিক এই মিসাইল বিশ্বের সকল দেশের কাছে লোভনীয় মিসাইলে পরিণত হয়েছে। কিন্তু রাশিয়া এই মিসাইল কয়েকটি দেশের কাছে শুধু সরবরাহ করতে সম্মতি দিয়েছে, দেশগুলো হলো—চীন, ভারত, তুরস্ক ও সৌদিআরব। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই মিসাইলের কোনো গোপন তথ্য তার শত্রুদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে জানাতে রাজি নয় তাই যে দেশগুলোর প্রতি রাশিয়ার আস্থা নেই সে দেশগুলোর কাছে রাশিয়া কোনো অবস্থাতেই এস-৪০০ মিসাইল বিক্রি করে না। অপর দিকে যুক্তরাষ্ট্র প্যাট্রিয়ট মিসাইল অনেক আগেই তৈরি করেছে। ইসরায়েল ও ন্যাটো জোটের কিছু দেশের কাছে প্যাট্রিয়ট মিসাইল যুক্তরাষ্ট্র সরবরাহ করেছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তার নিজের ও মিত্র দেশের নিরাপত্তার জন্য রাডার সজ্জিত গোয়েন্দা বিমান এ্যাওয়াক্স, পরমাণু বোমা সজ্জিত বোমারু বিমান বি-১, বি-২, বি-৫২, জঙ্গি বিমান এফ-১৮, এফ-২২ ও এফ- ৩৫ এর ওপর নির্ভরশীল অপরদিকে রাশিয়া পরমাণু বোমা বহনে সক্ষম ব্যাকফায়ার বোমারু বিমান, এসইউ-৩০ ও এসইউ-৩৫ জঙ্গিবিমান এর উপর নির্ভরশীল। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া আকাশ প্রতিরক্ষায় ট্যাঙ্ক বিধ্বংসি মিসাইল বহন করতে সক্ষম জঙ্গি হেলিকপটার ব্যবহার করছে। আর ব্রিটেন তার আকাশ প্রতিরক্ষায় টাইফুন জঙ্গি বিমান ও ফ্রান্স রাফাল জঙ্গি বিমান ব্যবহার করছে। এর মধ্যে ব্রিটিশ নৌবাহিনীতে সংযোজিত দুটি নতুন বিমানবাহী রণতরীতে এফ-৩৫ জঙ্গি বিমান মোতায়েন করা হয়েছে। এফ-৩৫ জঙ্গি বিমান গভীর রাত্রে যেখানে আলো পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না সেখানে, এফ-৩৫ এর রাডার এর মনিটরে শত্রুপক্ষের সমস্ত স্থাপনা দেখা যায়। যে কারণে আকাশ পথে হোক বা নৌ পথে হোক এফ-৩৫ জঙ্গি বিমান আকাশ যুদ্ধে এগিয়ে আছে। যুক্তরাষ্ট্র এফ-৩৫ জঙ্গি বিমান ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া ও ইসরায়েল ছাড়া কোনো দেশের কাছে বিক্রি করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের ভয় একটাই যে, এফ-৩৫ এর নির্মাণ কৌশল কোনোভাবে যেন তার প্রতিপক্ষ চীন ও রাশিয়া জানতে না পারে। অপরদিকে রাশিয়া এসইউ-৩০ জঙ্গি বিমান অনেক দেশের কাছে বিক্রি করলেও এসইউ-৩৫ জঙ্গি বিমান বিক্রি করতে চায় না। আর যাদের কাছে বিক্রি করতে চায় তাদেরকে মূল প্রযুক্তি দেয় না। উল্লেখিত জঙ্গি বিমানগুলো শত্রু পক্ষের যেকোনো জঙ্গি বিমান ও বোমারু বিমানকে শনাক্ত করতে সক্ষম। যে কারণে কোনো দেশের জঙ্গি বিমান বা বোমারু বিমান যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার আকাশ সীমায় পৌঁছার ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে দেশ দুটির বিমান বিধ্বংসি ইউনিট প্রস্তুত হয়ে যায় এবং শত্রুপক্ষের বিমানগুলোকে তাড়িয়ে দেয়। চীন সবার অজান্তে জে-২০ ও জে-৩১ দূরপাল্লার জঙ্গি বিমান নির্মাণ করেছে। এর মধ্যে চীন তার প্রতিবেশী ভারতের লাদাখ সীমান্তের নিকটে জে-২০ জঙ্গি বিমান মোতায়েন করেছে। এই জঙ্গি বিমান প্রচলিত অস্ত্র ছাড়াও পরমাণু মোবা বহন করতে সক্ষম। ভারতের কোনো রাডারের পক্ষে জে-২০ জঙ্গি বিমানকে শনাক্ত করতে সক্ষম নয়। তবে ভারত যেন চীনের যেকোনো বিমান হামলা প্রতিরোধ করতে পারে তার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও ইসরায়েল ভারতকে সহায়তা করছে। আগামী দিনগুলোতে যখন দুটি দেশের মধ্যে আকাশ যুদ্ধ হবে তখন যেই দেশের কাছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির জঙ্গি বিমান ও বিমান বিধ্বংসি মিসাইল থাকবে তারাই জয়ী হবে। কারণ বর্তমানে স্থল যুদ্ধে কোনো দেশই আর সহজে মুখোমুখি হতে চায় না। কারণ এর ফলে অগনিত সৈনিকদের প্রাণ হারাতে হয় ও সমরাস্ত্র ধ্বংস হয়। তাই সব দেশগুলো চেষ্টা করছে যার যার আকাশসীমা সুরক্ষিত রাখতে।
সৈয়দ রশিদ আলম : সমরাস্ত্র বিশ্লেষক।