মানব শরীর ৬৩ লক্ষ কোটি কোষ নিয়ে তৈরি। আমরা যাতে সুস্থভাবে জীবনযাপন করতে পারি তার জন্য কোষগুলির সুস্থতা অবশ্যক আর তাই সেগুলির পরিপোষক ও পুষ্টিসাধন প্রয়োজন। ভালো খাওয়া মানে নানারকম খাবার খাওয়া। একটামাত্র খাবারে আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সব পুষ্টিগুণ থাকতে পারে না। এর ফলে নানা অপুষ্টি ঘটে যা নজরে পড়ে না। এ কথা প্রমাণিত যে পুষ্টির অভাবে মানবশরীরে নানারকম রোগব্যাধি এবং সমস্যা দেখা দেয়। এই প্রকারের অভাব প্রতিরোধ করতে সেলুলার নারিসমেন্ট থেরাপির উপকারিতার রয়েছে। এটা এক সর্বাদীন পন্থা, এতে আছে সব প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ, তন্তু, ফ্যাটি আসিড, আ্যমিনো অসিড এবং আরও নানা পুষ্টিগুণ। এই থেরাপি শরীরে সঠিক পরিমাণ পুষ্টি জোগায় এবং অপুষ্টিজনিত অভাব দূর করে।
সুস্বাস্থ্যের প্রয়োজনীয়তা:
মানবশরীর মেশিনের মতো কাজ করে এবং দৈনন্দিন কাজ করার জন্য এর অবিরাম পুষ্টিসাধন করা প্রয়োজন। শরীরের ইঞ্জিন পর্যাপ্ত পুষ্টিগুণ না পেলে তা মন্থর হয়ে যাবে ও কর্মশক্তির ঘাটতি হবে, তার ফলে শরীর ঠিকমত কাজ করতে পারবে না, এবং রোগাক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে।
সুতরাং, নিম্নোক্ত কারণে শরীর প্রত্যাশিত কর্মক্ষমতানুসারে কাজ করতে পারবে না—
জীবনশৈলী সংক্রান্ত সমস্যা:
মানবজাতির সুখস্বাচ্ছন্দ্য বাড়ার ফলে অনেকেই অলস জীবনশৈলীর শিকার হয়ে পড়েছেন। এই জীবনশৈলীর ফলে তারা স্বাস্থ্যের অবহেলা করেন, তার ফলে যদিও তাদের মনে হয় যে তারা ভালো খাবার খাচ্ছেন তবে বাস্তবে তাদের শরীরে পুষ্টির অভাব দেখা যায়। নানা ভুল খাবার খেয়ে তারা প্রয়োজনীয় পরিপোষক বাদ দিয়ে দিচ্ছেন।
খাবারের বিকল্প: শরীরের জন্য যা প্রয়োজন তা উপেক্ষা করে মানুষ জিভের স্বাদকে বেশি গুরুত্ব দেয়। তাই যা সুস্বাদু আমরা সেসব খাই, সেসব পুষ্টিকর নাও হতে পারে, যার ফলে অবশেষে পুষ্টিগত ভারসাম্য হারায়।
ফল এবং শাক সব্জি কম পরিমাণে খাওয়া: ফল এবং শাক সব্জি শরীরকে তন্তু ছাড়াও প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ দেয়। ঠিকমত হজম করায় এইগুলি সাহায্য করে এবং সবসমেত স্বাস্থোন্নতির জন্যও এইগুলি বাঞ্ছনীয়। তবে মানুষ এইসব উপকারিতা অগ্রাহ্য করে এবং শরীরের নিদেনপক্ষে যতটুকু ফল ও সব্জি খাওয়া একান্ত প্রয়োজন তা-ও যায় না।
কর্মব্যস্ত জীবন: মানুষের কর্মব্যস্ত জীবন এবং ব্যস্ত সময়তালিকার ফলে স্বাস্থ্যহানি হয়ে চলেছে। যা পায় এবং যখন সময় পায় তাই তারা খায়। তাই শরীরে পুষ্টির প্রচুর অভাব ঘটে।
খেয়ালখুশীমতো ডায়েট করা:
অনেকে এমন খাদ্যাভ্যাস করেন যা, তাদের মতে, ওজন কম করায় সহায়ক হবে, বাস্তবে এইগুলির ফলে সুস্থ থাকার জন্য শরীরের যেসব পুষ্টিগুণ প্রয়োজন তার অভাব দেখা দেয়। মানুষের সঠিক খাবার এবং ব্যায়ামের মধ্যে ভারসাম্য রাখা দরকার।
পুষ্টিকর পরিপূরক এবং সুস্বাস্থ্য
আহারের অভাব পূরণ করার জন্য সব বয়স শ্রেণীর জন্য পুষ্টিকর পরিপূরক সেবন সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং এইসব কারণে প্রত্যেকটি শ্রেণীর জন্য উপকারী।
শিশু: বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য তাদের প্রয়োজন একান্ত জরুরি পরিপোষক। পুষ্টিকর পরিপূরক স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং কর্মশক্তি জোগায় কারণ শিশুদের অনেকটা সময় পড়াশোনর এবং বাইরে প্রচুর খেলাধূলা করতে হয়। পুষ্টিকর সম্পূরক রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ায় এবং তাদের বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগায়।
যৌবন: মানসিক চাপ সামলানোর জন্য তাদের প্রয়োজন কর্মশক্তি এবং শরীরের বল। তাদের এই বয়সে শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তন/চাপ সামলাতে পুষ্টিকর সম্পূরক সহায়ক হয়।
কর্মী শ্রেণী: ব্যস্ত জীবন, কর্মস্থল এবং পরিবারের দায়দায়িত্ব, মানসিক চাপ এবং প্রতিযোগিতা সবসময় তাদের ব্যস্ত রাখে এবং স্বাভাবিক সুস্থ জীবনযাপনের শরীরের সহজাত ক্ষমতাকে ক্লান্ত করে তোলে।
চাপ দূর করয় এবং সুস্থ থাকায় পুষ্টিকর সম্পূরক সাহায্য করতে পারে।
মধ্য বয়স: বয়সের সঙ্গে দৈনন্দিন কাজ করার জন্য শরীরের যে স্তরের কর্মশক্তি প্রয়োজন তা ক্রমশ কম হতে থাকে, তার সঙ্গে অলস জীবনশৈলীর ফলে শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করে তোলার জন্য প্রতিদিন সম্পূরকের ডোজ সেবন আরো জরুরি হয়ে পড়ে। পুষ্টিকর সম্পূরক প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজের অভাব দূর করে।
বৃদ্ধাবস্থা: বার্ধক্যে উপনীত হয়ে শরীরতন্ত্র, বিশেষত পাচনশক্তি মন্থর হয়ে যায়। এছাড়া বেশ কয়েকটি পরিপোষকের অভাব দেখা দেয়, তাই সহজ কাজগুলি করার জন্যও অন্যের উপর নির্ভরশীল থাকতে হয়। শরীরের প্রাণশক্তি ফিয়ে পাওয়ায় পুষ্টিকর সম্পূরক সহায়ক হয় এবং স্বাধীনভাবে সুস্থ জীবনযাপনে সাহায্য করে।
গর্ভবতী মহিলা এবং যেসব মায়েরা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন: গর্ভবতী মহিলাদের এবং যারা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন তাদের নিজেদের এবং শিশুর জন্য বাড়তি পুষ্টির প্রয়োজন হয়। এই সময় পুষ্টিবর্ধক সম্পূরক সেবন করা একান্ত জরুরি কারণ এই সময় শরীরের ক্যালসিয়াম, ভিটামিন, আয়রন এবং অন্যান্য পুষ্টির প্রয়োজন বেড়ে যায়।
মোস্তফা কামাল, শিক্ষক ও ভেষজবিদ।