স্বপ্নের টাকা জাদুঘর তৈরি করার প্রথম দিকে এই টাকা জাদুঘর তৈরি করতে অনেক বাধার মুখে ড. আতিউর রহমান পরতে হয়েছিল। কিন্তু শত্রু পক্ষের জানা ছিল না, ড. আতিউর রহমান একজন সৃষ্টিশীল মানুষ। তিনি যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। অনেক যুদ্ধ করে শেষ পর্যন্ত স্বপ্নের টাকা জাদুঘর আলোর মুখ দেখল। ২০১৩ সালের ৫ই অক্টোবর স্বপ্নের টাকা জাদুঘর আলোর মুখ দেখল। এই টাকা জাদুঘর উদ্ভোধন করতে এলেন জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পীকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ড. আতিউর রহমান সহ বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মানিত সকল কর্মকর্তা, প্রিন্ট ও ইলোকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক মুদ্রা সংগ্রাহক, মুদ্রা গবেষকরা সেদিন উপস্থিত ছিলেন। টাকা জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার একমাস আগেই থেকেই বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণীর মুদ্রা সংগ্রাহকদের কাছে আমাকে ছুটে যেতে হয়েছিল যেন, তারা তাদের সংগ্রহের একটি অংশ টাকা জাদুঘরে উপহার দেন। আমি সৌভাগ্যবান যে, দেশ সেরা মুদ্রা সংগ্রাহক জনাব মোহাম্মদ হোসানই চৌধুরী আমার আহবানে টাকা জাদুঘরে কয়েক লক্ষ টাকার দুর্লভ মুদ্রা উপহার দিয়েছেন। এছাড়া আমার আহবানে সাড়া দিয়ে দেশ সেরা মুদ্রা সংগ্রাহক, রবিউল ইসলাম, সাঈদ বিন সালাম তুহিন, মাহাবুব হাসান, এডওয়ার্ড তরুন রায়, মোঃ ফরিদুল ইসলাম, রায়হান আহমেদ, আহসান জুয়েল জলস বয়, শেখ আবু জাফর জুয়েল, এস.এম রফিকুল ইসলাম, মফিজুল ইসলাম বাবু, জিয়া ইবনে শাহজাহান, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ফারহানা কবির ইমা, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আম্পায়ার শারফৌদ দৌলা সৈকত, ইউসুফ রহমান খান আকিব, মোঃ মোস্তফা খান, আলী রেজা করিম মার্শাল, সুজয় সেন গুপ্ত, ইসতিয়াক আহমেদ চৌধুরী, কামরুজ্জামান কায়সার, আশরাফ সিদ্দিক রানা, সত্যজিত ঘোষ, আনিস চৌধুরী সহ আরও অনেক মুদ্রা সংগ্রাহক টাকা জাদুঘরে মুদ্রা উপহার দিয়েছেন। টাকা জাদুঘরে আজ যে মুদ্রা প্রদর্শিত হচ্ছে তার ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মুদ্রা উপহার দাতাদের দেয়া। পৃথিবীর সকল কারেন্সি মিউজিয়াম মুলত উপহার দাতাদের উপর অনেকটা নির্ভরশীল। বাংলাদেশ ব্যাংক বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ও বাংলাদেশ থেকে কয়েকজন মুদ্রা বিক্রেতার কাছ থেকে কোটি কোটি টাকার মূল্যবান মুদ্রা ক্রয় করেছে। যার ফলে টাকা জাদুঘর একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ মুদ্রা জাদুঘরের সম্মান পেয়েছে। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া যেখানে যাবেন না কেন আপনি সেখানেই টাকা জাদুঘরের সুনাম শুনতে পাবেন। যারাই একবার টাকা জাদুঘর পরিদর্শন করেছেন, তারাই টাকা জাদুঘরকে ভালবেসে ফেলেছেন। এই টাকা জাদুঘরে ২৫০০ হাজার বছর আগের তৈরি পাঞ্চ মার্ক যেমন প্রদর্শিত হচ্ছে তেমনি বেঙ্গল সুলতান, দিল্লীর সুলতান, ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সহ প্রাচীন যুগের সকল শাসকদের উল্লেখযোগ্য পরিমান দুর্লভ, স্বর্ণ মুদ্রা, রৌপ্য মুদ্রা সহ সব ধরনের ধাতব মুদ্রা প্রদর্শিত হচ্ছে। এছাড়া পৃথিবীর প্রায় সকল দেশের ব্যাংক নোট ও ধাতব মুদ্রা টাকা জাদুঘরে প্রদর্শন করা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই টাকা জাদুঘর দ্বিতীয় তলায় নতুন করে মুদ্রা প্রদর্শন শুরু হবে। সেখানে দুর্লভ ধাতব মুদ্রা, ব্যাংক নোট ছাড়াও টাকা তৈরির ইতিহাস জানা যাবে। সেখানে থাকবে চিলড্রেন কর্ণার, সেমিনার কক্ষ সহ এমন সব আয়োজন যা একটি প্রথম শ্রেনীর মুদ্রা জাদুঘরে থাকে। টাকা জাদুঘরের ঠিকানা হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমীর দ্বিতীয় তলায়, মিরপুর-২, ঢাকা। বৃহস্পতিবার বন্ধের দিন ব্যতীত শনিবার থেকে বুধবার সকাল ১১:০০ টা থেকে বিকাল ৫:০০ টা পর্যন্ত টাকা জাদুঘর খোলা থাকে। শুক্রবার বিকাল ৪:০০ টা থেকে সন্ধ্যা ৭:০০ টা পর্যন্ত টাকা জাদুঘর খোলা রাখা হয়। টাকা জাদুঘরে একটি সেলস সেন্টার রয়েছে সেখান থেকে আপনি বাংলাদেশের নমুনা নোট, স্মারক নোট, স্মারক ধাতব মুদ্রা ও মুদ্রা সংক্রান্ত বই সংগ্রহ করতে পারবেন। টাকা জাদুঘরের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মানিত গভর্ণর জনাব ফজলে কবির। ডিপার্টমেন্ট অব কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট টাকা জাদুঘরের সমৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। টাকা জাদুঘরের উপ মহাব্যবস্থাপক রাজেন্দ্র লাল তালুকদার টাকা জাদুঘরের দায়িত্ব প্রাপ্তির পর দর্শনার্থীর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। টাকা জাদুঘরের কিউরেটর ড. আছিয়া খানম লিখন, সারা টাকা জাদুঘরকে আন্তর্জাতিক মানের জাদুঘরের মত সাজিয়েছেন। তাকে সহযোগিতা করেছেন টাকা জাদুঘরের কয়েকজন চৌকস কর্মী। একজন দক্ষ গাইড আপনাকে টাকা জাদুঘরের সকল মুদ্রার সাথে পরিচয় করে দিবেন। এই লেখায় টাকা জাদুঘরের সকল কর্মকর্তাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা। টাকা জাদুঘরের নিচ তলায় একটি ফাস্ট ফুডের দোকান রয়েছে, যার নাম কয়েন ক্যাফে, এখানে আপনি অতি স্বল্প মূল্যে ফাস্ট ফুড, কোমল পানীয়, কফি ও অন্যান্য খাবার পাবেন। টাকা জাদুঘরে প্রবেশ করতে কোন প্রবেশ ফি দিতে হয় না। টাকা জাদুঘর পরিদর্শন করে মুদ্রা তৈরির ইতিহাসের সাথে পরিচিত হন। প্রতি মাসে ২ থেকে ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টাকা জাদুঘর পরিদর্শন করছেন। তাদেরকে দেশ-বিদেশের ধাতব মুদ্রা ও ব্যাংক নোট উপহার দেয়া হয়। এই লেখাটি টাকা জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ড. আতিউর রহমানকে উৎসর্গ করলাম।
লেখক: সৈয়দ রশিদ আলম-মুদ্রা গবেষক, সাধারণ সম্পাদক, টাকা জাদুঘর ডোনার ক্লাব।