করোনা মহামারি পরবর্তী পৃথিবীতে টিকে থাকতে হলে অন্তত আগামী কয়েক বছর ঘরে-বাইরে ব্যয় সংকোচন করতেই হবে। অনেক সংস্থাই ইতিমধ্যে ছাঁটাইয়ের প্রক্রিয়া চালু করে দিয়েছে। অনেকে বেতন দিচ্ছেন ২০-৫০ শতাংশ কেটে। আগামী দিনে বেশ কিছু ছোট ব্যবসা যে মুখ থুবড়ে পড়বে, অনেক বড়ো প্রতিষ্ঠান কর্মী সংখ্যা কমিয়ে আনবে। ঘোরতর আর্থিক মন্দার হাত এড়িয়ে কেউই আর বাঁচতে পারবেন না। কাজেই বিপদ বেড়ে যাওয়ার আগেই খরচের হাত কমান।
কীভাবে কমাবেন
● যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকু খরচ করুন। আপাতত সমস্যা নেই বলে শৌখিন জিনিস কিনে পয়সার অপচয় করবেন না, কাল কেমন দিন আসছে কে বলতে পারে!
● গত কয়েকমাসে ঘরোয়া খাবার খাওয়ার যে অভ্যাস গড়ে উঠেছে, তা বজায় রাখুন। তাতে স্বাস্থ্য যেমন ভালো থাকবে, খরচও কমবে। এমনিও এখন বাইরে খাওয়া ঠিক নয়। কে কীভাবে বানাচ্ছে, কীভাবে পরিবেশন করছে, তা তো জানা নেই। সেখান থেকেও ঘরে আসতে পারে কোভিড।
● বাড়ি থেকে টিফিন নিয়ে যান। অফিস ক্যান্টিনে খাওয়া নিরাপদ নাও হতে পারে। খরচের ব্যাপারও আছে।
● জামা-কাপড় যতটুকু না কিনলেই নয়, ততটুকুই কিনুন।
● রূপচর্চার পিছনে বেশি খরচ করার দরকার নেই। চুল কাটাতে ২-৩ মাসে একবার যেতে পারেন পার্লারে। তার বেশি না যাওয়াই ভালো।
● কমিয়ে দিন উপহারের বাজেটে। উৎসবে-অনুষ্ঠানে উপহার দেওয়া-নেওয়ার বদলে যে মানুষরা খেতে পাচ্ছেন না বা যাঁদের মাথায় ছাদ নেই, তাঁদের জন্য কিছু করুন। এতে মনও ভালো থাকবে।
● বেড়াতে যাওয়ার যেকোনো প্ল্যান আপাতত বাদ রাখুন। পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য কিছু টাকা জমানোর চেষ্টা করুন।
টাকা জমান
● রোজগারের ৫-১০ শতাংশ ব্যাংক বা অন্য কোনো নিরাপদ স্থানে টাকা জমান। আর এটা জমা করুন যেদিন মাইনে পাবেন সেদিনই।
● মাইনে পাওয়ার পর বাড়ি ভাড়া, ইলেকট্রিক বিল, স্কুলের মাইনে ইত্যাদি মিটিয়ে দিন প্রথমেই।
● মাসের সব খরচ আলাদা করে ফেলার পর যে টাকা রইল তার ১০ শতাংশ সেভিংস অ্যাকাউন্টে জমা রাখুন।
● বাকি টাকা পাঁচ ভাগে ভাগ করুন। প্রতি সপ্তাহে পাঁচ ভাগের এক ভাগ আপনার খরচের বরাদ্দ। বাজেট এমনভাবে করুন, যাতে খরচ কুলিয়ে যায়।
● সপ্তাহ শেষে বাজেটের সঙ্গে খরচের হিসেব মেলান। দেখুন কোথায় কম-বেশি হয়েছে। বেশি খরচ করে ফেললে ভেবে দেখুন সেটা এড়ানো যেত কিনা।
● কম খরচ করলে উদ্বৃত্ত টাকায় একদিন একটু ভালো-মন্দ খান কি কোনো একটা শখ পূরণ করুন।
এ ভাবে চললে মাসের শেষে কিছু টাকা বাঁচার কথা। সেই টাকা রেখে দিন আপৎকালীন খরচের জন্য।
এত মেপে চলতে পারবেন কিনা ভেবে দুশ্চিন্তা হতে পারে অনেকের। বিশেষ করে যাঁরা
কখনও এত হিসেব করে চলেননি। তাঁদের জন্য রইল কয়েকটি টিপস।
বাজেট মেনে চলার টিপস
● সপ্তাহে একদিন বা দুদিন বাজারে যান। জিনিস কিনুন হিসেব করে, ফর্দ মিলিয়ে। মন প্রস্তুত করে রাখুন যে, অহেতুক কিছু কিনবেন না। এর পর নিতান্ত প্রয়োজন না হলে আর বাজারমুখো হবেন না। করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতেও কাজে দেবে এই পদ্ধতি।
● বিজ্ঞাপন দেখে বা সস্তায় পাচ্ছেন বলে কিছু কিনে ফেলবেন না।
● নিজেকে সামলাতে পারবেন না মনে হলে অনলাইনে শপিং সাইটে ঢোকা বন্ধ করে দিন।
● প্রয়োজনীয় জিনিস কিনুন বছরে একবার কি দুবার, স্টক ক্লিয়ারেন্স সেল থেকে।
● উপহার দেওয়ার মতো জিনিসও এ সময় কিনে রাখতে পারেন।
● ইলেকট্রিক বিল, টেলিফোন বিল ও গ্যাসের বিল যাতে কম থাকে, সে চেষ্টা করুন।
● যে ঘরে থাকবেন না, সে ঘরের আলো, পাখা বন্ধ করে রাখুন। সারাদিন কম্পিউটার অন করে রাখবেন না।
● ওয়াশিং মেশিন চালান সপ্তাহে একদিন কি দু-দিন।
● মোবাইলে যে প্ল্যান নিলে সবচেয়ে খরচ কম হবে, সেই প্ল্যান নিন।
● যারা সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করেন গ্যাসের খরচ কমাতে বেশির ভাগ রান্না করুন প্রেশার কুকারে।
● গ্যাস জ্বালিয়ে সবজি কাটতে বসবেন না। রান্নার সব সরঞ্জাম তৈরি করে তবে গ্যাস জ্বালান।
● ডেবিট, ক্রেডিট কার্ড রাখুন এমারজেন্সি দরকারের জন্য।
● দরকার না হলে ট্যাক্সি বা ক্যাব চড়বেন না। সকালে-বিকেলে তেমন তাড়া না থাকলে আশপাশের কাজগুলি পায়ে হেঁটে সেরে ফেলুন। ● ফিচার ডেস্ক