বিবর্তন ডেস্ক রিপোর্ট ● বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে রোজার সময় মসজিদে তারাবির নামাজেও সাধারণ মানুষের অংশ গ্রহণে বিধিনিষেধ দেয়া হচ্ছে। মসজিদে তারাবির নামাজে দু’জন কোরানে হাফেজসহ ১২জনের বেশি অংশ নিতে পারবেন না।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো: আব্দুল্লাহ জানিয়েছেন, মসজিদে তারাবির নামাজে দু’জন কোরানে হাফেজসহ ১২জনের বেশি অংশ নিতে পারবেন না।
কওমী মাদ্রাসাগুলোর একটি বোর্ড এবং একটি সংগঠন হেফাজতে ইসলাম স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ ১৪টি শর্তে মসজিদে তারাবির নামাজ সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার দাবি জানিয়েছিল। সরকার তা নাকচ করেছে।
দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত এবং জুমার নামাজে সাধারণ মুসল্লীদের অংশগ্রহণের ওপর বিধিনিষেধ রয়েছে।
করোনাভাইরাস দুর্যোগ সামলাতে দেশে এখন মসজিদে কোন জামাতে পাঁচজনের বেশি অংশ নিতে পারছেন না। আর জুমার নামাজে অংশ নিতে পারছেন সর্বোচ্চ ১০জন।
এই অংশগ্রহণকারিরাও মসজিদের ইমাম, খতিব, মুয়াজ্জিন বা খাদেম। বাইরের কারও মসজিদে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ চলছে।
রোজার সময় মসজিদে তারাবির নামাজ সবার জন্য উন্মুক্ত করার দাবি তুলেছিল একটি মাদ্রাসা বোর্ডের কয়েকজন নেতা এবং হেফাজতে ইসলাম।
তবে তা নাকচ করে দিয়ে সরকারের পক্ষে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেছেন, ‘‘মসজিদে তারাবির নামাজে ১২জনের বেশি অংশ নিতে পারবেন না, এখন পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মসজিদ যেভাবে চালু আছে, সেভাবেই চালু থাকবে। যে নিয়মে এশার নামাজে পাঁচজন লোক হওয়ার কথা, সেখানে এখন রমজান মাসে তারাবির জন্য সেই সংখ্যা ১২জনে উন্নীত করা হয়েছে। সেটা হলো ১০জন মুসল্লী আর দুই জন হাফেজ। যে হাফেজরা খতম তারাবি পড়াবেন। বাইরের কোন লোক ঢুকতে পারবে না। এটা আমাদের সরকারের সিদ্ধান্ত।”
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেছেন, “মসজিদের মুসল্লীরা মৃত্যুর ঝুঁকির মধ্যে পড়ুক, সরকার প্রধান কোনভাবেই সেই দায়িত্ব নিতে পারবেন না। দেশে এখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিদিনই বাড়ছে। এখন এই খারাপ পরিস্থিতিতে মসজিদে জনসমাগম ঝুঁকিপূর্ণ সেই বিষয়কেই গুরুত্ব দিয়ে শরীয়ত অনুযায়ীই সরকার অবস্থান নিয়েছে।
করোনাভাইরাসের মহামারিতে অনেক আগে যখন মক্কা মদিনাসহ মুসলিম দেশগুলোতে মসজিদে জামাতে নামাজ বন্ধ করে দেয়া হয়, তখনও বাংলাদেশে মসজিদে মুসল্লিদের অংশগ্রহণ বন্ধ করা যায়নি। ইসলামপন্থী বিভিন্ন সংগঠনের তাতে আপত্তি ছিল।
শেষ পর্যন্ত গত ৬ই এপ্রিল দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমণ বাড়তে থাকলে মসজিদে নামাজে সাধারণ মুসল্লিদের জন্য বিধিনিষেধ দেয়া হলে হেফাজতে ইসলাম তাতে সমর্থন জানিয়েছিল। এই সংগঠনটিরই পক্ষ থেকেই এখন সরকারের কাছে তারাবির নামাজ সবার জন্য উন্মুক্ত করার দাবি জানানো হযয়েছিল।
হেফাজতে ইসলামের নেতাদের সাথে সরকার কয়েকদফা আলোচনা করেছে।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেছেন, ‘‘সংগঠনটির দাবি বাস্তবসম্মত নয় বলে সরকার মনে করছে। ওনাদের আমরা বলেছিলাম, আপনারা আপনাদের দেয়া প্রস্তাবের ভিত্তিতে একটা মসজিদ চালু করার দায়িত্ব নেন। তারা সেই দায়িত্ব নেবেন না। সরকারকেই সেই দায়িত্ব নিতে হবে। তারা প্রত্যেক মসজিদে পাঁচজন করে পুলিশ দিয়ে নামাজের কাতারে সাধারণ মুসল্লীদের দূরত্ব এবং স্বাস্থ্য বিধিগুলো নিশ্চিত করতে বলছে। কিন্তু দেশে প্রায় চার লাখ মসজিদ আছে। শুধু তারাবির নামাজের জন্যই ২৫ লাখ পুলিশ দিতে হবে। এগুলো কী বাস্তবসম্মত কথা হতে পারে?”
তবে তারাবির নামাজ নিয়ে এখনকার অবস্থান সম্পর্কে হেফাজতের একজন কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি নুরুল আমিন বলেন, “আমরা বলেছিলাম ১৪টা শর্তসাপেক্ষে। সেখানে বলা হয়েছে, সুস্থ ব্যক্তি মসজিদে আসবে। তারা দূরত্ব বজায় রাখবে। এই দূরত্বের ব্যাপারে মসজিদে দাগ দিয়ে দেয়া হবে। এমন ১৪টা শর্ত মেনে যাতে মুসল্লীরা মসজিদে যেতে পারে। আমরা সেই আবেদন করেছিলাম।”
লেখক এবং বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব মো. ওসমান গণি বলেছেন, “তারাবির নামাজ এটি সুন্নত। যেহেতু মসজিদে ফরজ নামাজের ক্ষেত্রে আমরা এখন একটা নিয়ম অনুসরণ করছি মানুষের স্বার্থে। সুতরাং তারাবির নামাজ একটি সুন্নত ইবাদত। এটা জন্য জোর করে বাড়তি কিছু করা বা মসজিদে সাধারণ মুসল্লীদের আনা, এটা আসলে প্রজ্ঞাপ্রসূত নয়। এবং বিজ্ঞ আলেমরা কিন্তু এটা সেভাবে বলবেন না।”
তিনি আরও বলেছেন, “হয়তো কিছু মানুষ আবেগ থেকে মসজিদে তারাবির নামাজ সবার জন্য উন্মুক্ত করার কথা বলছেন। কিন্তু এখনকার দুর্যোগ অবস্থায় জোর করে বেশি মানুষ একত্রিত হওয়াটা আমাদের সামাজিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি।”
বিশ্লেষকদের অনেকে আবার বলেছেন, এখন দুর্যোগের মধ্যেই কেউ কেউ ধর্ম নিয়ে মানুষের আবেগকে ব্যবহারের চেষ্টা করছেন।