• প্রচ্ছদ
  • সারাদেশ
    • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • শিক্ষা
    • পড়াশোনা
    • পরীক্ষা প্রস্তুতি
  • সাহিত্য পাতা
    • গল্প
    • ইতিহাসের পাতা
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা ও ছড়া
  • খেলাধুলা
    • ক্রিকেট
    • ফুটবল
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
    • আউটসোর্স
  • জীবনযাপন
    • ঘর ও গৃহস্থলী
    • স্বাস্থ্য
    • বিনোদন
    • ভ্রমণ
    • রেসিপি
    • ধর্ম-দর্শন
    • ফিচার
  • অন্যান্য
    • বিশ্ব রাজনীতি
    • কলাম
    • কৃষি
    • মতামত
    • বড়দিনের বিশেষ লেখা
No Result
View All Result
শনিবার, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২১
  • প্রচ্ছদ
  • সারাদেশ
    • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • শিক্ষা
    • পড়াশোনা
    • পরীক্ষা প্রস্তুতি
  • সাহিত্য পাতা
    • গল্প
    • ইতিহাসের পাতা
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা ও ছড়া
  • খেলাধুলা
    • ক্রিকেট
    • ফুটবল
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
    • আউটসোর্স
  • জীবনযাপন
    • ঘর ও গৃহস্থলী
    • স্বাস্থ্য
    • বিনোদন
    • ভ্রমণ
    • রেসিপি
    • ধর্ম-দর্শন
    • ফিচার
  • অন্যান্য
    • বিশ্ব রাজনীতি
    • কলাম
    • কৃষি
    • মতামত
    • বড়দিনের বিশেষ লেখা
Somoyer Bibortan
No Result
View All Result

সাঁওতালী ভাষা বেঁচে থাকুক—বর্ণমালা কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়! — মিথুশিলাক মুরমু

Admin by Admin
ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২১
in কলাম, প্রচ্ছদ
0 0
0
সাঁওতালী ভাষা বেঁচে থাকুক—বর্ণমালা কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়! — মিথুশিলাক মুরমু
0
SHARES
26
VIEWS
Share on FacebookShare on Twitter

বীরত্বের গাঁথা ভাষা আন্দোলনে অদিবাসীদের অবদান যে ছিল না, সেটি হলফ করে বলা যাবে না। ভাষা আন্দোলনের পরবর্তীকালে অনুষ্ঠিত পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট থেকে আদিবাসী সাঁওতাল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শ্রী সাগরাম মাজহী (হাঁসদা) রাজশাহী ১৩ এবং শ্রী জীবন মুরমু (সাঁওতাল) সিলেট ৯ (২৭২) থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ দুজন সাঁওতাল ব্যক্তিত্ব সমকালীন রাজনীতিতে খুবই সচেতন এবং সক্রিয় ছিলেন। শ্রী জীবন মুরমু ছিলেন বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে অবস্থিত বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা। শ্রী জীবন মুরমু এবং স্থানীয় কংগ্রেস নেতা পূর্ণেদু কিশোর সেনগুপ্তের উদ্যোগে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে শ্রমিক ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অপরদিকে শ্রী সাগরাম মাজহী ঐতিহাসিক নাচোল বিদ্রোহের রানী মা খ্যাত ইলা মিত্রের সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আদিবাসীদের অধিকারভিত্তিক আন্দোলনকে জাতীয় পর্যায়ে উন্নীত করেছিলেন। জাতীয় নেতাদের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক ও সখ্যতা ছিল মধুর। একাধিক আদিবাসী ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপে উঠে এসেছে, এ আদিবাসী সাঁওতাল নেতাদের জাতীয় ইস্যুতে সম্পৃক্ততার সত্যতা ও অবদান। তারা মনে করেন, আদিবাসীসহ বিভিন্ন ভাষাভাষী রাজনীতিবিদদের (বীরেন্দ্র কিশোর ত্রিপুরা, কামিনী মোহন দেওয়ান) জন্যই ’৫২ ভাষা আন্দোলনের পরবর্তীকালে সব ভাষার সমান মর্যাদার প্রশ্নে দাবি তুলেছিলেন সংস্কৃতি কর্মীরা। সে সময়ের এক প্রবন্ধে লেখা হয়েছিল, ‘বহু ভাষাভাষী জনগণের অর্থাৎ বহু জাতির মিলনক্ষেত্র পাকিস্তানের ভাষা সমস্যার গণতন্ত্রসম্মত সমাধানের জন্য আমাদের আন্দোলনের মূলনীতি হবে ছোটো-বড়ো প্রত্যেকটি ভাষাকে সমান মর্যাদা ও সমান অধিকার দেয়া।’ বিভিন্ন ভাষাভাষী সাধারণ জনগণ যাতে রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশগ্রহণ করতে পারে ও শিক্ষার পূর্ণ সুযোগ পায়, তার জন্য সংস্কৃতি কর্মীরা কতগুলো দাবি উত্থাপন করেন—ক. কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রের সব আইন, ঘোষণা, দলিল প্রভৃতি বাংলা, উর্দু, সিন্ধি, পাঞ্জাবি, পশুতু ও বেলুচি ভাষায় প্রকাশ করতে হবে। গুজরাটি ভাষাভাষী জনসংখ্যা যথেষ্টসংখ্যক হলে সে ভাষাও প্রকাশ করতে হবে। মূলনীতি হবে, পাকিস্তানের জনগণের প্রধান ভাষাতে কেন্দ্রীয় সরকারের সব দলিলাদি প্রকাশ করতে হবে। খ. কেন্দ্রীয় আইনসভায় প্রত্যেক সভ্য নিজ নিজ মাতৃভাষায় নিজের বক্তব্য বলতে পারবেন ও দোভাষীরা সেগুলো বিভিন্ন ভাষায় তরজমা করে দেবেন। জাতিসংঘে ও বিভিন্ন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এ ব্যবস্থা সাফল্যের সঙ্গে চলছে। গ. প্রত্যেক ভাষাভাষী জনগণের নিজ নিজ বাসভূমির (অর্থাৎ বিভিন্ন প্রদেশের) রাষ্ট্রকার্য আইন-আদালতের কার্য সে প্রদেশের ভাষায় চলবে। বিভিন্ন প্রদেশে অবস্থিত অন্য ভাষাভাষী (যেমন—পূর্ববঙ্গে উর্দু ভাষীরা বা পাঞ্জাবের বাঙালিরা) সেসব প্রদেশের আইন আদালতে নিজ নিজ মাতৃভাষায় নিজ বক্তব্য বলতে পারবেন। ঘ. বিভিন্ন উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে সেসব উপজাতির ভাষায় আইন আদালতের কাজ চলবে। ঙ. ছোটো-বড়ো প্রত্যেক ভাষাভাষী জনসমষ্টি ও বিভিন্ন প্রদেশের সংখ্যাল্পরাও নিজ নিজ মাতৃভাষায় শিক্ষালাভ করার অধিকার ভোগ করবে।’ যুক্তফ্রন্ট কর্তৃক ঘোষিত ঐতিহাসিক ২১ দফাতেও মাতৃভাষার বিষয়টি লক্ষণীয়। ২১ সংখ্যাটিকে চিরস্মরণীয় করার লক্ষ্যে নির্বাচনী কর্মসূচিকে একুশ দফার কার্যসূচি হিসেবে ঘোষণা করে। ১ নম্বর ধারাতে ছিল—‘বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা হইবে’ এবং ১০ ধারাতে সংযুক্তি ছিল, ‘শিক্ষাব্যবস্থার আমুল সংস্কার করিয়া শিক্ষাকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে কার্যকর করিয়া কেবলমাত্র মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হইবে এবং সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোর বর্তমান ভেদাভেদ উঠাইয়া দিয়া একই পর্যায়ভুক্ত করিয়া সব বিদ্যালয়কে সরকারি সাহায্যপুষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হইবে এবং শিক্ষকদের উপযুক্ত বেতন ও ভাতার ব্যবস্থা করা হইবে।’ পরবর্তীকালে ছাত্রদের ১১ দফাতেও মাতৃভাষার বিষয়টি স্থান পায়। মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও আকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছিলেন। এ ১১ দফা পাকিস্তানের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা, ছাত্র-জনতা, কৃষক-মজুর, মেহনতি শিক্ষক, ডাক্তার-কবিরাজ, রিকশাওয়ালা-ডোম-মেথর, মাঝি-কুলি, দেশের সব শ্রেণি, সব স্তরের মানুষ এক বাক্যে অন্তর দিয়ে ঐতিহাসিক ১১ দফাকে সমর্থন করেছিল। দফার ১.ছ তে বলা হয়, ‘মাতৃভাষার মাধ্যমে সর্বস্তরে শিক্ষার ব্যবস্থা করিতে হইবে।…’ বঙ্গবন্ধু ২৮ অক্টোবর, ১৯৭০ সালে বেতার ও টেলিভিশন ভাষণে বলেছিলেন, ‘…জীবনের সব ক্ষেত্রে বাংলা ও উর্দু যাতে ইংরেজির স্থান দখল করতে পারে—সে ব্যাপারে অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে। আঞ্চলিক ভাষা বিকাশ ও উন্নয়নের ব্যাপারে উৎসাহ সৃষ্টি করতে হবে।’ ১৯৭০ সালে নির্বাচনে জয়লাভের পর ৬ দফাভিত্তিক শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করে তা সর্বসাধারণের জ্ঞাতার্থে ঘোষণা করা হয়। ঘোষণায় ভাষা ও সংস্কৃতি শীর্ষক শিরোনামে বলা হয়, ‘পাকিস্তানের দুটি রাষ্ট্রভাষা বাংলা ও উর্দু যাতে জীবনের সব ক্ষেত্রে ইংরেজির স্থলাভিত্তিক হতে পারে তার জন্য আশু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাকিস্তানের সব এলাকায় ভাষা এবং সাহিত্যের উন্নয়নকে উৎসাহিত করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হবে।’ বদরুদ্দীন উমর লিখেছিলেন—‘১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলন যে সীমিত এলাকায় ঘটেছিল এবং ছাত্র শিক্ষকসহ বুদ্ধিজীবীদের একাংশের মধ্যে যেভাবে সীমাবদ্ধ ছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন সেভাবে সীমাবদ্ধ থাকেনি। দ্বিতীয় পর্যায়ের ভাষা আন্দোলন শুধু ভাষার প্রশ্নে সীমাবদ্ধ না থেকে তা শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-বুদ্ধিজীবী ও মধ্যবিত্তের এক ব্যাপক গণপ্রতিরোধ আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়ে সমগ্র পূর্ব বাংলায় এক অভূতপূর্ব আন্দোলন সৃষ্টি করেছিল।
জাতীয় পর্যায়ে মাতৃভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের দাবি-দাওয়া উত্থিত হতে শুরু করে নব্বইয়ের দশক থেকে; বিশেষত ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দকে জাতিসংঘ কর্তৃক ‘আন্তর্জাতিক আদিবাসী বর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করলে। ভাষা শহীদের দেশ হিসেবে বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতিকর্মী এবং অধিকারকর্মীগণও আদিবাসীদের মাতৃভাষার পড়াশোনার দাবিতে সংহতি প্রকাশ করেছেন। জাতীয় আদিবাসী পরিষদ ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই দাবি করে আসছে—‘…বাংলা ইংরেজির পাশাপাশি আদিবাসীদের মাতৃভাষায় পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষাদানের ব্যবস্থা চালু করতে হবে।’ ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ২ ডিসেম্বর সম্পাদিত পার্বত্য চুক্তিতে পাহাড়ের আদিবাসী শিশুদের বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া রোধে প্রাক্-প্রাথমিক স্তরে নিজ নিজ মাতৃভাষায় শিক্ষা পদ্ধতি চালুর কথা বলা হয়েছে। ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম কর্তৃক ঘোষণাকৃত শিক্ষা শিরোনামে বলা হয়েছে—১. আদিবাসীদের স্ব স্ব মাতৃভাষায় শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা; ২. অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা; ৩. শিক্ষা ক্ষেত্রে জোরদার করা, দক্ষতা বৃদ্ধি বা পেশাগত প্রশিক্ষণে আদিবাসীদের অগ্রাধিকার প্রদান করা। বোধ করি, সেই ধারাবাহিকতার ফলস্বরূপ ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে প্রণীত জাতীয় শিক্ষানীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বলা হয়েছে—২৩. দেশের আদিবাসীসহ সকল ক্ষুদ্রজাতিসত্তার সংস্কৃতি ও ভাষার বিকাশ ঘটানো। খ. প্রাথমিক শিক্ষা উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বলা হয়েছে—প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে আদিবাসীসহ সকল ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জন্য স্ব স্ব মাতৃভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা করা। ‘আদিবাসী শিশু’ শীর্ষক ধারাগুলোতে— ১৮. আদিবাসী শিশুরা যাতে নিজেদের ভাষা শিখতে পারে সেই লক্ষ্যে তাদের জন্য আদিবাসী শিক্ষক ও পাঠ্যপুস্তকের ব্যবস্থা করা হবে। এই কাজে, বিশেষ করে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে, আদিবাসী সমাজকে সম্পৃক্ত করা হবে। ১৯. আদিবাসী প্রান্তিক শিশুদের জন্য বিশেষ সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে। ২০. আদিবাসী অধ্যুষিত (পাহাড় কিংবা সমতল) যেসকল এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই সেসকল এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। যেহেতু কোনো কোনো এলাকায় আদিবাসীদের বসতি হালকা তাই একটি বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের আবাসিক ব্যবস্থার প্রয়োজন হলে সেদিকেও নজর দেওয়া হবে। অতঃপর ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে সরকার আদিবাসীদের মাতৃভাষায় প্রাক্-প্রাথমিক পর্যায়ে পাঠদানের ঘোষণা করলে আদিবাসী সাঁওতালদের মধ্যে বর্ণমালা বির্তক শুরু হয়। আদিবাসী গারো, চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা এবং উরাঁওদের পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন সম্ভবপর হলেও আদিবাসী সাঁওতালদের পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন কিংবা পাঠদানের উদ্যোগটি অংকুরেই বিনষ্ট হতে থাকে। আদিবাসী সাঁওতালরা সাঁওতালী বর্ণমালা (রোমান বর্ণমালাতে কিছু চিহ্ন সংযোজন করে), বাংলা বর্ণমালা, অলচিকি বর্ণমালা বির্তকে ঘুরপাক খেতে খেতে আজ (২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর্যন্ত ফয়সালা করা সম্ভবপর হয়নি।
সর্বশেষ বিগত ৮ই জানুয়ারি, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে ‘সাঁওতাল নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর ভাষায় পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ সম্পর্কীয়’ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় মহান জাতীয় সংসদে ‘প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ৪২তম সভাতে। এখানেও অমীমাংসিতভাবে শেষ হয় আলোচনাটি। শেষান্তে সিদ্ধান্তক্রমে সাঁওতালী বর্ণমালা, বাংলা বর্ণমালা ও অলচিকি বর্ণমালা পক্ষত্রয় থেকে দুইজন করে প্রতিনিধিদের নিয়ে ছোট পরিসরে সিধান্ত গ্রহণের জন্য স্থায়ী কমিটিতে নাম প্রেরণ করা হয়।

RelatedPosts

ভাষা আন্দোলন ও কিছু বাস্তবতা —এডওয়ার্ড রিয়াজ মাহামুদ

‘টিকা’ টিপ্পনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

গলা সংযত মানেই সুন্দর দেশ—ডা. অলোক মজুমদার

ইতিপূর্বে বিগত ৩১ মে, ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাল্টি-পারপাস হল রুমে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান এমপির উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয় ‘সাঁওতাল নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর ভাষায় পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ সম্পর্কীয়’ আলোচনা সভা। সাঁওতালী ভাষার বর্ণমালা বিতর্কের গুরুত্বপূর্ণ সভায় দেশের বিভিন্ন আদিবাসী সাঁওতাল সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আদিবাসী সাঁওতাল ফেলোশিপ ও সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমারও সৌভাগ্য হয়েছিল এই সভায় আমন্ত্রিত হয়ে থাকা এবং আলোচনায় অংশগ্রহণ করার। মন্ত্রী মহোদয় ছাড়াও ফজলে হোসেন বাদশা এমপি এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। প্রাণবন্ত আলোচনার এক পর্যায়ে সাংসদ মহোদয় অত্যন্ত কৌশলীভাবে বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, ‘সাঁওতালী ভাষা বেঁচে থাকুক—বর্ণমালা কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়’। সাংসদ মহোদয়ের কথাটিতে যেন মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে পাকিস্তানের শাসক আইয়ুব খানের বিখ্যাত কথাকেই স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, আমি বাংলার মাটি চাই, মানুষ নয়। মাননীয় সাংসদ ভাষাকে রক্ষা করতে চান এটি সত্যিই প্রশংসনীয় উদ্যোগ কিন্তু তিনি যে কৌশলের কথা ইঙ্গিত করেছেন সেটি ভাষার নিয়ম-কানুনকে তোয়াক্কা করে না। বর্ণমালা ভাষার বাহন এবং প্রতিটি ব্যক্তিই হচ্ছেন ধারক ও বাহক। সাঁওতালী জনগোষ্ঠীর বৃহত্তর অংশের মতামতকে অর্থাৎ ৯০% শতাংশ মানুষের মতামত, পছন্দকে উপেক্ষা করে বাকী ১০% শতাংশের মতামতকে গুরুত্বারোপ আমাদের ভাবিত করে তুলেছে। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করে সাঁওতালদের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তোলা হচ্ছে। মাননীয় সাংসদগণ এবং সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ ভাষাভেদ সৃষ্টি করে সাঁওতালদের মধ্যে বিভেদকে উস্কে দিচ্ছেন, আপনারা সাঁওতালদের অগ্রগণ্য মতামতকে উপেক্ষা করে ভাষাকে বিকৃত করার দিকে ধাবিত করতে পারেন না। এদেশের সাঁওতাল জনগোষ্ঠীই তাদের নিজ মাতৃভাষার বর্ণমালা নির্ধারণ করবেন, এটি কখনোই রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার্য হতে পারে না। আপনি যে বর্ণমালাগুলোর ইঙ্গিত দিয়েছেন, তাতে বর্ণমালা থাকলেও এবং সরকারি কোষাগার থেকে অর্থ খরচ করে পাঠ্যপুস্তক প্রণীত হলেও দুয়েকটি পরিবার ছাড়া কেউই সেটিকে গ্রহণ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং চর্চা করবে না এটি হলফ করেই বলা যায়। ‘বাংলাদেশের নানান ভাষা’ শীর্ষক বইয়ে, প্রয়াত প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান সাঁওতালী জনগোষ্ঠীর ভাষা আলোচনা করতে গিয়ে উল্লেখ করেছেন, ‘বাংলা ও সাঁওতালি ভাষা স্বতন্ত্র ভাষা পরিবারভুক্ত হলেও এই দুটি ভাষার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। সাঁওতালি ভাষা অলচিকি, বাংলা না রোমান লিপিতে লেখা হবে, তা নিয়ে বির্তক আছে। বাংলার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে অনেকে বাংলা লিপিতে সাঁওতালি লেখার পক্ষে। অনেকে আবার মনে করেন, বাংলায় সাঁওতালি ভাষা উচ্চারণের ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। রোমান হরফে দীর্ঘদিন ধরে সাঁওতালি চর্চা হচ্ছে বলে রোমান লিপিই সংগত। প্রয়াত কবি শামসুর রাহমানের উপস্থিতিতে একবার এক সাঁওতালি ভদ্রমহিলা আমাকে বলেছিলেন, বাংলা লিপিতে যখন সাঁওতালি ভাষা লেখা হয়, তখন আমাদের ভাষার মাধুর্য হারিয়ে যায়।’ বইয়ের ভূমিকাতে উল্লেখ করেছেন, ‘৬ মার্চ ২০১৩ সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ জাতীয় সংসদকে জানান যে বাংলা ভাষা ছাড়াও দেশে আরও ৩৭ ভাষাভাষীর নাগরিক আছে। নিবিড় গণনায় এই সংখ্যা কিছু বৃদ্ধি পেতে পারে। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের বদৌলতে দেশের বিভিন্ন ভাষাগোষ্ঠীর মধ্যে স্ব-স্ব ভাষার প্রতি দরদ ও মমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।’ আদিবাসী সাঁওতালরা সত্যিই গর্বিত যে, ভাষা আন্দোলনে তাদের সম্পৃক্ততা ছিল, মহান মুক্তিযুদ্ধেও সম্মুখ রণক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। ভাষা শহীদের দেশে আদিবাসী সাঁওতালরা বসবাস করছে, ভাষা প্রশ্নে আবার তারা যুদ্ধংদেহী। আদিবাসী সাঁওতালদের মাতৃভাষার প্রতি যে দরদ, মমতা ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে চলেছে; সেটির ধারাবাহিকতায় ব্যতয় ঘটলে হিতে বিপরীত ঘটতে পারে।
সাংসদ ও সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনায় তারা বারবার বলার চেষ্টা করেছেন, মহান সাঁওতাল বিদ্রোহের নেতা সিদু-কানুরা যে ভাষায় কথা বলতেন, সে ভাষাকে তারা সংরক্ষণ, লালন-পালন ও প্রচলন করতে আগ্রহী। বিষয়টি চমৎকার হলেও বোঝার ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রমতা রয়েছে। বোধ করি, ১৮৪৫ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে সাঁওতালরা কোনো লিখিত ভাষা, বর্ণমালার সাথে পরিচিত ছিল না। রেভারেন্ড জিরিমিয় ফিলিপস সাঁওতালী গান, ধাঁধা, উপকথা সংগ্রহ করে ১৮৪৫ খ্রিষ্টাব্দে গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এটিই হচ্ছে সাঁওতালী ভাষায় প্রথম পুস্তক, তবে গ্রন্থটির নাম জানা যায়নি। কেউ বলেন গ্রন্থটি বাংলা হরফে; আবার কেউ বলেন রোমান লিপিতে মুদ্রিত হয়েছিল। রোমান অক্ষরে এটি যে প্রণীত হয়েছিল, তার কতকগুলো শক্ত যৌক্তিতা খুঁজে পাওয়া যায়। অতঃপর ১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দে ড. সি আর লেপসাস স্ট্যান্ডার্ড রোমান হরফ তৈরি করেন অর্থাৎ রোমান হরফের সঙ্গে কিছু কিছু চিহ্ন সংযোজন করে সাঁওতালি উচ্চারণের উপযোগী করে তোলেন। তারপর থেকেই প্রকৃতপক্ষে রোমান লিপির সাহায্যে সাঁওতালি লিপি, ভাষার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।
১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দের মহান সাঁওতাল বিদ্রোহের নেতা সিধু মুরমু, কানু মুরমু, চাঁদ মুরমু ও ভাইরো মুরমুর কাছে সাতবার সাতভাবে মারাং বুরু দেখা দিয়েছিলেন। শেষবার চারভাইকে ধর্মপুস্তক দিয়েছিলেন, এটিতে কোনো লেখা ছিল না; পুরোটাই ধবধবে সাদা ছিল। ব্যক্তি আমাদের কাছে মনে হয়েছে, সাঁওতাল নেতাদের অক্ষরজ্ঞান না থাকায় হয়তো সেটিকে আবিষ্কার করতে পারেন নাই। যদি সেদিন কাগজের তথ্যকে, প্রেরিত সংবাদটিকে আহরণ করতে পারতেন; সাঁওতাল বিদ্রোহের ইতিহাস অন্যভাবে রূপায়িত হতে পারত। মারাং বুরু কী সত্যি সত্যিই ধবধবে সাদা কাগজ প্রেরণ করেছিলেন, সাদা মানে তো শান্তি, পবিত্র; তাহলে কেন রক্তপাত হয়েছিল? সাঁওতালি সাহিত্যের ইতিহাস গ্রন্থে পাওয়া যায়, “সাঁওতালদের মধ্যে তাঁরাই শিক্ষার আলো পেয়েছেন, যাঁরা খ্রীষ্টধর্মকে আপন করে নিয়েছিলেন। ফলে ভাষা চর্চাও সীমিত ছিল খ্রীষ্টধর্মাবলম্বী সাঁওতালদের মধ্যে। অবশ্য যৎসামান্য ব্যতিক্রম থাকলেও খ্রীষ্টধর্মাবলম্বী সাঁওতালদের বাইরে যে কয়েক লক্ষ সাঁওতাল ছিলেন, তাঁরা নিরক্ষর হওয়ায় এবং তাঁদের কাছে বেঁচে থাকাটাই জীবনের উদ্দেশ্য হওয়ায় ভাষা চর্চা বা ভাষার বিকাশ সম্পর্কে তাঁদের কোন ধারণাই ছিল না। অসাঁওতাল সম্প্রদায়ের তথাকথিত ভদ্র, শিক্ষিত মানুষ খ্রীশ্চান সাঁওতালদের যৎসামান্য সমীহের চোখে দেখলেও প্রকৃত সাঁওতালদের তাঁরা মানুষ হিসেবে কোনোদিনই গণ্য করেনি। তাই তাঁরা সাঁওতালি ভাষাকে ‘ঠার’ বলে ব্যঙ্গ করতেন। ‘ঠার’ অর্থে জন্তু-জানোয়ার পশুপক্ষীদের ভাষা। দেকো (অসাঁওতাল)দের এই মানসিকতার ছাপ সাঁওতালদের প্রতি আচার-আচরণে, কথাবার্তায় প্রকাশ পেত ফলে সাঁওতালরা হীনম্মন্যতার শিকার হতো। অন্যের সামনে নিজেদের ভাষায় কথা বলতে তারা লজ্জাবোধ করত।’
সাঁওতালি সাহিত্যের ইতিহাস থেকে আরো জানা যায়, ‘সাঁওতালদের মধ্যে বিতর্কের ঝড় উঠে। এরই মাঝে অলচিকির সমর্থনে আন্দোলনের জোয়ার প্রবল থাকায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই লিপিকে সাঁওতালি ভাষার উপযোগী মনে করে ১৯৭৯ সালের জুন মাসের দুই তারিখে নীতিগতভাবে স্বীকৃতি দেন। বির্তকের ঝড় কিন্তু থেমে থাকেনি। সাঁওতাল লেখক, বুদ্ধিজীবী মহলে নানান প্রশ্ন দেখা দেয়। অনেকের মতে, কোনোরকম আলাপ আলোচনা ছাড়াই, সমীক্ষা ছাড়াই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে চরিতার্থ করার জন্য পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনে থাকা বামফ্রন্ট সরকার অলচিকিকে নীতিগতভাবে স্বীকৃতি দেন। এই নীতিগত শব্দ নিয়েও সংশয় দেখা দেয়। নীতিগত কেন? সরাসরি সরকারি স্বীকৃতি নয় কেন? আসলে, সরাসরি সরকারি স্বীকৃতিদানে সাংবিধানিক আইনকে মেনে চলার ব্যাপার থাকে। এই স্বীকৃতি দানে সেই আইনকে মানা হয়নি। সরকারিভাবে স্বীকৃতিদানের জন্য প্রথমেই বিধানসভায় বিল পাশের প্রয়োজন। বিল নিয়ে সরকার ও বিপক্ষের মধ্যে কোনো আলোচনার সুযোগও তৈরি করা হয়নি। বিল পেশ ও পাশ ব্যতিরেকেই সাঁওতালি ভাষার জন্য একটি লিপিকে (অলচিকি) স্বীকৃতি দেওয়া হলে বলে প্রচার করা হলো। নীতিগত শব্দের ছাপ দিয়ে সেই স্বীকৃতিকে সরকারি বলে চালানো হলো। কেন?”
ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘বাংলাদেশে আর্যভাষা আগমনের পূর্বে এ দেশের লোকেরা কোল বা অস্ট্রিক জাতীয় ভাষা এবং কতকটা দ্রাবিড় ভাষা ব্যবহার করত।’ এই ভাষার ধ্বনি বিন্যাস, ব্যাকরণ অত্যন্ত সমৃদ্ধ। ভারতবর্ষের চর্যাপদে, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যে, মনসামঙ্গল ও চন্ডীমঙ্গল কাব্যে সাঁওতালী শব্দের প্রচুর ব্যবহার রয়েছে। ভাষাবিদ তথা গবেষক ড. সুহৃদকুমার ভৌমিক প্রমুখ তাঁদের গবেষণালব্ধ দৃষ্টিতে একথা প্রমাণ করেছেন রবীন্দ্র সাহিত্য এমনকি সংস্কৃত সাহিত্য বহুভাবে সাঁওতালী ভাষার কাছে ঋণী। ভৌগোলিক কারণে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করলেও ভাষার মাধ্যমেই সুপ্রাচীন সাঁওতাল জাতি এক ও ঐক্যবদ্ধ থেকেছে। ভাষাবিজ্ঞানীদের গবেষণা থেকে জানা যায়, ‘সাওতালী তথা কোল ভাষা প্রাচীন গ্রিক, আবেস্তা, সংস্কৃত প্রভৃতি ভাষারই সমকক্ষ। বাংলা ব্যাকরণে যেগুলি দেশি শব্দ বলা হয়েছে, সেগুলি আসলে কোল বা সাঁওতালী শব্দ। এই কোলগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি থেকেই আসলে আর্য সভ্যতা সংস্কৃতি সমৃদ্ধ হয়েছে। বাংলা ভাষায় শতকরা পঁয়তাল্লিশটি এবং সংস্কৃত ভাষায় শতকরা চল্লিশটি শব্দই সাঁওতালী বা কোল ভাষা থেকে গৃহীত হয়েছে। ১ ‘এছাড়া বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত বহু ধনাত্মক শব্দ কোল বা সাঁওতালী ভাষা থেকে গৃহীত হয়েছে। এক থেকে কুড়ি অবধি গণনা করার ধারাটিও সাঁওতালী ভাষা থেকে এসেছে। আসলে সাঁওতালী ভাষা বৈদিক ভাষা থেকে শুরু করে আধুনিক আর্য ভাষাগুলিকে প্রচুর শব্দরাশি ঢেলে দিয়ে সমৃদ্ধ করেছে। তবে হতাশার কথা, বেদনার কথা হলো, যে আধুনিক ভাষাগুলিকে সমৃদ্ধ করেছে, তাকে টিকিয়ে রাখবার জন্য কারো কোনো উৎসাহ নেই। ভাষাতাত্ত্বিক ড. সুনীতি চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য—‘আগামী দেড়শত বৎসরের মধ্যে সাঁওতালী ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। যদি না তাঁরা তাদের নিজ ভাষার চর্চা করে।’
ইউনেস্কোর ভাষা শুভেচ্ছা দূত ও আইসল্যান্ডের ভূতপূর্ব প্রেসিডেন্ট ভিগদিস ফিনবোগাদুতির বলেন, ‘একটি ভাষা হারিয়ে গেলে প্রত্যেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ এর ফলে একটি জাতি ও একটি সংস্কৃতি হারায় তাদের স্মৃতি; আর তেমনি হারায় সেই জটিল অলঙ্করণ, যা দিয়ে সুশোভিত এই বিশ্ব এবং যা বিশ্বকে পরিণত করে এক চমকপ্রদ স্থানে।’ সাম্প্রতিককালে ভাষাবিদ অধ্যাপক ড. ক্ষুদিরাম দাস অভিধানের কাজ করতে গিয়ে দেখিয়েছেন বাংলা শব্দভাণ্ডারের অধিকাংশই সাঁওতাল গোষ্ঠীর। যেগুলি সংস্কৃতজাত সেগুলিরও উৎস বহু পূর্বে কোল গোষ্ঠীরই ছিল। রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে সুনীতিকুমার চট্টপাধ্যায়ের মতো বিখ্যাত পণ্ডিতদের সকলেই পূর্বোক্ত অভিমতের সমর্থক। বাংলায় যে ‘কৃ’ ধাতু দিয়ে ক্রিয়া গঠনের প্রবণতা লক্ষিত হয়, এর পেছনেও রয়েছে কোল বা সাঁওতালী ভাষার প্রভাব। সাঁওতালীতে মোটামুটি যেকোনো শব্দকেই ক্রিয়া হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এই জন্য রেভা. ম্যাকফাইল বলেছেন— ‘In Santali any word may be used as a verb simply by adding at the end of it the letter a which is the verbal sing’.2 বাংলা ভাষায় বাক্যগঠন ও ভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে সাঁওতালী প্রভাবও লক্ষণীয়। এছাড়া সাঁওতালী ভাষার সঙ্গে ইন্দো-ইরানিয়ান (আবেস্তা), ল্যাটিন, গ্রিক প্রভৃতি ভাষার হুবুহু মিল পাওয়া যায়। যেমন—সাঁওতালীতে বাবা বা পিতাকে বলা হয় ‘আপা’। প্রাচীন ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষায় ‘পিতা’ শব্দের রূপ ছিল আপো (apo) , আবেস্তায় ‘আপা’ (apa) গ্রিকে আপো (apo) এবং ল্যাটিনে আব (ab) , অর্থাৎ সাঁওতালী ভাষা হলো প্রাচীন সমৃদ্ধ ভাষা। এই সাঁওতালী ভাষা থেকেই বাংলা ভাষা সমৃদ্ধ হয়েছে। অনুমান করা হয় সাঁওতালী ‘আপা’ থেকেই প্রথমে ‘আবা’ এবং পরে বাংলা ‘বাবা’ এসেছে। ৩
আমার বাংলাদেশের আদিবাসী সাঁওতাল জনগোষ্ঠী ভাষার বর্ণমালা প্রশ্নে খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। ভাষার বর্ণমালা সমাধান কিংবা আলোচনা করতে গিয়েই বার বার ধর্মের বিষয়টি উত্থিত হয়েছে। পরিষ্কারভাবে বলা হয়ে থাকে যে, মুখের ভাষা, বর্ণমালা এবং ধারণ, বিশ্বাস ও অবলম্বন করা ধর্ম সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখাইেন কেউ কেউ ধর্মের গন্ধ খুঁজে পেয়ে থাকে। জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কর্ণধার রবীন্দ্রনাথ সরেন বিগত ৩১ মে, ২০১৭ খ্রি. ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির সম্প্রসারিত মিলনায়তনে সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছেন, ‘আদিবাসীদের মাতৃভাষায় সরকারিভাবে শিক্ষাদানে প্রচুর জটিলতা দেখা যাচ্ছে। এখানে সাঁওতালদের ক্ষেত্রে নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চা যারা করছে না বরং বিরোধিতা করছে তারই আজকে রোমান বর্ণমালায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের দাবি জানাচ্ছে। অপরদিকে প্রকৃত আদিসাঁওতালরা সরকারিভাবে বাদ পড়ে যাচ্ছে। তিনি এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সাঁওতালি ভাষায় প্রথমত বাংলা হরফে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন এবং পরবর্তীতে ধীরে ধীরে সাঁওতালদের নিজস্ব হরফ অলচিকির মাধ্যমে শিক্ষাদান চালুর দাবি জানান।’ সেই দিন যে ১১ দফা দাবি উত্থাপন করেছেন, সেটির প্রথমটিতে উল্লেখ ছিল—‘১. বাংলা বর্ণমালায় লিখতে-পড়তে অভ্যস্ত সাঁওতাল কিষাণ-কিষাণী, দিনমজুর, শিক্ষার্থী সমাজের দিকে তাকিয়েও রোমান বর্ণমালার আগ্রাসন থেকে সাঁওতালি ভাষাকে রক্ষার্থে সাঁওতালি ভাষার জন্য শুরুতে বাংলা বর্ণমালা ও পাশাপাশি অলচিকি বর্ণমালায় প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান চালু করতে হবে।’
এখন প্রশ্ন হচ্ছে—‘নিজস্ব সংস্কৃতি’ বলতে তিনি কী বুঝেয়েছেন? সংস্কৃতি মানে কী—ধর্ম পালন করা, দেবতাদের উদ্দেশ্যে পূর্জা-অর্চনা করা; ঐতিহ্যগতভাবে হাণ্ডি সেবন করা; নাচ-গান, পোশাক-আসাক, পদবী সংরক্ষণ করা; উৎসবের আয়োজন করা ইত্যাদি? এবার দেখা যাক বিষয়গুলো সম্পর্কে বই-পুস্তকগুলোতে কী রয়েছে। শ্রী সুবোধ ঘোষ ‘ভারতের আদিবাসী’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ‘ইতিহাসের সত্য হলো, আধুনিক হিন্দু সমাজের সঙ্গে আদিবাসী সমাজের একটা সম্পর্কের সূত্র ধীরে ধীরে, নানা ছোটো-বড়ো বাধা সত্ত্বেও, একটা ঘনিষ্ঠতর যোগাযোগ স্থাপনের কাজ করে চলেছে। সাঁওতাল সমাজ ব্রাহ্মণকে ঘৃণা করে, কিন্তু বহু হিন্দু আচার এবং উৎসবকে তারা আপন করে নিয়েছে। ১৮৯১ সালে সাঁওতালদের মধ্যে একটা সংস্কার আন্দোলনের প্রবর্তক জনৈক সাঁওতাল মনস্বী, নাম ভাগরিথ অর্থাৎ ভগীরথ। সংস্কারক ভগীরথের আন্দোলনের প্রধান বিষয়গুলি ছিল—শূকর এবং মুরগী খাওয়া বন্ধ করতে হবে, মদ্য পান ত্যাগ করতে হবে এবং মারাং বুরু দেবতার পুজো ছেড়ে দিয়ে এক ঈশ্বর বিশ্বাস করতে হবে (পৃষ্ঠা-৩০)।’ তিনি আরো উল্লেখ করেছেন, ‘সাঁওতালী ধর্মমতে এক শ্রেষ্ঠ দেবতার কল্পনা করা হয়—তিনি হলেন ঠাকুর।’ অর্থাৎ ঠাকুর জিউ। এ্যাড. রফিকুল হাসান এবং এ্যাড. মাইকেল সরেন প্রণীত ‘সিভিল ল আদিবাসীর সম্পত্তি হস্তান্তর ও খায়খালাসী বন্ধক আইন’-এ পাওয়া যায়, ‘আর্য্যগণের সমাজ ব্যবস্থা উন্নততর হওয়ার কারণে বিভিন্ন দল ও গোত্রভুক্ত আদিবাসীগণ হিন্দু ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং ক্রমশ তারা হিন্দু ধর্মের অন্তর্ভুক্ত হয়। হিন্দু ধর্মের মধ্যে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি কিন্তু আদিবাসীদের ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘটে নাই। আদিবাসী সম্প্রদায়ের ক্রমশ হিন্দু ধর্মের রীতিনীতি মানতে থাকে হিন্দু ধর্মের ন্যায় পূর্জা অর্চ্চনা করতে থাকে এবং এভাবে স্বাভাবিকীকরণের মাধ্যমে (by naturalizations) তারা নিজেদেরকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী বলে ভাবতে থাকে এবং হিন্দুগণও আদিবাসীদেরকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী জ্ঞান করতে থাকে।’ প্রাচীন নৃতাত্ত্বিকদের মধ্যে ফরসাইথ (Forsyth) যথার্থই বলেছেন, ‘বৈগা ভীল গন্দ কোল কোরকু এবং সাঁওতাল প্রভৃতি বিশিষ্ট উপজাতীয়ের মধ্যে কারা ভারতের প্রকৃত আদিম অধিবাসী অথবা কারা প্রথম ভারতে এসে বসতি স্থাপন করেছে, তা সম্ভবত কখনই জানান যাবে না। …এদের আচার ধর্ম ও ভাষার সঙ্গে হিন্দুদের আচার ধর্ম ও ভাষা এমনভাবে মিশে গেছে যে তাদের আদিম বৈশিষ্ট্য এখন খুঁজে বের করা অসম্ভব।’ অপরদিকে সনাতন ধর্ম সম্পর্কে শ্রী শিব শঙ্কর চক্রবর্তী তার ‘সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর প্রথম খণ্ড’ পুস্তকে উল্লেখ করেছেন, ‘সনাতন, শব্দটির অর্থ চিরন্তন। যা সকল সময়ই ছিল, আছে এবং থাকবে। সকল সৃষ্ট বস্তুই নশ্বর অর্থাৎ কোনো এক সময় নষ্ট হবে। অপরদিকে বলা যেতে পারে যে, সৃষ্ট বস্তু কখনও সনাতন হতে পারে না। সনাতন ধর্ম যদি সৃষ্ট হয়ে থাকে তবে তা একদিন নষ্ট হবে। অথচ সনাতন শব্দটি ধর্মের সঙ্গে থেকে বোঝানো হচ্ছে যে এ ধর্মটি সৃষ্ট নয়, নষ্ট হবে না, তাই চিরন্তন। মানুষ মরণশীল বলে তার প্রবর্তিত ধর্ম চিরন্তন বা সনাতন হতে পারে না। সনাতন ধর্ম প্রবর্তনকারীকে হতে হবে চিরন্তন বা সনাতন। যিনি চিরন্তন বা সনাতন তিনিই একমাত্র সনাতন বস্তু সৃষ্টি করতে পারেন। চিরন্তন বা সনাতন হলেন স্বয়ং ঈশ্বর। তার পক্ষেই সম্ভব একটি চিরন্তন সত্য প্রবর্তিত করা। তাই সনাতন ধর্মের প্রবর্তক স্বয়ং ঈশ্বর (পৃষ্ঠা ১৭)।’ শতাব্দীকাল পূর্বে ১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দে আদমশুমারী প্রাক্কালে এসব আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ধর্ম নির্ণয়ে প্রচ- বেগ পেতে হয়েছে। তৎকালীন কমিশনার জে এ বেইনস (J. A. Baines) বলেছিলেন, ‘বহু উপজাতীয় গোষ্ঠী (Tribal People) বর্তমানে হিন্দু হয়ে গেছে,। এদের ধর্মমত এবং যারা এখনও অহিন্দু উপজাতীয়রূপে আছে, তাদের ধর্মমতের মধ্যে কোনো ভেদরেখা টানতে পারা যায় না।’
আদিবাসী সাঁওতালরা হিন্দু না খ্রিষ্টিয়ান ধর্মের অনুসারী? সাংবাদিক সম্মেলনে শ্রী রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেছেন, ‘…সাঁওতালরা বাংলা বর্ণমালায় পড়তে চায়। কিন্তু খ্রিষ্টানরা রোমান হরফে প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার দাবি জানাচ্ছে’ (যুগান্তর ১.৬.২০১৭)। অর্থাৎ ধর্মান্তরিত কিংবা জন্মগত খ্রিষ্ট বিশ্বাসী সাঁওতালদেরকে আর সাঁওতাল বলতে নারাজ। বিষয়টি যত সহজ মনে করেছেন, ঠিক তত সহজ নয়। কোনো একটি ধর্মে দীক্ষা নিলেই কী তার সাঁওতালিত্ব ক্ষুণ্ন হয়ে যায়! নাকি সেটিও মনগড়া ব্যাখ্যা। বিশিষ্ট ঐতিহাসিক এবং ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দের সেন্সাস কমিশনার ডা. জে.এইচ হাটন (Dr. J. H. Hutton) )-এর মতে, ‘যতক্ষণ না আদিবাসীরা ব্রাহ্মণ পুরোহিত গ্রহণ করে, গরুকে পবিত্র জীব মনে করে এবং হিন্দু মন্দিরের বিগ্রহ পূজা করে, ততক্ষণ আদিবাসীদের হিন্দু বলা ঠিক হবে না।’ অবশ্য স্বীকার করেছেন ‘হিন্দুধর্ম এবং উপজাতীয় বা আদিবাসী ধর্মসমূহ এই দুয়ের মধ্যে কোনো ভেদরেখা টানা দুষ্কর।’ ধর্মান্তকরণ এবং সাঁওতালিত্ব বিষয়ে স্পষ্ট হওয়ার জন্য পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে একটি নজির উপস্থাপন করছি। কারমু হাঁসদার মোকাদ্দমায় প্রশ্ন তোলা হয় যে কারমু হাঁসদার পিতৃ-পুরুষ প্রায় সত্তর বৎসর পূর্বে খ্রিষ্টিয় ধর্ম গ্রহণ করে এবং কারমু হাঁসদা বংশানুক্রমে খ্রিষ্টান। এ কারণে যুক্তি উপস্থাপন করা হলো যে বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইনের সপ্তম ক অধ্যায়ের আইন কারমু হাঁসদাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। কলিকাতা হাইকোর্ট এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদান করেন যে, ‘Change of religion does not change the aboriginal status of santal and as such transfer by a santal embrasing Christianity is viod without permission from the revenue officer’ (Kermoo Hasda vs Phanindra Nath Sarker 4 ICWN 32). পাটনা হাইকোর্টও এ সংক্রান্ত রায় দিয়েছে। বলা হয়েছে, একজন আদিবাসী সাঁওতাল তার পছন্দ অনুযায়ী যে কোনও ধর্ম পালন করতে পারেন, তাতে তার আদিবাসীত্বের বা তদানুযায়ী অধিকারসমূহের কোনও হেরফের ঘটে না। এছাড়াও বিভিন্ন তথ্যাদি থেকে জানা যায়, ‘প্রাপ্ত বয়স্ক অথবা অপ্রাপ্তবয়স্ক পিতার ধর্ম ত্যাগ করে অন্য ধর্ম গ্রহণ করলে সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হবে না (Caste Disabilitis Re moral Act 1850)| । ধর্মান্তরিত হলে অপ্রাপ্তবয়স্কের গার্জিয়ান থেকেও বঞ্চিত হবে না (Shamsigh vs Sahntibai (ILR Bombay 55)। শিশু সন্তানের জন্য পিতা-মাতার ধর্মান্তর তাদের সম্পত্তি হতে বঞ্চিত করা যাবে না। একজন হিন্দু খ্রিষ্টিয়ান ধর্ম গ্রহণ করলে সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হবে না। হিন্দু যৌথ পরিবারভুক্ত হলে যে সম্পদ ধর্মান্তরিত হওয়ার দিনে অর্জিত হয়েছে, সে সেই পরিমাণ সম্পদের উত্তরাধিকারী বলে পরিগণিত হবে (আইন সহায়িকা—মি. জেমস্ হিলটন)। সাঁওতালদের নিজস্ব হরফ বলে অলচিকিকে চালিয়ে দিচ্ছেন? কিন্তু কেন? ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে (মতান্তরে ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে) সাধুরামচাঁদ মুরমু ‘মজ দাঁদের আঁক’ নামে সাঁওতালি লিপি তৈরি করেন, এছাড়াও অনেকে সাঁওতালী বর্ণমালা উদ্ভাবন করেছেন। শ্রী সাধুরাম চাঁদের চেয়ে কমপক্ষে দুই বছর পর ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে পণ্ডিত রঘুনাথ মুরমু সাঁওতালি ভাষার জন্য ‘অলচিকি’ লিপির উদ্ভাবন করেন। ‘মজ দাঁদের আঁক’ বা অন্যগুলো বাদ দিয়ে কেন ‘অলচিকি’কে নেওয়া হলো এটি সত্যিই রহস্যজনক।
এক দৃষ্টিতে আদিবাসী সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর সাহিত্য, বর্ণমালা এবং সমৃদ্ধতা সম্পর্কে তথ্যাবলি
১. রেভারেন্ড জিরিমিয় ফিলিপস এবং মিশনারী এলিনয়ের সাহেব প্রথম সাঁওতালদের জন্য সাঁওতালী ভাষা শিক্ষাদানের জন্য জলেশ্বরে মিশন স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।
২. রেভারেন্ড জিরিমিয় ফিলিপস সাঁওতালী গান, ধাঁধা, উপকথা সংগ্রহ করে ১৮৪৫ খ্রিষ্টাব্দে গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এটিই হচ্ছে সাঁওতালী ভাষায় প্রথম পুস্তক, তবে গ্রন্থটির নাম জানা যায়নি। কেউ বলেন গ্রন্থটি বাংলা হরফে; আবার কেউ বলেন রোমান লিপিতে মুদ্রিত হয়েছিল।
৩. ড. সি. আর লেপসাস বোঝেন যে, সাঁওতালী ভাষাকে সঠিকভাবে লিখতে গেলে প্রচলিত রোমান হরফের সরলীকরণ প্রয়োজন। তিনিই ১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দে সাঁওতালী ভাষার জন্য স্ট্যান্ডার্ড রোমান হরফ তৈরি করেন। অর্থাৎ রোমান হরফের সঙ্গে কিছু কিছু চিহ্ন সংযোজন করে সাঁওতালি উচ্চারণের উপযোগী করে তোলেন। তারপর থেকেই প্রকৃতপক্ষে রোমান লিপির সাহায্যে সাঁওতালি ভাষার যাত্রা শুরু হয়।
৪. ১৮৫২ খ্রিষ্টাব্দে রেভা. জে ফিলিপস ৫ হাজার শব্দের ব্যাকরণ রচনা করেন An introduction to the Santali Language.
৫. রেভারেন্ড এল.সি কিচেন ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দে ভীমপুরে মিশন স্থাপন করেন। মূলত তাঁরই উদ্যোগে ভীমপুর হাইস্কুলে সাঁওতালী ভাষা নিয়ে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দেবার প্রথম সুযোগ সৃষ্টি হয়।
৬. রেভারেন্ড এ ক্যাম্পবেল ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দে ছাপাখানা মেসিন বসান এবং সাঁওতালী ভাষার পুস্তক রচনা ও ছাপার কাজ শুরু করেন। ক. সানতালি হাড়হাঃ পুথি (পাইলো, দসার আর তেসার হাটিঞ)। শিশু উপযোগী গ্রন্থ প্রকাশ করেন যেমন—পাহা পোহো; পিয়াং পায়াং, কুলি ও আচুর এবং থার চেতান থার।
৭. ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দে ঠাকুর মুরমু ও ডমন চন্দ্র হাঁসদা-এর সহযোগিতায় কলকাতার ‘বেদান্ত ’ প্রকাশনি থেকে প্রকাশিত হয় সাঁওতালদের ধর্মীয় মহাগ্রন্থ ‘খেরওয়াল বংশ ধরম পুঁথি’। ৬৮ পৃষ্ঠার গ্রন্থটিই হচ্ছে প্রথম গ্রন্থ যেটি মিশনারীদের সাহায্য ছাড়াই নিজস্ব উদ্যোগে প্রকাশিত।
৮. ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে (মতান্তরে ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে) সাধুরামচাঁদ মুরমু ‘মজ দাঁদের আঁক’ নামে সাঁওতালি লিপি তৈরি করেন।
৯. ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে পণ্ডিত রঘুনাথ মুরমু সাঁওতালি ভাষার জন্য ‘অলচিকি’ লিপির উদ্ভাবন করেন।
১০. বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার সাঁওতালি ছেলেমেয়েরা স্থানীয় ভাষায় শিক্ষালাভ করতে থাকলে ক্রমশই অভ্যস্ত হয়ে পড়ে যেমন—উড়িষ্যার সাঁওতালরা উড়িয়া লিপি, বিহারে দেবনাগরী পশ্চিম বাংলায় বাংলা লিপিতে এবং বাংলাদেশে রোমান বর্ণমালাতে।

সাঁওতালি (রোমান) বর্ণমালায় প্রাক্-প্রাথমিক পর্যায়ে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে প্রয়োজনীয়তা ও সুবিধা সমূহ
প্রথমত—এদেশের সাঁওতাল জনগোষ্ঠী রোমান বর্ণমালাকে নিজেদের বর্ণমালা হিসেবেই মনে প্রাণে বিশ্বাস ও গ্রহণ করেছেন।
দ্বিতীয়ত—স্মরণাতীতকাল থেকে রোমান বর্ণমালায় পড়াশোনায় অভ্যস্ত এবং সহজবোধ্য মনে করেন। বিদ্যালয়ে গমন না করেও অনেকে আতস্ত করতে পারেন।
তৃতীয়ত—ইতিমধ্যেই রোমান বর্ণমালায় প্রাক্-প্রাথমিক পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তক প্রণীত হয়েছে এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিদ্যালয়গুলোতে স্বাধীনোত্তর থেকেই পঠিত হচ্ছে।
চতুর্থত—ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনানোর জন্য শিক্ষক-শিক্ষয়িত্রীগণ অভিজ্ঞতা, কৌশল এবং করণীয় দক্ষতা অর্জন করেছেন।
পঞ্চমত—রোমান বর্ণমালায় সাহিত্যে চর্চার জন্য এদেশে সাহিত্য পত্রিকা (তাবিথা সংবাদ) নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয়ে আসছে।
ষষ্ঠত—রোমান বর্ণমালা ব্যবহার করেই সাঁওতাল গীতিকার, কবিগণ তাদের সাহিত্য চর্চাকে বিকশিত করে চলেছেন।
সপ্তমত—শিক্ষক-শিক্ষয়িত্রীগণ শব্দ সম্ভার বৃদ্ধি কিংবা নিজেদের আরো দক্ষতা বাড়াতে ইংরেজি-সাঁওতালী ডিকশনারি, ব্যাকরণ (যা রোমান বর্ণমালা ব্যবহৃত) ব্যবহার করছেন এবং করতে পারেন।
অষ্টমত—বাংলাদেশ, ভারত, নেপালসহ বিশ্বের আদিবাসী সাঁওতালদের সাথে ই-মেইল, ম্যাসেজ কিংবা ফোনে যোগাযোগ সহজসাধ্য এবং বোধগম্য।
নবমত—উপমহাদেশের সাঁওতালদের সাহিত্য প্রধানত রোমাণ বর্ণমালায় রচিত। রোমান বর্ণমালা ব্যবহার ও চর্চায় আন্তঃদেশীয় সাহিত্যের আদান-প্রদান সহজ এবং প্রাণিধানযোগ্য।
দশমত—ইতিমধ্যেই প্রণীত সাঁওতালী-ইংরেজি ডিকশনারি, সাঁওতালী-বাংলা ডিকশনারি, ব্যাকরণ, ভাষা শিক্ষার পাঠ্যপুস্তক প্রণীত হয়েছে। এগুলোকে আরো সমৃদ্ধ, সহজকরণ কিংবা যুগপোযোগী করা যায়; কিন্তু নতুন করে সৃষ্টি করা সম্ভবপর নয়। এটি শুধু খ্রিষ্ট বিশ্বাসীদের জন্য মূল্যবান নয়, অ-খ্রিষ্টিয়ানদের জন্যও সমৃদ্ধ তথ্যাবলী সংগৃহীত হয়েছে।
একাদশতম—‘বাংলাদেশ নর্দাণ ইভানজেলিক্যাল লুথারেন চার্চ’ (বিএনইএলসি) কর্তৃক উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোর ১৯৭ টি চার্চে (গির্জা) সাঁওতালী ভাষার রোমান বর্ণমালায় গির্জা (চার্চ) পরিচালিত হয়ে আসছে।
দ্বাদশতম—বিএনইএলসি সদস্যভুক্ত প্রায় ১২ হাজার আদিবাসী সাঁওতালদের চার্চ ডিনোমিনেশনের যাবতীয় কার্য পরিচালনার কাগজ-পত্র সংরক্ষণ, সভা-সমিতির মিনিট সংরক্ষণ, মিটিং ও প্রার্থনা রোমান বর্ণমালায় বর্ণিত সাঁওতালী ভাষার ব্যবহার, চর্চা ও সংরক্ষণ করে আসছে।
ত্রয়োদশতম—এদেশে ধর্মতত্ত্ব অধ্যয়নকারীদের জন্য রোমান বর্ণমালায় সাঁওতালী ভাষার প্রচলন চলমান থাকলে সহজেই পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে বিটিএইচ ও এমডিভ পর্যায়ের বইগুলো আমদানি করা যায় কিংবা অধ্যয়নের জন্য গমন করতে পারবেন।
চতুর্থদশতম—আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশে সাঁওতালী বর্ণমালা সাঁওতালী ভাষা ও সাহিত্য চর্চা সহজ হবে। কারণ যেকোনো কম্পিউটারে Arial Unicode-MS Font ও Santal font রয়েছে। আবার ‘হড় কাথা’ নামক সাঁওতালী সফটওয়ার এর মাধ্যমে সহজে সাঁওতালী ভাষা লিখা যায়।
ষোলতম—রোমীয় সান্তালী লিপিতে স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জন বর্ণ সব পরিস্কার করে পৃথক পৃথকভাবে লেখা যায়। ফলে ভাষার ধ্বনিগুলো পৃথক পৃথকভাবে চেনা যায়।
সতেরতম—বিগত মার্চ ১৭, ২০১২ খ্রি. বাংলাদেশ বাইবেল সোসাইটি কর্তৃক সাঁওতালী ভাষায় পবিত্র বাইবেলের রিভাইজ সংস্করণ উদ্বোধন করা হয়। রোমান বর্ণমালায় লিপিবদ্ধ নব সংস্করণটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ আমনুরা মিশন ক্যাম্পাসে মোড়ক উম্মোচন করা হয়। বর্তমানে পবিত্র বাইবেলের পুরাতন নিয়মের সংস্করণ কাজ চলমান রয়েছে।
আঠারতম—বিগত ১০ই জুলাই, ২০১৩ খ্রি. দিনাজপুরের ‘সান্তাল এডুকেশন সেণ্টার’-এ ‘কুকলী পুথি’ ‘প্রশ্ন পুস্তক’ নামক সাঁওতালী ভাষার রোমান বর্ণমালার পুস্তককের মোড়ক উম্মোচন করা হয়।
ঊনিশতম—বিগত নভেম্বর ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে সাঁওতালী ভাষার রোমান বর্ণমালায় লিপিবদ্ধ ‘সেরেঞ পুথি’ (গানের পুস্তক)-এর তৃতীয় সংস্করণ ঢাকার আই.জে.বি প্রিন্টার্স থেকে প্রিন্টিং করানো হয়।
কুড়িতম—সাঁওতালী বর্ণমালাতে (রোমান বর্ণমালা) পাঠদান ও লেখাপড়া নিয়মিতকরণ করা হলে ইংরেজী লেখা সহজ, বোঝা বোধগম্য এবং আতস্থ করতে সহজসাধ্য হয়ে থাকে।

বাংলা বর্ণমালায় সাঁওতালি পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও পাঠদানে অসুবিধা সমূহ
১. প্রথমত—উচ্চারণ ও বাচন বিধির দিক থেকে সাঁওতালী ভাষা স্বতন্ত্র। কারণ শব্দের উচ্চারণগত পার্থক্যর কারণে অর্থের তারতাম্য ঘটে ও বিকৃতি ঘটার কারণে বিপত্তির কারণ হয়; অতএব অন্য কোনো হরফ দিয়ে পাঠ্যপুস্তক রচনা করা বাঞ্ছনীয় নয়।
২. দ্বিতীয়ত—সাঁওতালি ভাষায় বাংলা লিপিতে স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জন বর্ণ সব পরিষ্কার করে পৃথক পৃথকভাবে লেখা যায় না। ফলে ভাষার ধ্বনিগুলো পৃথক পৃথকভাবে চেনা যায় না।
৩. বাংলা বর্ণমালাতে পাঠদান শুরু করা হলে বাংলা শব্দের সর্বাধিক অনুপ্রবেশ ঘটবে এবং এদেশে কয়েক শত বছরের ঐতিহ্যতাকে সমুলে ধ্বংস সহজতর হবে।
৪. সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর বিভক্তি ঘটবে যা আর্থ-সামাজিক এবং সামগ্রিক উন্নয়ন ব্যাহত হয়ে প্রান্তিক পর্যায়ে ধাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
৫. বাংলা বর্ণমালা এবং বাংলা ভাষাভাষীদের প্রতি আদিবাসী সাঁওতালদের দৃষ্টিভঙ্গি সাম্রাজ্যবাদী চিন্তা-চেতনার বহিঃপ্রকাশ সুদৃঢ় হবে।
৬. ২০০০ খ্রিষ্টাব্দের রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী থানার বর্ষাপাড়া এবং সুন্দরপুরে বাংলা বর্ণমালায় সাঁওতালী পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও পাঠদান শুরু করলেও ভাষা ও বর্ণমালা অনুপযুক্ত এবং বির্তকের জন্য সেটির পাঠদান পুরোপরি বন্ধ হয়ে যায়।
৭. রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ীতে বাংলা বর্ণমালাতে পাঠদান শুরু করলেও পরবর্তীকালে পাঠ্যপুস্তকের অভাব ও যথোপযুক্ত লেখকের সংকটের জন্যে প্রাক্-প্রাথমিক পর্যায়ে উন্নীত করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।
৮. পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও অলচিকি বর্ণমালাতে সাঁওতাল অধ্যুষিত এলাকায় প্রাক্-প্রাথমিক পর্যায়ে পাঠদান নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। উচ্চ শিক্ষা ও শিক্ষকের সংকুলান এবং আগ্রহ ক্রমশই হারিয়ে ফেলছে।
৯. বাংলা বর্ণমালাতে প্রাক্-প্রাথমিক পর্যায়ে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করা হলে নতুন প্রজন্ম এবং পূর্বসুরীদের মধ্যে জেনারেশন গ্যাপ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি রয়েছে। এতে করে সাঁওতালী ভাষার সৌন্দর্য, ঐশ্বর্যতা এবং মৌলিকত্বতা দ্রুতই হারিয়ে ফেলবে।
১০. সাঁওতাল জনগোষ্ঠি তাদের কর্মে নিযুক্ত হওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।
১১. সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর সংখ্যাধিক্য মতামতকে উপেক্ষা করে পাঠ্যপুস্তক প্রণীত হলে সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে আবারো ভাষা-বর্ণমালা নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে।
১২. আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটর মৌল উদ্দেশ্য মাতৃভাষা সংরক্ষণ। বাংলাদেশের শিক্ষিত, বুদ্ধিজীবী, লেখক, গবেষক এবং প্রগতিশীল সাঁওতালদের মতামতকে উপেক্ষা করে পাঠ্যপুস্তক প্রণীত হলে বিচ্ছিন্নতায় প্রাধান্য পাবে ও ইনস্টিটিউটের স্বার্থ সংরক্ষণ করা সম্ভবপর হবে না।
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাসমূহের (রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা, রংপুর, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও খাগড়াছড়িতে সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের আদমশুমারী অনুযায়ী, আদিবাসী সাঁওতালদের সংখ্যা দেখানো হয়েছে মাত্র দুই লাখ দুই হাজার ১৬২ জন এবং ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে দেখানো হয়েছে, এক লাখ ৪৩ হাজার। তবে বেসরকারি তথ্যানুযায়ী এদেশে সাঁওতালদের জনসংখ্যা সাড়ে পাঁচ লক্ষ থেকে ছয় লক্ষ হবে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে অনুমান করা যায়। বিগত (২০.২.২০১৭) প্রথম আলোর শিরোনাম ‘ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সব শিশু মাতৃভাষায় বই পায়নি’-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল, ‘কোনো কোনো বিদ্যালয়ে এ ধরনের বই গেলেও প্রশিক্ষিত শিক্ষকের অভাবে ঠিকমতো পড়ানো যাচ্ছে না।’ বিষয়টি মাঠ পর্যায় থেকে উঠে এসেছে। আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, এ দেশে সাঁওতালী বর্ণমালা ব্যতীত অন্য কোনো বর্ণমালায় প্রাক্-প্রাথমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়গামী ছেলেমেয়েদের শিক্ষাদানের জন্য বর্ণমালা ব্যবহার করলে সেটি বাংলাদেশের সাঁওতালদের জন্য শুধু সমস্যাই হবে না, কঠিন এবং দুরূহ সমস্যার সৃষ্টি করবে। অতঃপর রোমান, উড়িয়া, দেবনাগরী, বাংলা, অলচিকি এবং মজ দাঁদের আঁক বর্ণমালা মধ্যে যেটি বাংলার সংখ্যাধিক্য সাঁওতালরা গ্রহণ করবে, সেটিতেই প্রাক্-প্রাথমিক পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। জ্ঞানতাপস শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ লিখে গেছেন, ‘…আমাদের মনে রাখতে ভাষার ক্ষেত্রে গোঁড়ামি বা ছুতমার্গের কোনো স্থান নেই। ঘৃণা ঘৃণাকে জন্ম দেয়। গোঁড়ামি গোঁড়ামীকে জন্ম দেয়। একদল যেমন বাংলাকে সংস্কৃত ঘেঁষা করতে চেয়েছে, তেমনি আর একদল বাংলাকে আরবী-ফারসী ঘেঁষা করতে উদ্যত হয়েছে। একদল চাচ্ছে খাঁটি বাংলাকে বলি দিতে আর একদল চাচ্ছে জবেহ করতে। একদিকে কামারের খাঁড়া, আর একদিকে কসাইয়ের ছুরি। …কিন্তু আমাদের দুটি কথা স্মরণ রাখা উচিত—ভাষা ভাব প্রকাশের জন্য, ভাব গোপনের জন্য নয়, আর সাহিত্যের প্রাণ সৌন্দর্য, গোঁড়ামি নয়।’
তথ্যসূত্র:
১। আদিবাসী ভাষা ও সংস্কৃতিঃ প্রসঙ্গ নদীয়া জেলা- ড. শিবানী রায় (মণ্ডল), পৃষ্ঠা ২৪২
২। পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা- ২৪৬
৩। পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা- ২৫৮
৪। বিভিন্ন সংগঠনের প্রদত্ত স্মারকলিপি

● মিথুশিলাক মুরমু : আদিবাসী বিষয়ক গবেষক ও লেখক।

Previous Post

‘টিকা’ টিপ্পনী - মুহম্মদ জাফর ইকবাল

Next Post

ভাষা আন্দোলন ও কিছু বাস্তবতা —এডওয়ার্ড রিয়াজ মাহামুদ

Admin

Admin

Next Post
ভাষা আন্দোলন ও কিছু বাস্তবতা —এডওয়ার্ড রিয়াজ মাহামুদ

ভাষা আন্দোলন ও কিছু বাস্তবতা —এডওয়ার্ড রিয়াজ মাহামুদ

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ADVERTISEMENT

সময়ের বিবর্তন

সম্পাদকঃ
আবদুল মাবুদ চৌধুরী

বিভাগীয় সম্পাদকঃ
নায়েম লিটু

ফোনঃ ০২-৯০১১১৫৬ বাসাঃ -০৪, রোডঃ ০৪, ব্লক- এ, সেকশনঃ ০৬, ঢাকা -১২১৬

  • Setup menu at Appearance » Menus and assign menu to Footer Navigation

Developer Lighthouse.

No Result
View All Result
  • প্রচ্ছদ
  • সারাদেশ
    • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • শিক্ষা
    • পড়াশোনা
    • পরীক্ষা প্রস্তুতি
  • সাহিত্য পাতা
    • গল্প
    • ইতিহাসের পাতা
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা ও ছড়া
  • খেলাধুলা
    • ক্রিকেট
    • ফুটবল
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
    • আউটসোর্স
  • জীবনযাপন
    • ঘর ও গৃহস্থলী
    • স্বাস্থ্য
    • বিনোদন
    • ভ্রমণ
    • রেসিপি
    • ধর্ম-দর্শন
    • ফিচার
  • অন্যান্য
    • বিশ্ব রাজনীতি
    • কলাম
    • কৃষি
    • মতামত
    • বড়দিনের বিশেষ লেখা

Developer Lighthouse.

Login to your account below

Forgotten Password?

Fill the forms bellow to register

All fields are required. Log In

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In