মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধভাবে সকল সমস্যা মোকাবেলায় সচেষ্ট হলেই এগোবে দেশ
১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস, জাতির জন্য পরম গৌরবের দিন। ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বিশ্বের মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। মুক্তির জয়গানে মুখর কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি শ্রদ্ধাবনত চিত্তে এদিন স্মরণ করে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান সেই অকুতোভয় বীরদের, যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এ বিজয়। ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে রেসকোর্স ময়দান (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী হাতের অস্ত্র ফেলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়েছিল বিজয়ী বীর বাঙালির সামনে। স্বাক্ষর করেছিল পরাজয়ের সনদে। অগণিত মানুষের আত্মত্যাগের ফসল আমাদের স্বাধীনতা। আমরা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের, যেসব নারী ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন, তাঁদের। এদিনে আমরা স্মরণ করি ভাষা আন্দোলন থেকে শুর” করে স্বাধিকার আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে যারা আত্মত্যাগ করেছেন, তাঁদেরও।
এদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার তথা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সফল নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কোটি কোটি মানুষকে তিনি স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে তুলেছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন একই লক্ষ্যে অবিচল একদল রাজনৈতিক নেতা। স্বাতন্ত্র্যমÐিত সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের মাধ্যমেও আমাদের জাতীয়তাবোধকে শাণিত করে তোলা হয়েছিল। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরও শিক্ষা, স্বা¯ে’্যর মতো মানবসম্পদ সূচকে বিশ্বসমাজের পেছনের সারিতে আমাদের অব¯’ান করলেও বাংলাদেশ ক্রমশই সামনের দিকে এগিয়ে চলছে। বাড়ছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে গভীর বিভক্তি। পাশাপাশি জাতীয় প্রশ্নে অনৈক্য আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পথে বড় বাধা হয়ে রয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি এখনও তৎপর। যুদ্ধাপরাধের বিচার চলছে। বেশ কয়েকজন কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদÐও কার্যকর করা হয়েছে। সমগ্র বিচার সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলে তা এ ধরনের অপশক্তির তৎপরতা রোধে সহায়ক হবে নিশ্চিতভাবইে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়া, দারিদ্র্য ও দুর্নীতি থেকে মুক্তির সংগ্রামের পাশাপাশি একইভাবে চলেছে সামরিক শাসন, গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম, যুদ্ধাপরাধের বিচার, মৌলবাদ ও সা¤প্রদায়িকতা প্রতিরোধ আন্দোলন। এসব আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যেই মোকাবিলা করতে হয়েছে নানারকম প্রাকৃতিক দুর্যোগের। কিš‘ শত প্রতিবন্ধকতাতেও হতোদ্যম হয়নি এ দেশের সংগ্রামী মানুষ। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয়ের পেছনে কাজ করেছিল মত-পথ-জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবার এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ। আমাদের সামনে অসীম সম্ভাবনা। জাতীয় ঐক্য ছাড়া তা যথার্থভাবে কাজে লাগানো যাবে না। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শিক্ষা নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সকল সমস্যা মোকাবেলায় সচেষ্ট হলে আমাদের দ্র”ত অগ্রগতি ঘটবে। সকল বিভেদ ভুলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বলিয়ান হয়ে আমরা সে পথেই অগ্রসর হব- এই হোক আমাদের বিজয় দিবসের অঙ্গীকার।