কাশিমনগর আদিবাসী সাঁওতাল পল্লীতে পরিদর্শনে রওনা হয়েছিলাম রেভা. দীপঙ্কর রায়, রেভা. রবিন সরেন, বিধান আদিত্য এবং সন্দর্ভ লেখক। যখন পরিদর্শনে যাচ্ছি, অগ্নিদগ্ধের মাস পূর্ণ হয়ে একদিন গত হয়েছে; দিনটি ছিল সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪। ৫ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করলে দুর্বৃত্তরা উল্লাসে মেতে উঠে ওইদিনই প্রথম নোটিশ দিয়েছিল। সেদিন কয়েকজন চিহ্নিত দুর্বৃত্তরা প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে চলে যায়, ‘‘তোদের নেত্রী তো পালিয়েছে, এখন আর তোদের বাঁচানোর কেউ নেই। আমরা দ্রুতই তোমাদের তাড়ানোর ব্যবস্থা করছি।’’ কয়েকদিন পরই আগস্ট ৭, ২০২৪ গভীর রাতে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দলবদ্ধ লোকজন কাশিমনগর আদিবাসী সাঁওতাল পল্লীতে মারধর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। কাশিমরনগর সাঁওতাল পল্লীতে চিহ্নিত দুর্বত্তরা আদিবাসীদের ছন ও টিনের ঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল। কাশিমনগর সাঁওতাল পল্লী দুটি ভাগে বিভক্ত, একসাথে রয়েছে ৫০টি পরিবার ও সামান্য দূরে অর্থাৎ ৮/১০ মিনিট হাঁটা রাস্তা দূরে ৭টি পরিবারের অবস্থান। এই পরিবারগুলো থেকে অনতিদূরে পাকা রাস্তা বীরগঞ্জ থেকে দেবীগঞ্জের দিকে চলে গেছে। আমাদের পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুপুর প্রায় ১২:৩০ ঘড়ির কাঁটাতে। পৌঁছানো মাত্র আদিবাসী সাঁওতাল নারী-পুরুষ ঘর থেকে বেরিয়ে আসলেন, তাদের চোখে মুখে তখনো ভয়ার্ত চিহ্ন স্পষ্টভাবে বিদ্যমান। আমাদের পথপ্রদর্শক রেভা. রবিন সরেন পূর্ব পরিচিত জায়গা বিধায় আমাদের কষ্ট হলো না। আমরা দ্রুত ছুটে গেলাম যেখানে মুংলু বেসরার ভিটা চুরুস করা জায়গার দিকে। গ্রামের শেষ মাথায় ভিটার জায়গায় দেখি শতাধিক কলাগাছ লাগানো হয়েছে, কলাগাছগুলো বৃষ্টির পানি পাওয়ায় সজীব হয়ে উঠেছে; লাগানো কলা গাছের মধ্যেই গ্রামের ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েরা মনের আনন্দে ছোটাছুটি ও খেলাতে মত্ত হয়ে উঠেছে। মুংলু বেসরা’র নিশ্চিহ্ন হওয়া ভিটা ওপর দাঁড়িয়ে কয়েকটি ছবি তুললাম, বোঝার কোনো উপায় নেই, এখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম কোনো আদিবাসী পরিবার ঘর বেঁধে জীবনযাপন করতেন। মুংলু পরিবার-পরিজন নিয়ে কোথায় নিরুদ্দেশ হয়ে গেলেন, কেউই তার সূত্র দিতে পারেনি। পাশের বাড়ির গৃহিণী ছোট্ট শিশুকে কোলে নিয়ে জানাচ্ছিলেন, কোথায় থেকে যেন লোকগুলো হঠাৎ করে আসে এবং ঘরবাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। তাদেরও পূর্বদিকের ঘরটি পুড়ে গেছে। এই জায়গায় থাকতে পারবে কিনা, সেটি এখন স্রষ্টার ওপর নির্ভর করে। পরিবারের কর্তা প্রতিদিন মজুরী খাটেন, দিন আনে দিন খায়। অনিশ্চিত জীবনে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা কিংবা দূরের স্কুলে পাঠানোও এখন রীতিমত ঝুঁকিপূর্ণ। স্বপ্না মুরমু জানাচ্ছিলেন, তার মেয়ে ধুলাউড়ি কাশিমনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক ঘটনার পর এখন স্কুলে যেতে ভীত সন্ত্রস্ত হচ্ছে; তার মধ্যে যে ভয়ের সংস্কৃতি বাসা বেঁধেছে, সেটি কী আর কখনো দূরীভূত করা যাবে! এভাবেই হয়ত গ্রামের আদিবাসী সাঁওতাল ছেলেমেয়েরা শিক্ষার জীবনের সমাপ্তি রেখা টানবে। একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়েও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধানে ব্যর্থ হওয়া শুধুমাত্র অত্র এলাকার দায়বদ্ধতা নয়, সমগ্র দেশের নাগরিক এটির নৈতিক দায়বদ্ধতাকে অস্বীকার করতে পারবেন না।
মুংলু বেসরা, পিতা মোটা বেসরা, কাশিমনগর, বীরগঞ্জ, দিনাজপুরের বাসিন্দা। ৭ই আগস্ট রাতে ২৫/৩০ জনের একটি দল কাশিমনগরের ৭টি সাঁওতাল আদিবাসী পরিবারকে উচ্ছেদ করণার্থে রাত ১১:৩০ মিনিটের দিকে ঘরের চালে পেট্রোল ছিটিয়ে দিয়ে অগ্নিসংযোগ করে। দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত চিহ্নিত লোকেরা সোম বেসরা, মঙ্গলু বেসরা, রামু বেসরা ও রবি বেসরাকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করে। পেট্রোলের গন্ধ এবং আগুনের লেলিহানে বাঁশের শব্দে ঘুম ভেঙে পালিয়ে বাঁচতে চাইলেও রামু বেসরাকে ধরে সুপারি গাছের সাথে বেঁধে বেধড়ক মারতে থাকে। মঙ্গলু বেসরার ২টি গাভী, ১টি বাছুর, ৬টি ছাগল, ১টি শূকর লুঠপাট করে নিয়ে যায়।
আদিবাসী পরিবারের কেউ-ই রেহায় পাননি লুটপাট থেকে; গৃহপালিত পশুপাখি ছাড়াও মূল্যবান গাছ-গাছালিও কেটে নিয়ে যায়। আতঙ্কিত আদিবাসীরা প্রাণভয়ে দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পালিয়ে নিজেদেরকে বাঁচিয়েছে। চিহ্নিত লোকের তাণ্ডব চলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, ঘরের মূল্যবান আসবাবপত্র, কাগড়-চোপড়ও বাকি রাখেনি; সবকিছুই নিজের মতো করে গুছিয়ে নিয়েছে। চিহ্নিত লোকেরা রামু বেসরাকে জোরপূর্বক সাদা কাগজে টিপসই করিয়ে ছেড়ে দেন, এটি কিসের জন্যে টিপসই; সেটির রহস্য উদ্ঘাটন করা যায়নি। অসমর্থিত সূত্র মতে, মুংলু বেসরা দূরবর্তী মামার বাড়িতে অবস্থান করছেন, অন্যরাও জীবন বাঁচাতে স্বামী-স্ত্রী, পুত্র-কন্যা ও প্রবীণদের নিয়ে নিরাপদ স্থানকে বেছে নিয়েছেন। ১০ই আগস্ট প্রস্তুতকৃত অভিযোগের খসড়া একটি আবেদন হাতে এসেছে, এটিতে বীরগঞ্জ থানার কোনো তালিকাভূক্তি নেই। অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, “বর্তমানে ২নং আসামী মো. ভোলা বিভিন্ন সময় আমারে মোবাইল ফোনে রিং করিয়া বলে যে, ব্যাটা! এলাকায় আসিলে তোকে খুন করে তোর লাশ গায়েব করে দিব, লোক ঠিক করে রেখেছি, তোকে যেখানেই পাবে সেখানেই খুন করবে।” পলায়নপর আদিবাসীরা কী তাদের পৈত্রিক ভিটাতে ফিরে যেতে পারবে! যে মাটিতে পূর্বপুরুষদের নাড়িপোতা রয়েছে, অস্থিমজ্জা রয়েছে; মাটির সাথে সখ্যতা গড়ে উঠেছে যুগ থেকে যুগান্তে, আজ সেই মাটি থেকে উচ্ছেদ হওয়ার বেদনা, রক্তক্ষরণকে উপলব্ধি করতে হয়। সোম বেসরা জানাচ্ছিলেন, কয়েক দিন হলো লুট করে নিয়ে যাওয়া ছাগল ও অন্যান্য জিনিসপত্র কিছু লোক ফেরত দিয়ে গেছে। তাদের সাথে কোনো কথা হয়নি তবে নীরবে দিয়েই চলে গেছে। তবে এখনও আমাদের জমি দখল করে আছে। বর্ষা মৌসুমে ৬/৭ বিঘাতে ধান রোপণ করি, অনেক টাকা খরচ করেছি; বর্তমানে হিমু নামের একজন জমিগুলো দেখভাল করে আসছে। তিনি অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর বাদলের নিকটাত্মীয়। স্থানীয়দের ধারণা, এই সাবেক সেনা কর্মকর্তায় জমিজমা দখল, বসতভিটা থেকে উচ্ছেদের নক্সার কলকাঠি নড়াচ্ছে। বিশেষত এই সেনা কর্মকর্তা আদিবাসীদের উচ্ছেদ ও দখলের নেশায় মত্ত হয়ে উঠেছেন। বসবাসকারী বাকী ছয়টি আদিবাসী সাঁওতাল পরিবার এখন আতঙ্কে রয়েছেন, এই বুঝি আবারও উচ্ছেদ কিংবা মৃত্যুর মতো পরোয়ানা হাজির হয়। গ্রামের প্রতিটি মানুষের অবয়বে রয়েছে অনিশ্চয়তা জীবনের হাতছানি। এভাবে তো থাকা যায় না, তারা ন্যায়পূর্ণ বিচারের প্রত্যাশা করেছেন।
বিরল, কাহারোল, বীরগঞ্জ হয়ে দূরবর্তী আত্রাই নদীর তীরবর্তী দিয়ে ছুটে চলেছে আমাদের মোটরসাইকেল, মাঝে মাঝে ভাদ্রের আকাশে হালকা বৃষ্টি; আবার রৌদ্রজ্জ্বল ঝলমলে আকাশ। রেভা. রবিন সরেনের পূর্ব থেকেই এলাকায় যাতায়াত রয়েছে, তিনিই আমাদেরকে নেতৃত্ব দিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়ল কামিশনগর আদিবাসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। দেরী না করে দ্রুত ঢুকে পড়লাম বিদ্যালয়ে বাউন্ডারিতে, দেখা হলো প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মালেক সাহেবের সাথে। বিদ্যালয়ের সম্মুখে ছবি তুলতে তুলতে প্রধান শিক্ষক জানাচ্ছিলেন, আদিবাসীরা শিক্ষা-দীক্ষায়, অধিকার আদায়ে কিংবা ঐক্যবদ্ধভাবে জীবনযাপনে অনভ্যস্ত। গ্রামের আদিবাসী ছেলেমেয়েদের উচ্চ শিক্ষার দিকে ঝোঁক কম, কোনো রকমে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠ মাড়িয়েছে; এটিই মনে হয় তাদের জীবনের চূড়ান্ত স্বপ্ন। উচ্ছেদ হওয়া মুংলু বেসরার বিষয়ে তারও কষ্ট অনুভূত হয়, কেননা মুংলু নিরক্ষর হলেও ভালো মনের মানুষ ছিলেন। তার ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে নিঃশেষ ও এলাকা ছাড়া করার বিষয়টিকে তিনি সমর্থন করেন না। কখনো কখনো উপলব্ধিয় হয় যে, সংখ্যালঘু হিসেবে জন্মগ্রহণ যেন অন্যের কৃপায় বেঁচে থাকা, অন্যের দয়ায় টিকে থাকা; একজন নাগরিক হিসেবে অধিকার ও সম্মান, যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতার কোনোই মূল্য নেই।
দিনাজপুরের বিরল উপজেলার পিপল্লা গ্রামে পরিদর্শনে গমন করি, তখন সকাল প্রায় সাড়ে ১০ ঘটিকা। রাস্তার পাশে থাকা একজন নারীকে জিজ্ঞাস করি, এটিই কি পিপল্লা? উত্তরে হ্যাঁ বলতেই প্রশ্ন করি, আপনি কি সাঁওতাল? মাতৃভাষায় তাদের সাথে কথোপকথন হওয়ায় সাবলীলভাবে ভাবের আদান-প্রদান সম্ভবপর হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন পরমুহূর্তেই একদল উগ্রবাদী মুসলিম পিপল্লা খ্রিষ্টান গ্রামে এসে হুঁশিয়ারি দিয়ে যান যে, বিকেল ৩ ঘটিকার মধ্যে নিজ নিজ ঘরের আসবাবপত্র, জিনিসপত্র, ঘরের চাল প্রভৃতি নিরাপদে সরিয়ে না নিলে, তোমরা কেউই তোমাদের জিনিসপত্র পাবে না। আমরা এসে যদি দেখি কিছুই হয়নি, তাহলে সবকিছু লুট করে ও অগ্নিসংযোগ করে তোমাদের নিশ্চিহ্ন করা হবে। সত্যিই ৬ আগস্ট চিহ্নিত লোকজন দলবল নিয়ে পিপল্লা আদিবাসী খ্রিষ্টান পল্লীতে সশস্ত্র হামলা চালায়। আদিবাসী খ্রিষ্টানুসারীরা কতক নিজ থেকেই জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়েছিল; আর বাকীগুলো এসেই সংঘবদ্ধভাবে হামলা ও লুটপাট শুরু করে। আমাদের কান্নাকাটি ও বাঁচার আকুতিতে পুরো এলাকা অস্থির হয়ে ওঠে। ঠিক এই সময়ই পার্শ্ববর্তী গ্রামের বৃহত্তর সম্প্রদায়ের কতক লোকজন আদিবাসী সাঁওতাল খ্রিষ্ট বিশ্বাসীদের পক্ষাবলম্বন নিলে দলবল নিয়ে আসা লোকজন ক্ষান্ত হয়ে এক সময় স্থান ত্যাগ করে। দরিদ্র, অসহায় ও প্রান্তিক পর্যায়ের আদিবাসী খ্রিষ্টান নারী-পুরুষরা বিশ্বাস করেছেন, সেদিন প্রতিবেশীর আগমন স্বয়ং পিতা ঈশ্বরই তাকে উদ্বুদ্ধ করেছে। দিনাজপুর বিরল উপজেলার পিপল্লা গ্রামের আদিবাসী খ্রিষ্টান সাঁওতাল সম্প্রদায়ের ১০-১৫টি বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে চিহ্নিত দুর্বৃত্তরা; খবর শোনার পর ১৩ আগস্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছেন। সমস্যা জমি-জমা, কেউ বলেছেন খাস জমি; অন্যরা বলছেন, মালিকানা। মালিক হিসেবে দাঁড়িয়েছেন, উপজেলার তৈয়রপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম, তরিকুল ইসলাম ও রফিকুল ইসলামরা; তাদের পিতা মৃত গফুর মোহাম্মদ শাহ জমিটি ভোগ দখল করে আসছিলেন। খাস জমির প্রাপ্য মালিকানা ভূমিহীন ও অসহায় ব্যক্তিদের; আর সেই কাজটি সম্পাদন করেছিলেন স্থানীয় ভূমি অফিসের তহসিলদার। বোধ করি, স্থানীয় প্রশাসন ও জনসাধারণ সম্মতিতেই আদিবাসী খ্রিষ্টান পরিবারগুলো ঘরবাড়ি নির্মাণ করতে পেরেছিলেন। এখন সেখানে একটি দুটি করেই ৪০টি আদিবাসী সাঁওতাল, ভূঞ্জার খ্রিষ্টান পরিবার ২০১৩ থেকে বসবাস করছে। অনুমেয় যে, প্রয়াত গফুর মোহাম্মদের চার সন্তান নিশ্চিত জমি হারানোর বেদনা কাটিয়ে উঠতে পারেননি; পৈত্রিক সম্পত্তি না হলেও পিতার দেখভালে থাকা জমিকে করায়ত্ব করতে সরকার পরিবর্তনের ঝাপটায় আদিবাসীদের নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছেন। নজরুল ইসলামের মতানুযায়ী, জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। উপজেলার ইউএনও বহ্নিশিখা বলেছেন, ‘‘সাঁওতালদের বাড়িঘর ভাঙচুরের বিষয়টি জানতে পেরে থানার কর্মকর্তা ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। সেখানে জমির মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল। তাঁদের আতঙ্কিত না হওয়ার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে উপজেলা ভূমি কর্মকর্তাকে বিষয়টি তদন্তের জন্য বলা হয়েছে।’’ আদিবাসীরা এখন আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন, পুনর্বার হামলার ভয় তাদেরকে তটস্ত করে তুলেছে। দিন-রাত পালাক্রমে ডিউটি করে, এভাবে তো জীবন চলতে পারে না। সাঁওতাল নারী দিপালী রানী হাঁসদা বলেন, ‘‘কয়েক দিন ধরে রাতে ঘুমাইতে পারি না। রাত জেগে পাহারা দিচ্ছি। ৪০টি পরিবার আমরা এখানে বসবাস করছি। সরকারি নাকি পরিবর্তন হয়েছে। এখন নামি আমাদের উচ্ছেদ করার সুযোগ। ওই দিন আমরা কাজে গেছিলাম। এই সুযোগে আমাদের বাড়িঘর ভেঙে দিয়েছে। আমরা যাব কোথায়?’’ এই প্রশ্ন শুধু দিপালীর নয়, সমগ্র উত্তরবঙ্গের আদিবাসীদের; আদিবাসীদের ওপর উর্পযুপরি আক্রমণ, আতঙ্ক ও রাজনৈতিক দলগুলোর অবহেলায় সকলের প্রশ্ন—আদিবাসী ও আদিবাসী খ্রিষ্টানদের ঠাঁই এই বাংলায় হবে তো!
পিপল্ল আদিবাসী খ্রিষ্টান গ্রামে নতুন নিয়মের মণ্ডলী ২০১৬ সালে গির্জাঘর নির্মাণ করেছে। গির্জাঘরের সামনেই দীর্ঘ সময় কথা শ্রবণ করেছি। পিপল্লা থেকে ফেরার পথে বেশ অনেক দূর পর্যন্ত দিপালী রানী হাঁসদা আমাদের সাথে সাথে আসছিলেন। অতঃপর এক সময় ঠাঁই দাঁড়িয়ে বললেন, “ আমরা নিরক্ষর, সহজ-সরল মানুষ; আইন-আদালতের মারপ্যাঁচ বুঝি না, আমরা শুধুমাত্র বেঁচে থাকবার মতো বসত ভিটা চেয়েছি। স্বর্গস্থ ঈশ্বর নিশ্চয়ই আমাদের প্রার্থনা শ্রবণ করবেন, আপনারাও আমাদের জন্য প্রার্থনা করবেন। ন্যায়বান ঈশ্বরই একমাত্র ন্যায্য বিচারক, তিনিই আমাদের শেষ ভরসার স্থল।’’