• প্রচ্ছদ
  • সারাদেশ
    • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • শিক্ষা
    • পড়াশোনা
    • পরীক্ষা প্রস্তুতি
  • সাহিত্য পাতা
    • গল্প
    • ইতিহাসের পাতা
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা ও ছড়া
  • খেলাধুলা
    • ক্রিকেট
    • ফুটবল
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
    • আউটসোর্স
  • জীবনযাপন
    • ঘর ও গৃহস্থলী
    • স্বাস্থ্য
    • বিনোদন
    • ভ্রমণ
    • রেসিপি
    • ধর্ম-দর্শন
    • ফিচার
  • অন্যান্য
    • বিশ্ব রাজনীতি
    • কলাম
    • কৃষি
    • মতামত
    • বড়দিনের বিশেষ লেখা
No Result
View All Result
শনিবার, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৩
  • প্রচ্ছদ
  • সারাদেশ
    • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • শিক্ষা
    • পড়াশোনা
    • পরীক্ষা প্রস্তুতি
  • সাহিত্য পাতা
    • গল্প
    • ইতিহাসের পাতা
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা ও ছড়া
  • খেলাধুলা
    • ক্রিকেট
    • ফুটবল
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
    • আউটসোর্স
  • জীবনযাপন
    • ঘর ও গৃহস্থলী
    • স্বাস্থ্য
    • বিনোদন
    • ভ্রমণ
    • রেসিপি
    • ধর্ম-দর্শন
    • ফিচার
  • অন্যান্য
    • বিশ্ব রাজনীতি
    • কলাম
    • কৃষি
    • মতামত
    • বড়দিনের বিশেষ লেখা
Somoyer Bibortan
No Result
View All Result

সুবর্ণ জয়ন্তী—রাষ্ট্রের ব্যর্থতা, জাতির লজ্জা এবং আদিবাসীদের ক্ষোভ ● মিথুশিলাক মুরমু

সুবর্ণ জয়ন্তী—রাষ্ট্রের ব্যর্থতা, জাতির লজ্জা এবং আদিবাসীদের ক্ষোভ ● মিথুশিলাক মুরমু

Admin by Admin
ডিসেম্বর ১৬, ২০২২
in ইতিহাসের পাতা, প্রচ্ছদ, মতামত
0 0
0
সুবর্ণ জয়ন্তী—রাষ্ট্রের ব্যর্থতা, জাতির লজ্জা এবং আদিবাসীদের ক্ষোভ ● মিথুশিলাক মুরমু
0
SHARES
96
VIEWS
Share on FacebookShare on Twitter

RelatedPosts

নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম আবারও বাড়লো

অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন আজ

দীর্ঘ ১০বছর পর চালু হলো অভয়নগর-ভবদাহ ২১ ব্যান্ড-সুইচ গেটের পানি সেচ

আমার মতো দেশবাসীর অনেকেই হয়ত বিভ্রান্তিতে পড়ে থাকেন, স্বাধীনতা যুদ্ধ—মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে পার্থক্য কি আদৌ আছে! তবে যারা সত্যিকারভাবে একটু চিন্তা করেন, সহজেই পরম্পরা শব্দ দুটির অর্থগত ও ইতিহাসগত বৈসাদৃশ্য খুঁজে পাবেন। স্বাধীনতা যুদ্ধ হচ্ছে—১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের পরবর্তীকালে যে সময়ে আমরা উপলব্ধি করেছি ভূখণ্ডগতভাবে স্বাধীন হলেও, অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিকভাবে চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছি এবং সেই লক্ষ্যে আন্দোলনের সূত্রপাতই হলো স্বাধীনতার রোপিত বীজ। স্বাধীনতা আন্দোলনের সমাপ্তি হয়েছে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করলেন, ‘ইহাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন…’। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১০ই এপ্রিল মুজিবনগর সরকার কর্তৃক জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে— ‘…বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করণার্থে, সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্ররূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করিলাম এবং তদ্বারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ইতিপূর্বে ঘোষিত স্বাধীনতা দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করিলাম… আমরা আরও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতেছি যে, স্বাধীনতার এই ঘোষণাপত্র ১৯৭১ সনের ২৬ শে মার্চ তারিখে কার্যকর হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।’ অপরদিকে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল হচ্ছে নয় মাস, ২৬ শে মার্চ হতে ১৬ ডিসেম্বর। মাতৃসম দেশকে পাকিস্তানী শত্রুসেনার কবল থেকে মুক্তির লক্ষ্যে লড়াই, ১৬ ডিসেম্বর ৯৩ হাজার সৈন্য সমেত পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর জেনারেল নিয়াজী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হোন। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জেএফ আর জ্যাকব।
স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘটনাবলীতে অর্থাৎ ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ আগষ্ট থেকে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ পূর্ব পর্যন্ত ৭টি মাইলফলক ঘটনা ঘটেছে—ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, সংবিধান রচনা, শিক্ষা আন্দোলন, ৬ দফা, গণঅভ্যুত্থান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ। এই সংগ্রাম আন্দোলনে আদিবাসীদের অংশায়নকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখা যাবে না। আদিবাসী সাঁওতাল এমএলএ শ্রী জীবন কিস্কু (সিলেট থেকে ২ বার—১৯৪৬ ও ১৯৫৪ খ্রি.) এবং শ্রী সাগরাম মাজহী (রাজশাহী থেকে একবার ১৯৫৪ খ্রি.) থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ভাষা আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোতে কিংবা পরবর্তীকালের শোষণ ও বঞ্চনা, অধিকার আদায়ের আন্দোলনগুলোতে সোচ্চার হওয়ার কথাগুলো শ্রবণ করেছি। শ্রী জীবন সাঁওতাল (কিস্কু) আসামের সংসদে চা শ্রমিকদের অধিকার বিষয়ে বক্তব্যের পরই তার ঘরবাড়ি আগুনে জ্বালিয়ে তাকে উদ্বাস্তুতে পরিণত করা হয়েছিল। দেশের ও জনসাধারণের অধিকার রক্ষার্থে তাদের কণ্ঠ ছিল সোচ্চারিত।
উত্তরবঙ্গে সাঁওতাল মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক হিসেবে যার নাম উঠে আসে, তিনি হলেন সাগরাম মাজহী (হাঁসদা)। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট থেকে মেম্বার অব লেজেসলেটিভ এসেম্বলি (এলএমএ) সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় অনেক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠেছিল। জাতীয় চার নেতার অন্যতম কামরুজ্জামানের রাজনৈতিক জীবনের সহকর্মীও ছিল সাগরাম মাজহী। হাজার হাজার সাঁওতাল শরণার্থী হিসেবে আশ্রিত ক্যাম্পগুলোতে ঘুরে ঘুরে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করেছেন দেশ মাতৃকার লড়ায়ে। অনেক মুক্তিযোদ্ধারা তাঁর দেশপ্রেম ও দেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার কথা জানিয়েছে। তিনি সাঁওতালসহ আদিবাসীদের বুঝাতে পেরেছিলেন বলেই যুদ্ধের অগ্নিকুণ্ডে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল শতশত সাঁওতালসহ আদিবাসী যুব।
রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ না হলেও, তিনি আদিবাসীদের দুঃখ-দুর্দশা, বৈষম্য, বঞ্চনা দেখার পরই রাজনীতিকে আলিঙ্গন করেছেন; রাজনৈতিক চিন্তা চেতনায় সমৃদ্ধ হয়েছিলেন। উত্তরবঙ্গে তেভাগা আন্দোলনের সূত্রপাত হলে তিনিও জড়িয়ে পড়েন। কিংবদন্তি নেত্রী সাঁওতালদের ‘রানী মা’ খ্যাত ইলা মিত্রেরও ছোঁয়া পেয়েছিলেন সাগরাম। সাঁওতালী ভাষায় বক্তৃতা দিয়ে আদিবাসী সাঁওতালসহ অন্যান্যদের উৎসাহিত, উজ্জীবীত করেছেন। এক সময় সরকারের রোষানলে পড়ে ধরা পড়েন এবং কারাবরণও করেন। ১৯৪৭-৫০ খ্রিষ্টাব্দের ঐতিহাসিক নাচোল বিদ্রোহ সরকারের সশস্ত্র ও কঠোর দমননীতির ফলে আদিবাসী সাঁওতালরা ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সাগরাম হাঁসদাও (মাজহী) আত্মগোপনে চলে যান। নাচোল বিদ্রোহের প্রথম পর্ব সম্পকে ইতিহাসে বর্ণনা রয়েছে, সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জমিতে চাষ করতে হতো, কৃষকেরা জমিচাষ করে যেটুকু ফসল পেতেন তা থেকে কম করেও ১৫ রকমের কর দিতে হতো জমিদারকে। হাটে ফসল বিক্রি করতে কর, হাটতোলা, তোলবাটি, সেলামী, নজরানি, কাকতাড়ানি, খামার চাছানি ইত্যাদি কর। অর্থাৎ জমিদারের সঙ্গে দেখা করতে গেলে আগে সেলামী দিতে হবে, জমিদারের খামার পরিষ্কার হবে সেজন্য কর দিতে হবে, ছেলে হলে কর দিতে হবে, জমিদারের লেঠেলবাহিনী পোষার জন্য কর দিতে হবে ইত্যাদি। কৃষক যা ফসল পেত সেটার প্রায় সবটাই কর দিতে চলে যেত। আর কৃষক তার পেট চালানোর জন্য ধার করত। একটা কর ফাঁকি হলেই নির্মম অত্যাচার। তেভাগা আন্দোলনে সাঁওতাল কৃষকদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল। পশ্চিম দিনাজপুর বালুরঘাট শহরের কাছে খাঁপুরে যে সংঘর্ষ হয়েছিল, তাতে পুলিশের গুলিত নিহত ২২ জন কৃষকের মধ্যে ৯ জনই সাঁওতাল, বাকী কৃষকরা ছিলেন রাজবংশী এবং মুসলমান। তে ভাগা আন্দোলনের প্রথম শহীদ হন চিরিরবন্দরের সাঁওতাল শিবরাম এবং সমীরউদ্দিন; পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যান।
মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শ্রী সাগরাম মাজহী সম্পর্কে বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ আফজাল হোসেন ছবি ‘রাজশাহীতে প্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন’ প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘২৩ মার্চ রাজশাহী আদালত ভবনের সামনে উপস্থিত হয়েছিরেন হাজার হাজার ছাত্র-জনতা-সাধারণ মানুষ। সবার সামনে আমি আদালত ভবনের ছাদে উঠে সেখানে ওড়ানো পাকিস্তানের পতাকা টেনে নামিয়ে তাতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলি। তারপরই আমি উত্তোলন করি স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা।…সবকিছু চলছিল রাজশাহীর আওয়ামী লীগ/ন্যাপ নেতাদের নির্দেশে। আর রাজশাহীর নেতারা নির্দেশ পাচ্ছিলেন ঢাকা থেকে। সেই উত্তাল দিনগুলোতে রাজশাহীর সবচেয়ে সিনিয়র নেতা ছিলেন এএইচএম কামারুজ্জামান। তিনিও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। ঢাকায় থেকে তিনি সব নির্দেশ পাঠাতেন রাজশাহীর নেতাদের কাছে। সেই নির্দেশ অনুযায়ী রাজশাহীর সব আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালনা করতেন স্থানীয় নেতারা। স্থানীয় নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে সিনিয়র ছিলেন এম আতাউর রহমান। তিনিই পুরো আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করতেন। এছাড়াও আরও অনেকে ছিলেন তার সঙ্গে। যেসব নেতা সেই উত্তাল দিনগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, রাজশাহীর পুরো আন্দোলন এগিয়ে গেছেন তাদের মধ্যে ছিলেন আয়কর উকিল আবদুস সালাম, বদিউজ্জামান টুনু, মজিবুর রহমান, মোখলেসুর রহমান মুুকুল, অ্যাডভোকেট আবদুল হাদি, মহসিন প্রামাণিক, শফিকুর রহমান বাদশা, সাইদুল হক, স্বপন কোরেশী, মুস্তাফিজুর রহমান গামা, ডা. আব্দুর রশিদ টুকু, সৈয়দ আমির হোসেন স্পেন, মনিরুজ্জামান মনি, মিয়া মহসিন, অ্যাডভোকেট আবদুর রাজ্জাক, ডা. আবদুল গাফ্ফার, নজরুল ইসলাম (চাঁপাইনবাবগঞ্জ), আবদুল রউফ, মোস্তাফিজুর রহমান খান আলম, আবুল হাসনাত, মো. জামিলুর রহমান (জামিল স্যার), মতিউর রহমান, আবদুল কুদ্দুস, ফজলে হোসেন বাদশা, সিকান্দার আবু জাফর, ওবায়দুর রহমান, খায়রুল আনাম নোমান এবং সাগরাম মাঝি প্রমুখ।’
শ্রী সাগরাম মাজহীর পরিবারের কনিষ্ঠ সন্তান সুধীর চন্দ্র মাজহী মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনা হিসেবে সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। সাগরাম মাজহীর (হাঁসদা) কন্যা শান্তিরাণী হাঁসদা। যুদ্ধকালীন সাগরামের পরিবারটি ভারতের লালগোলায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। শান্তিরাণী হাঁসদা লালগোলার মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে রান্না-বান্নার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে ক্যাম্পের রান্নাবান্না তত্ত্বাবধান ও তদারকি করতেন। এভাবে তিনি মুক্তিযুদ্ধে সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন। এই মুক্তিযোদ্ধা সংগঠকের নামে রাজশাহী শহরে একটি রাস্তাও নামকরণ করা যায়নি; মেলেনি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিও।
জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে আদিবাসীদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার হার বেশ ঊর্ধ্বেই রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ, পঙ্গুত্বের শিকার হয়েছেন; অনেকে গেজেটভুক্ত হয়েছে, আবার কেউ কেউ ৫০ বছরেও নিজেদেরকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। জানা যায়, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারদের অসহযোগিতা, রাজনৈতিক মতাদর্শগত কোন্দল এবং পারস্পারিক দ্বন্দ্ব প্রভৃতির কারণে রাষ্ট্রীয় সুবিধাদি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। বীরমুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিতকরণে সরকার, রাষ্ট্র চরমভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধারা হতাশায়, ক্ষুব্ধতায় নিজের কপালের দিকে অঙ্গুলি তুলে ধরে থাকে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা যোসেফ টুডু স্বীকৃতিহীন মুক্তিযোদ্ধা। জানালেন—যুদ্ধকালীন সময়ে দেশ ত্যাগ, প্রশিক্ষণ, অস্ত্র চালানো, দেশের অভ্যন্তরে অপারেশনে যোগদান, সার্টিফিকেট হারিয়ে যাওয়া, স্থানীয় মুক্তিযুদ্ধ সংসদ কর্তৃক অসহযোগিতা এবং ভাতাহীন জীবন সংগ্রাম তাঁকে হতাশ করে তুলেছে। তার পুত্র সন্তান রতন টুডু তির্যক প্রশ্নে আমাদেরকেও অপ্রস্তুত করে তোলে। অষ্টাদশী যুবক যোসেফ টুডু গোদাগাড়ীর নবাই বড়তলাতে মা-বাবা নিয়ে থাকতেন। শুরু হলো মহান মুক্তিযুদ্ধ। অনেকের সাথেও যোসেফও সীমান্ত পার হয়ে আশ্রয় নিলেন শরণার্থী শিবিরে। অতঃপর গৌড়বাগান মুক্তিবাহিনী প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। সেখান থেকে আরো উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য প্রেরণ করা হলো পানিহাটাতে এবং সর্বশেষ তরঙ্গপুরে অস্ত্র হাতে তুলে দেওয়া হয়। অনেকের সাথে তিনিও পৌঁছেছিলেন গোদাগাড়ীর আদাড়পাড়াতে। আশপাশের অনেক জায়গায় সম্মুখ যুদ্ধে মুখোমুখি যোসেফ টুডু এখন স্মৃতিকেই ফেরি করে চলেছেন। যুদ্ধের পরিসমাপ্তিতে হাতে পেয়েছিলেন মূল্যবান সার্টিফিকেট। এরপর পদ্মার জল গড়িয়েছে অনেক, যৌবনের গান শোনাতেই বিয়ের পিড়িতে বসলেন, তিনি ঘর জামাই হয়ে আসলেন আদাড়পাড়াতে। সত্যিই সংসার জীবনের বিশৃঙ্খলাই হারিয়েছেন জীবনের স্বীকৃতি, দুঃস্বপ্নের কালো অধ্যায়ে ছেয়ে গেছে সূর্যের প্রখর রৌদ্র। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় ও প্রমাণ দিতে হচ্ছে বারং বার। একজন নিরীহ আদিবাসী সাঁওতাল মুক্তিযোদ্ধা স্থানীয় প্রশাসনের অবহেলায় ধুঁকে ধুঁকে, খুড়িয়ে খুড়িয়ে জীবনযাপন করবে এটি তো কখনোই প্রত্যাশিত নয়! গোদাগাড়ীর স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমা-ার কার্যালয়ে ধর্না দিয়েছেন অনেকবার, কমান্ডার মহোদয় নানা অজুহাতে যোসেফ টুডুকে ফিরিয়েছেন বার বার। তাকে সহযোগিতার পরিবর্তে নিরুৎসাহিত করেছেন; এক প্রকার ভয় দেখিয়েছেন। কে তোমার পক্ষে সাক্ষ্য দেবে; কে তোমার পাশে দাঁড়াবে ইত্যাদি। তুমি তো তোমার সার্টিফিটেক হারিয়েছো; এটি আর পাওয়া যাবে না, তুমি আর পাওয়ার যোগ্য নও প্রভৃতি হতাশজনক বাক্যে জর্জরিত হয়ে প্রত্যাবর্তন করেছেন। দুঃখে, ভারাক্রান্ত মনে আক্ষেপের সুরেই বললেন, পকেটের পয়সা খরচ হয়েছে, পায়ের স্যান্ডেল ফুটো হয়েছে কিন্তু কমান্ডার মহোদয় আমার আবেদনকে গ্রাহ্যই করলেন না। বিষয়টি নিঃসন্দেহে জাতির জন্য লজ্জার, দেশবাসীর জন্য মর্মদায়ক।
বার্নাবাস হাঁসদা এখন বসবাস করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর মিশনে। মহান মুক্তিযুদ্ধের অগ্নিশিখা তাকেও ছুঁয়েছিল। ২৫ মার্চ কালো রাতে পাক-বাহিনীর বর্বরতাকে ছাপিয়ে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা দিলে বার্নাবাস ঘর থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী ভারতে উপস্থিত হয়েছেন। সময়টি ছিল এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধে। খুঁজে পেয়েছিলেন তার মতো সোৎসাহী বেশ কয়েকজন দেশপ্রেমিককে। মে মাসের শেষান্তে দলবল নিয়ে মালন বাহ বাইল ইউথ মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে নাম লিখিয়েছেন। অতঃপর জুন মাসের শেষ দিকে বিহারের চাকুলিয়ায় বিশেষ প্রশিক্ষণ শেষে মালন ক্যাম্পে প্রত্যাবর্তন করে। এখান থেকেই সোজা রণাঙ্গণে, পীরগঞ্জ-বোচাগঞ্জ অঞ্চলটিতে ডিফেন্সের সহযোগী হিসেবে। ’৭১-এর ডিসেম্বর মাসের প্রথমার্ধে মিত্র বাহিনী (ইন্ডিয়া আর্মি) দ্বারা বার্নাবাসদের দলটি রিক্রুট হয়ে সর্বাত্মক যুদ্ধে দিনাজপুরের কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত শত্রুমুক্ত করতে আগুয়ান হয়েছিলেন। পাকিস্তানীরা আত্মসমর্পণ করলে বিজীয় বেশে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসে। বীরমুক্তিযোদ্ধা বার্নাবাস হাঁসদা, মাইকেল মুরমু, মানুয়েল দীলিপ বেসরা, আলেকজা-ার সরেন, মঙ্গল হাঁসদা, ফ্রান্সিস টুডু, লুংকিনুস টুডু, সেবাষ্টিয়ান টুডুরা যুদ্ধের সৈনিক হিসেবে শত্রুসেনাদের উৎখাতে জীবন বাজি রেখেছিলেন। প্রতিদানে রাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি দিতে কার্পণ্যবোধ করে চলেছে। বীরযোদ্ধা মাইকেল, আলেকজান্ডার, মঙ্গল দেহত্যাগ করেছেন, তাদের উত্তসূরীদের কাছে মুক্তিযোদ্ধা হলেও; রাষ্ট্রের দৃষ্টিতে একজন সাধারণ মানুষ। এরূপ অনেক আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতিহীনভাবেই ইহলোক ত্যাগ করেছেন। দু-একজন উত্তসূরীর উপলব্ধি হচ্ছে, তারা কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা চাই না কিন্তু দেশের পক্ষে লড়াইয়ের স্বীকৃতি তো বড়ো কোনো প্রত্যাশা নয়! স্বীকৃতির লড়াইয়ে আদিবাসীরা রাজনৈতিক ক্রীড়ানকে পরিণত হয়েছে।
জানা যায়, দেশ স্বাধীন হবার পর মুক্ত আলো-বাতাসের বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধাদের স্থান সংকুলান করতে পারেনি। নিরাপত্তাহীনতায়, পারস্পারিক দ্বন্দ্ব, অভাবের তাড়নায় নীরবে-নিভৃতে সীমান্ত অতিক্রম করেছে রহনপুরের মুক্তিযোদ্ধ মানুয়েল দীলিপ বেসরা, কাঁকনহাট ঝিনাফুলবাড়ির ভীম হেমব্রম, রংপুরের বুদু উরাঁওসহ আরো অনেকে। যে দেশের জন্য পরিবারের মায়া ত্যাগ করে, মৃত্যুভয়কে উপেক্ষা করে অস্ত্র হাতে নিয়েছিল; স্বপ্ন ধরা দিলেও দেশ তাদের প্রয়োজন অনুভব করেনি। হয়ত তাদের বিশ্বাসটিই সত্যি কিংবা নয় কিন্তু ৫০ বছর পরেও যে মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতির লক্ষ্যে, এটিকে কীভাবে বিচার করবেন? বীরযোদ্ধাদের দেশ ত্যাগের বিষয়টি খতিয়ে দেখার দাবি রাখে।
ব্যক্তিগতভাবে বহু বীরমুক্তিযোদ্ধার সাথে কথা বলেছি, ঘটনা প্রবাহে প্রাপ্ত সার্টিফিকেট ও আনুষাঙ্গিক কাগজ-পত্র বেহাত হয়ে গেছে, হারিয়ে গিয়েছে। সবচেয়ে বড়ো তো তাদের স্মৃতিশক্তি, সহযোদ্ধা, ঘটনার বিবরণ ইত্যাদি; তারপরও আদিবাসী যোদ্ধাদের বঞ্চনার শিকার ও উপেক্ষিত হতে হচ্ছে। কী নিদারুণ, কী কষ্টের, যন্ত্রণার অভিব্যক্তি। অথচ আমার দেশের সচিবরা, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দেশদ্রোহী কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত থাকার পরও বীর মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট পয়দা করে চাকুরির মেয়াদ বাড়ানো, সুযোগ-সুবিধা করায়ত্ব করেছে। অতঃপরও সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তদের টনক নড়েনি, তাদেরকে কাঠগোড়ায় দাঁড় করানো হয়নি, কর্ণকুম্ভের ঘুম যেন অনন্তকালস্থায়ী। মুক্তিযুদ্ধ এখন সুযোগ সন্ধানীদের হাতিয়ার, রাজনৈতিক এজেন্ডা এবং সরকারের চেতনা।
অনগ্রসর, পিছিয়েপড়া জাতিগোষ্ঠীর মুুক্তিযোদ্ধারা প্রত্যন্ত অঞ্চলে রয়েছে, নেই তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, নেই তাদের মধ্যে দূরভিসন্ধি; রয়েছে সদা হাস্যজ্জ্বল মুখ ও হৃদয়ের বিশালতা। সে জন্যই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতির লক্ষ্যে অনশন করেনি, রাজপথে দাঁড়াননি; বরং সামাজিক সংগঠনগুলো অবহেলিত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা, ফুলেল শুভেচ্ছা ও ক্রেস্ট দিয়ে উজ্জীবিত করেছে। রাষ্ট্র দূরত্ব বজায় রেখেছে কিন্তু জনমানুষ জেনেছে তাদের বীরত্বের কাহিনী, ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং শত্রুমুক্ত করার দুঃসাহিক অবদান। তাহলে কেন সরকার উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হচ্ছে, সর্ষের মধ্যে ভূত থাকলে ভূত তাড়ানো দুঃসাধ্য ব্যাপার।
আদিবাসী স্বীকৃতিহীন মুক্তিযোদ্ধাদের দৃঢ়চেতা মনোভাব, অকুতভয় চেতনা, দেশপ্রেমের নির্দশন সত্যতা যাচাইয়ের দাবিকে আরো প্রাসঙ্গিক করে তোলে। সুবর্ণ জয়ন্তী সময়কালে পুনর্বার অনুসন্ধান করা আবশ্যিক। কারণ—
১। ভিত্তিহীন হলে একজন আদিবাসী সাঁওতাল মুক্তিযোদ্ধা কখনোই সাহসের সাথে, বলিষ্ঠভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে সাহস পাবে না;
২। আদিবাসী সাঁওতালরা মিথ্যা কথা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে ইস্তস্তবোধ করে; নীতি ও মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্য না হওয়ায় এড়িয়ে গিয়ে থাকে।
৩। অক্ষরজ্ঞান ও সহজ সরল হওয়ায় অবশ্যই তার মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও ঘটনাগুলোকে যাচাই করার দাবি রাখে।
৪। আদিবাসী সাঁওতালরা সরকার, রাষ্ট্র ও প্রশাসনকে যতদূর সম্ভব এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করে থাকেন; সেক্ষেত্রে একটি মৌলিক প্রশ্নে মুক্তিযোদ্ধা যোসেফ টুডু, বার্নাবাস হাঁসদা, মাইকেল মুরমু, মানুয়েল দীলিপ বেসরা, আলেকজা-ার সরেন, মঙ্গল হাঁসদা, ফ্রান্সিস টুডু, লুংকিনুস টুডু, সেবাষ্টিয়ান টুডুদের দাবিকে সম্মান জানাতে হবে;
৫। সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ও তাদের প্রতি সরকারের নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকেই পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যিক।
আদিবাসী পুরুষদের পাশাপাশি আদিবাসী নারীদেরও বীরত্বের অংশায়ন রয়েছে। রাজশাহী থেকে সিলেট, ঠাকুরগাঁও থেকে বান্দরবান আদিবাসী নারীরা বিশেষত সাঁওতাল নারীরা বীরাঙ্গনা হয়েছেন। দেশীয় দোসরদের প্ররোচণায় সহজ-সরল নারীরাও ছাড় পান নি। হবিগঞ্জের প্রয়াত হীরামনি সাঁওতাল, ঠাকুরগাঁওয়ের মনি টুডু, লক্ষী বেসরা, সীমা হেমব্রমরা অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে সরকারের নজরে আসে এবং স্বীকৃতিও মেলেছে।
মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে আদিবাসীরা গণহত্যার শিকার হয়েছেন কিন্তু আদৌ বধ্যভূমির স্বীকৃতি মেলেনি। ৫০ বছর পূর্বে আদিবাসী সাঁওতালরা তুলনামূলকভাবে স্বল্প হলেও তাদের দেশপ্রেম ছিল তুলনাহীন। পাকিস্তানী দোসরদের চোখে ঠিকই ধরা পড়েছিল আদিবাসীদের চেতনাগত উন্মাদনা। অত্যন্ত গোপনে প্রতিবেশীরাই গাদ্দারি করেছে, হত্যাকা-ের সঙ্গে যুক্ত থেকে সাঁওতালদের বিতাড়নের গোপন স্বার্থ হাসিলের শতভাগ সফল হয়েছে এই আল-বদর আল-শামস্রা।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ শে নভেম্বর নওগাঁ সাপহারের সৎপুর, পাইকবান্দা, হলাকান্দরের ৩৫ জন আদিবাসীকে ব্রাশফায়ার করে মারা হয়। ৩৫ জনের মধ্যে ৩৩ জনই ছিলেন সাঁওতাল সম্প্রদায়ের। একমাত্র বেঁচে যাওয়া মি. গুলু মুরমু ২৬ জনের পরিচয় দিতে পেরেছিলেন— শহীদ মুন্সি টুডু, পিতা-মঙ্গল টুডু; শহীদ যোনা টুডু, পিতা- অদগ টুডু; শহীদ মাংগাত মাজহী সরেন, পিতা-জপলা সরেন; শহীদ বয়লা হাঁসদা; শহীদ বার্নার্ড সরেন, পিতা-লেদেম সরেন; শহীদ সুফল হেমরম, পিতা-যিতু হেমরম; শহীদ বুদু হেমরম, পিতা-বাকা হেমরম; শহীদ সরকার মুরমু, পিতা-সম মুরমু; শহীদ মিস্ত্রী সরেন; শহীদ সবান; শহীদ ধুদু মুরমু, পিতা বাগরেদ মুরমু; শহীদ রবিকান্ত বর্মন, পিতা-পানু বর্মন; শহীদ মাতলা মুরমু, পিতা-বড়হাল মুরমু; শহীদ কবিরাজ মুরমু, পিতা-মাতলা মুরমু; শহীদ মদন মুরমু, পিতা-মাতলা মুরমু; শহীদ ভূতু সরেন; শহীদ বুধরাই টুডু; শহীদ যাদু মুরমু; শহীদ হারা সরেন; শহীদ মশাই সরেন; শহীদ চুড়কা টুডু; শহীদ সুফল হেমরম; শহীদ পাত্রাস; শহীদ যোষেফ; শহীদ জেঠা হাঁসদা। মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তীকালে এই আদিবাসী গ্রাম দুটি-পাইকবান্দা, হলাকান্দর নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় দিনাজপুরের সদর থানার খোসালপুর গ্রামের ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। এলাকাবাসী পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে পার্শ্ববর্তী ফারাম হাট নামক জায়গায়। সেদিন সম্মুখ যুদ্ধে অনেক লোক শহীদ হয়েছিলেন। খোসালপুর গ্রামের আদিবাসী সাঁওতাল-কর্মকারদের মধ্যে রয়েছেন-শহীদ সোকারী মার্ডী, পিতা মৃত. নদীয়া মার্ডি; শহীদ চু-া মার্ডী; শহীদ বোদে বাসকে, পিতা মৃত চান্দারাই বাসকে; শহীদ লালু মার্ডী, পিতা মৃত. মদন মার্ডী; শহীদ বিনোদ কর্মকার, পিতা মৃত. ভগিরত কর্মকার; শহীদ গনেন্দ্র কর্মকার, পিতা-জিতু কর্মকার। সম্মুখ সমর থেকে এ গ্রামের প্রাণে বেঁচে রক্ষা পেয়েছেন-মুক্তিযোদ্ধা শ্রী নরেশ মুরমু, পিতা-মৃত. মঙ্গল মুরমু; মুক্তিযোদ্ধা শ্রী বাপই মুরমু, পিতা-কুমার মুরমু; মুক্তিযোদ্ধা শ্রী বাবু সরেন, পিতা-আশা সরেন; মুক্তিযোদ্ধা শ্রী চুড়কা মুরমু, পিতা- চপে মুরমু। এ দিন আদিবাসীদের মধ্যে আরো ছিলেন-মুক্তিযোদ্ধা শ্রী রামবাবু হেমরম, পিতা-বড়কা হেমরম, গ্রাম-সৈয়দপুর; মুক্তিযোদ্ধা শ্রী লক্ষণ মাজহী, পিতা-মৃত.ডাইলা মাজহী, গ্রাম-সৈদয়পুর (তালপাড়া); মুক্তিযোদ্ধা শ্রী মাইকেল হেমরম, পিতা-বাড়কা হেমরম, গ্রাম-পাঁচবাড়ী এবং মুক্তিযোদ্ধা বেঞ্জামিন সরেন, পিতা-মৃত. কানাই সরেন, গ্রাম-জপেয়া। মহান মুক্তিযুদ্ধে অন্যান্য নারীদের পাশাপাশি আদিবাসী নারী মিসেস নিরলা কিস্কু, স্বামী-কুড়িয়া, গ্রাম- বেলবাড়ি, সদর, দিনাজপুর পাকিস্তানী কর্তৃক শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন।
শহীদ নাডা হেমরম, টুনু মার্ডি, ধেরিয়া, জটু সরেন, কানু হাঁসদা নাটোরের বাঁশবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা। মুক্তিযুদ্ধে তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন ছিল এবং অনেকেই সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। তাদের সর্বোত্তম সহযোগিতার কথা পাকিস্তানী বাহিনীর দোসর আলবদর, রাজাকাররা জেনে গেলে হাজির হয় বাঁশবাড়িয়া গ্রামে। পাকিস্তানী সৈন্যরা নাডা হেমরমকে নিজ ঘর থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং অদূরে গুলি করে হত্যা করে। স্থানীয় রাঙামাটি মাঠে তুলে নিয়ে জবাই করে হত্যা করে মুক্তিযোদ্ধা টুনু মার্ডি, ধেরিয়া, জটু সরেন ও কানু হাঁসদাকে। তাদের কারোরই লাশের সন্ধান পাওয়া যায় নি। এর পরপরই প্রচ- ক্ষিপ্ত পাকিস্তানী সেনাবাহিনীরা গ্রামটিকে জ্বালিয়ে দেয়, অসহায় আদিবাসী লোকজন দিকবিদিক পালিয়ে যায়।
রাজশাহী গোদাগাড়ী থানার কাশিঘুটু (আমতলীপাড়া)র ১১ জন সাঁওতাল শহীদ হয়েছেন। স্থানীয় রাজ্জাক রাজাকারের প্ররোচনায় এপ্রিল মাসের দিকে হানাদার বাহিনী ধরে নিয়ে যায় এবং গুলি করে হত্যা করে। এরা হলেন-মানিক টুডু (২৬), পিতা-ুটরু টুডু; বাবলু হেমব্রম (৪০), পিতা-রাম হেমব্রম; হোপনা সরেন (৫০), পিতাÑরামসিং সরেন; মানিক সরেন (ষষ্ঠ শ্রেণীতে অধ্যয়তরত), পিতা-হোপনা সরেন; হারমু মুরমু (৭০), পিতা-খুনা মুরমু; মঙ্গলা মুরমু (দুই ভাই ছিলেন), পিতা-ঠোয়া মুরমু; মুটরু টুডু, পিতা-ছুতার টুডু, কিষ্টু মুরমু, ধনাই মার্ডী, মঙ্গল মুরমু, পিতা-মারাং মুরমু এবং বুসতি।
জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে মহান মুক্তিযুদ্ধে আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের শহীদ ৪ মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতির উদ্দেশ্যে ভাস্কর্য উন্মোচন করা হয়। বিগত ১৭ই ডিসেম্বর, ২০১১ জয়পুরহাট জেলার জেলা প্রশাসক অশোক কুমার বিশ্বাস আদিবাসীয় অস্ত্র হাতে নারী-পুরুষ ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করেন। এই চারজনই (শহীদ খোকা হেমরম, পিতা-লক্ষণ হেমরম; শহীদ মণ্টু হেমরম, পিতা-লক্ষণ হেমরম; শহীদ যোহন সরেন, পিতা-কালু সরেন; শহীদ ফিলিপ সরেন, পিতা-লক্ষণ সরেন) ছিলেন আদিবাসী সাঁওতাল অধ্যুষিত গ্রাম নন্দইলের। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো’ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সেই ৭ই মার্চের ভাষণের আহবানে সাড়া দিয়ে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিতে আদিবাসী নারী-পুরুষের প্রস্তুতির সেই চিত্রই ফুটে তোলা হয়েছে ভাস্কর্যটিতে। সরকারি ১৪ শতক জায়গায় ২১ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন ভাস্কর্যটি ধরঞ্জী ইউনিয়নের নন্দইল মিশন গ্রামের পাশে নির্জন মাঠে স্থাপন করা হয়েছে। এটি নির্মাণ করা হয় ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সভাপতি প্রফেসর আমিরুল মোমেনিন চৌধুরীর নেতৃত্বে ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেন রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের তৎকালীন প্রভাষক কনক কুমার পাঠক ও সহযোগী অধ্যাপক ড. একেএম আরিফুল ইসলাম। তাদের সহযোগিতা করেন ওই বিভাগের ৮-১০ শিক্ষার্থী। আর সেই থেকে ভাস্কর্যটি স্বাধীনতা যুদ্ধে আদিবাসী সাঁওতালদের বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রতীক হয়ে আছে।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার মহান মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্যাপন অব্যশই গর্বের বিষয়। তবে দেশের আনাচে-কানাচে অনেক আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতিহীন অবস্থায় জীবনযাপন করে চলেছেন; সেটি খতিয়ে দেখা দরকার। স্বীকৃতিহীন মুক্তিযোদ্ধার তালিকা যেন লম্বা না হয়। বাংলার গ্রামে-গঞ্জে পৌঁছালে অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সাক্ষাৎ ঘটে, যুদ্ধের বর্ণনায় নির্বাক হই কিন্তু পরক্ষণেই হতাশ হতে হয়। হতাশার মধ্যেও আশান্বিত হই ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকার আওয়ামী লীগ-এর নির্বাচনী ইশতেহারের ঘোষণায় উল্লেখ করেছেন—‘… দেশের সর্বত্র মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রক্ষা, ইতিহাস বিকৃতি রোধ এবং প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার জন্য বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধকালীন বধ্যভূমি ও গণকবর চিহ্নিতকরণ, শহীদদের নাম পরিচয় সংগ্রহ এবং স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে।’ আমরা প্রার্থনা করি, সরকারের দায়িত্ববানরা যেন দৃঢ়তার সাথে, দায়িত্বশীলতার সাথে কার্য সম্পাদন করে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে জাতির সামনে তুলে ধরতে সমর্থ হই।
মিথুশিলাক মুরমু: আদিবাসী গবেষক ও লেখক।

Previous Post

১৮ ডিসেম্বর শুরু ২০২৩ সালের এসএসসি’র ফরম পূরণ

Next Post

‘রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা অবাস্তব’—ইউক্রেন

Admin

Admin

Next Post
‘রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা অবাস্তব’—ইউক্রেন

‘রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা অবাস্তব’—ইউক্রেন

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ADVERTISEMENT

সময়ের বিবর্তন

সম্পাদকঃ
আবদুল মাবুদ চৌধুরী

বিভাগীয় সম্পাদকঃ
নায়েম লিটু

ফোনঃ ০২-৯০১১১৫৬ বাসাঃ -০৪, রোডঃ ০৪, ব্লক- এ, সেকশনঃ ০৬, ঢাকা -১২১৬

Our Visitor

0 0 7 5 9 9
Users Today : 12
Views Today : 19
Total views : 126808
Powered By WPS Visitor Counter

  • Setup menu at Appearance » Menus and assign menu to Footer Navigation

Developer Lighthouse.

No Result
View All Result
  • প্রচ্ছদ
  • সারাদেশ
    • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • শিক্ষা
    • পড়াশোনা
    • পরীক্ষা প্রস্তুতি
  • সাহিত্য পাতা
    • গল্প
    • ইতিহাসের পাতা
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা ও ছড়া
  • খেলাধুলা
    • ক্রিকেট
    • ফুটবল
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
    • আউটসোর্স
  • জীবনযাপন
    • ঘর ও গৃহস্থলী
    • স্বাস্থ্য
    • বিনোদন
    • ভ্রমণ
    • রেসিপি
    • ধর্ম-দর্শন
    • ফিচার
  • অন্যান্য
    • বিশ্ব রাজনীতি
    • কলাম
    • কৃষি
    • মতামত
    • বড়দিনের বিশেষ লেখা

Developer Lighthouse.

Login to your account below

Forgotten Password?

Fill the forms bellow to register

All fields are required. Log In

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In