পাগলের সুখ মনে মনে। যদিও এটা নাটকের কথা কিন্তু এটাই বাস্তব সত্য। দেশটাই চলছে পূর্ণ লবিংয়ের উপরে। জীবনে কিছু করার চিন্তা থাকলে লবিং অবশ্যই থাকতে হবে নইলে জীবন থাকতে সফলতার মুখ দেখা যাবে না, তবে হতে পারে মৃত্যুর পরে। ঐ যে দেখেন না কত গুণী মানুষ অসহায় অবস্থায় চিকিৎসার অভাবে না খেতে পেয়ে মৃত্যুর কোলে এগিয়ে যায়। আমরা তার সেই অবস্থায় কোনো খোঁজ খবর নিতে না পারলেও মৃত্যুর পরে ঠিকই ফুলের মালা নিয়ে হাজির হয়ে যাই। তার সম্মন্ধে কতই না ভালো ভালো কথা বলি। তার জীবন পথের স্মরণীয় কথাগুলো আলোচনা করি। তার স্মরণসভা করি। কি দরকার বাবা এগুলো করে, যদি বেঁচে থাকতেই তার নিজের মূল্যায়ন নিজে দেখে যেতে না পারলো। ‘‘এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাওয়ার তার শ্রেষ্ঠ সময়’’―কবি হেলাল হাফিজ কত বছর আগে তার এই উক্তিটি করেছিলেন অথচ সেটার ফলাও প্রচার দেখলাম তার মৃত্যুর পরে। তিনি বেঁচে থাকতে এটা যদি দেখে যেতে পারতেন তবে কতই না ভালো লাগতো তার। এমনই কত লেখকের লেখা অবমূল্যায়নের খাতায় পরে থেকে থেকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায় তার হিসেব কে রাখে।

তবে এটা ধ্রুব সত্য কথা যে, কোনো লেখক কবি সাহিত্যিক তার বেঁচে থাকাকালীন মূল্যায়ন পায়নি। আর তারা মূল্যায়নের আশায় তার চেতনাগুলো লিখে না। ঐ যে বললাম পাগলের সুখ মনে মনে। কত অপেক্ষায় থেকে থেকে তিনি বলেছেন যে, মন চায় শেষ বেলায় কেউ একজন পাশে থাকুক কিন্তু পাননি। শত কষ্ট দুঃখ নিয়ে আর সকলের মতো এই সব পাগলদেরও বিদায় নিতে হচ্ছে এবং হবে। তবে অনেক কলম যোদ্ধা পাগলই চায় না তাদের কোনো লেখা বা কবিতা লবিং করে প্রচার হোক। সাদা কাগজে কালির অক্ষরে মনের নির্যাসটুকু লিখে রেখেই যেন শান্তিতে থাকে সে। পাওয়ার চেয়ে না পাওয়ার যে সুখ, তা কতজন অনুভব করতে পারে। চেতনা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। নতুন আলোর মুখ দেখায়। কেননা লেখকদের কোনো স্বপ্ন নেই। তাই তো স্বপ্ন ভঙ্গের চিন্তাও তাদের নেই। নেই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। সাদাসিদে জীবন কাটিয়ে সমাজের অবক্ষয়গুলো তুলে ধরতে চেষ্টা করে মাত্র। পৃথিবীর নিয়ম যে বড়োই অদ্ভুত। জীবিত মানুষকে সাহায্য করবার আগে কত ভাবনা চিন্তা করি অথচ মারা গেলেই পুষ্প মাল্যে ঢেকে দেই। লেখকদের কোনো ধর্ম হয় না। ধর্ম-বর্ণের ঊর্দ্ধে দেশ প্রেমের বিষয়ে আর বৈষম্যহীন সমাজের আশায় তাদের লেখনী চলতেই থাকে।
ডা. অলোক মজুমদার: চিকিৎসক ও লেখক; বিশেষ প্রতিনিধি সাপ্তাহিক সময়ের বিবর্তন।