রাজনীতিতে ক্ষমতা ও ঘৃণা একদম পাশাপাশি অবস্থান করে। এক দিন আগে যে ছিল সব থেকে শ্রদ্ধার পাত্র এক দিন পরেই সে হয়ে যেতে পারে সবচেয়ে ঘৃণার পাত্র। এটাই নিয়ম। তাই তো প্রতিটা ধাপ খুবই সতর্কতার সাথে ফেলতে হয়। এটা একটা জটিল অংক যার সমীকরণ মেলানো খুব একটা সহজ কাজ নয়। আত্মতুষ্টি, অহংকার, চেইন অব কমান্ড দিয়ে এই অংকের সমীকরণ যে মেলে না তা এবারের অভ্যুত্থানে ছেলেরা তা বুঝিয়ে দিয়েছে। এখনো এই সমীকরণ যদি আমরা বুঝতে ব্যর্থ হই তবে তো আমাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার পরিমাপ করা উচিত বলে আমার মনে হয়।
একটা জীবন, একটা পরিবার, একটা দেশ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। কেউই কাউকে ছেড়ে চলতে পারে না। তাই তো অনেক সময় নিজেকে কিছু সময়ের জন্য একাকী নির্জনে নিয়ে বিবেকের কাছে ছেড়ে দিতে হয়। উত্তর খোঁজার চেষ্টা করতে হয় সেখান থেকে। কতজনকেই তো দেখলাম এই অংক মেলাতে তারা চেষ্টা করেনি কখনো, বা প্রয়োজন বোধও করেনি তারা তাই তো তাদের করুণ পরিণতি ইতিহাসে পড়েছি আবার নিজে চোখেও দেখেছি। তবে প্রতিটা অংকের ফলাফল যে মিলবে তাও নয় কেন না বিজোড় অংকে অবশিষ্ট থাকে আবার উপরের সংখ্যা যদি নীচের সংখ্যা থেকে ছোটো হয় তবে তার সঙ্গে একটা নির্দিষ্ট সংখ্যা যোগ করে তার পরে সেটা বিয়োগ করতে হয়। আমরা যোগ বিয়োগ না বুঝেই কোনো কোনো সময় ভেবেই ফেলি যে মিলে গেছে। আর সমীকরণের ভুলটা সেখানেই হয়, যার খেসারত ব্যক্তি, পরিবার এমনকি দেশকেও দিতে হয় কোনো কোনো সময়। রাজনীতিতেও এমনই অনুভবের জায়গা আছে যেগুলো আছে তা আমাদের রাজনীতিবিদের খুঁজতে কেমন যেন অনীহা দেখেছি। তাই তো করুণ পরিণতির সম্মুখীন হতে হয়েছে তাদের বিভিন্ন সময়ে। নিঃস্ব করে গেছে তাদের পরবর্তীদেরকে যেখান থেকে পুনরায় সংগঠিত হওয়া খুবই কঠিন একটা কাজ। উন্নতি দুর্নীতি লুণ্ঠন একই সুতোয় বাঁধা। কত মানুষের ফিরিস্তি দেখলাম। কত কাণ্ড দেখলাম। কত শক্তি দেখলাম। সকল কিছুই শক্তিহীনদের কাছে পরাজিত হয়েছে বারবার। তবুও ওদের আকাক্সক্ষা মেটেনি। না পাচ্ছে সাধারণ মানুষের কাছে ঠাঁই না কাজ হচ্ছে অর্থ ও শক্তির, তাহলে কি লাভ এগুলো করে। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে শক্তি প্রদর্শন করেই বা কি লাভ। অতীত ইতিহাস থেকে কেন আমরা শিক্ষা নেই না।
চাটুকারের চাটুকারিতা অযোগ্য অথর্ব ও প্রতিবন্ধীদের দিয়ে নিজের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয় কিন্তু তাতে সার্বিক মঙ্গল কখনো হয় না। এই ৫ আগস্ট ২০২৪ তা আরেকবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেছে। আমার এক ভাইকে দিয়ে আরেক ভাইয়ের বুকে গুলি করে কি এটার সমাধান হয়েছে কখনো । ‘‘নিজে যাকে বড়ো বলে বড়ো সে নয় লোকে যাকে বড়ো বলে বড় সেই হয়’’—এটা তো ছোটোকালে পড়েছি কিন্তু সবাই কি ভুলে গেছি সেটা। এটা যে বাস্তব সত্য এটা এখনো স্বীকার করতে চাই না আমরা। কোনো সময়ে আমাকে কেউ সাধু বললেই আহলাদে গদগদ হওয়ার কোনো কারণ নেই কেননা এটা পেছনেই লুকায়িত থাকতে পারে ভীষণতা, যা থেকে রক্ষা পাওয়া একটা সময় খুবই কঠিন হয়ে যায়, আর সেটার বাস্তবতা এখনই দেখলাম। কেন সেই অদৃশ্য সংখ্যাকে মনে মনে ভেবে নিয়ে সমীকরণের সঠিক ফলাফল নামাতে পারি না। কেন নিজের বিবেকের কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে পারি না। আবার যদি পূর্বের প্রকৃতিই ফিরে আসে তবে কি লাভ হলো সাধারণের। আবার যদি সেই হানাহানি সেই অগ্নি সংযোগ সেই সেই প্রতিহিংসা সেই প্রতিবন্ধকতা সেই অবিচারের সম্মুখীন হতেই হয় তবে কি লাভ হবে সাধারণ মানুষের।
নয় মাস যুদ্ধে স্বাধীন হয়েছিল এই বাংলাদেশ, আর মাত্র ৩৬ দিনে আমাদের সন্তানেরা নতুনভাবে মুক্ত করতে চেষ্টা করেছে এবং করেছে আর এখন প্রতিটা অবিভাবকের দায়িত্ব হলো আমাদের সন্তানদের আকাঙ্ক্ষা পূরণে তাদের সকল প্রকার সহযোগিতা করা যেন এই দেশটা তারা নতুন করে বিনির্মাণ করে আগামীর প্রজন্মের কাছে সুন্দর স্বচ্ছ বাংলাদেরশ উপহার দিতে পারে সেই আশা রাখি। এর পরে তাদের কাছে সকল অহংকারীদের পতনের জন্য আর ৩৬ দিনও লাগবে না সেটাও আমাদের মাথায় রাখা প্রয়োজন। ১৯৫০ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে স্বৈরাচার পতন হয়েছে সারা পৃথিবীতে ৪৭৩ বার। এই কয় বছরে হয়ত বা বেড়ে ৫০০ হয়ে গেছে। ৭১ থেকে ২৪ এ বাংলাদেশও সেই লিস্টে নাম লেখালো দুই বার। জানি না এটা আমাদের জন্য কতটা সম্মানজনক। সত্যিকার গণতন্ত্র ফিরে আসুক, সু-সাসন ও আইন তার নিজের গতিতে চলুক, রাজনৈতিক হয়রানী আর না হোক আতঙ্ক ও নির্যাতন বন্ধ হোক, ধর্মীয় আঘাত বন্ধ হোক, প্রতিটা মানুষ তার সকল অধিকার ফিরে পাক। তাই আসুন লড়াইটা অন্য কারো সাথে না করে আগে নিজের বিবেকের সাথেই করি।