গেরিলা যোদ্ধা মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন
একাত্তরের একজন গেরিলা যোদ্ধা মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন। নিজের এলাকা চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে যুদ্ধ করেছেন এই সাহসী সেনা। বর্তমানে একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শাহাবুদ্দিন। এছাড়া ও তিনি চট্টগ্রাম জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক শাহাবুদ্দিন স্বাধীনতার এত দীর্ঘ বছর পরও শোনালেন কিছুটা হতাশার কথা।
মুক্তিযুদ্ধের পূর্ব প্রেক্ষাপট নিয়ে যদি কিছু বলেন?
আমি ঊনসত্তরের গণআন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলাম। সেসময় কারাভোগও করতে হয়েছিল আমাকে। একাত্তরে আমি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাতই মার্চের ভাষণ আমাকে তীব্রভাবে নাড়া দেয়। তখন থেকেই স্বাধীনতার সংগ্রামের চ‚ড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হতে থাকি।
পঁচিশে মার্চে আপনি কোথায় ছিলেন?
পঁচিশে মার্চের আগে ফিরে যাই নিজের এলাকা চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে। ২৫ মার্চ রাতেই আমরা আমাদের এলাকার একটি সেতু ভাঙার চেষ্টা করি। তখন কুমিল্লা থেকে কিছু সেনা চট্টগ্রামের দিকে আসতে শুরু করেছিল। আমরা চেষ্টা করছিলাম সেতুটি ভেঙে তাদের গতিরোধ করতে।
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ও প্রশিক্ষণ কীভাবে নিলেন?
আমি সত্তরে কিছু সেনা প্রশিক্ষণ পেয়েছিলাম। ডামি বন্দুক ব্যবহার করে নেওয়া সেই প্রশিক্ষণ কাজে লেগেছিল একাত্তরে। তবে সেটা যথেষ্ট ছিল না। তাই, কিছুদিন যুদ্ধের পর গেরিলা প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে পাড়ি জমাই। প্রথমে রামগড়, সেখান থেকে আমরা চলে যাই হরিনা। এরপর আমাকে নিয়ে যাওয়া হয় দেরাদুন তান্দুয়ায়। সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে মে মাসে আমরা আবার মিরসরাই ফিরে আসি।
সম্মুখ যুদ্ধের অভিজ্ঞতা
মিরসরাই এলাকায় একাধিক সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়েছি। চেষ্টা করেছি পাকসেনাদেরকে রুখতে। তবে, এই কাজে সবসময় সাফল্য আসেনি। বিশেষ করে পাকিস্তান বাহিনীর ভারি অস্ত্রশস্ত্রের সামনে কখনো কখনো অসহায় হয়ে পড়ত গেরিলারা। আগস্টের শেষের দিকে আমরা সুফিয়া রোডে এমব্যুশ করি। যখন মিলিশিয়া বাহিনী এগিয়ে আসে, তখন আমরা তাদেরকে গুলি করে। দুই মিলিশিয়া প্রাণ হারায়। কিন্তু কয়েকঘণ্টা লড়াইয়ের পর পাকসেনাদের ভারি গোলাবর্ষণের কারণে আমরা পিছু হটতে বাধ্য হই।
বিজয় ও পরবর্তী পদক্ষেপ
নয় মাস যুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হল। বাহাত্তর এর দশ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু দেশে আসলেন। তিনি দায়িত্ব নিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদেরকে বললেন অস্ত্র জমা দিয়ে, যার যার কাজে ফিরে যেতে। আমরা তাই করলাম। ফিরে গেলাম শিক্ষাঙ্গনে।
যে স্বপ্ন নিয়ে যুদ্ধ করেছেন তার কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে মনে হয়?
যেই আশা নিয়ে দেশ স্বাধীন করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন সেই আশা এখনো পূর্ণ হয়নি। আমরা যুদ্ধ করেছিলাম একটা স্বপ্ন নিয়ে। আমরা একটি সোনার দেশ পাবো। একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ব। একটি সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ হবে। একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র থাকবে। এজন্যই আমরা একাত্তর সালে যুদ্ধ করেছিলাম। আজকে আমি বলব, আমরা যে আশা নিয়ে যুদ্ধ করেছিলাম, সেটা আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আরাফাতুল ইসলাম