বিভাগীয় সম্পাদক ● প্রচলিত ধারানুসারে উর্দুতে আম বয়ানের ভেতর দিয়ে টঙ্গীর তুরাগ তীরে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে তাবলিগ জামাতের প্রথম পর্বের বার্ষিক সম্মিলন বিশ্ব ইজতেমা।
আজ শুক্রবার ফজরের নামাজের পর পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হক উর্দুতে বয়ান করেন। পরে তার বয়ান বাংলাসহ কয়েকটি ভাষায় অনুবাদ করে শোনানো হয়।
শুরুর দিনে জুমার নামাজের পর মাওলানা ইসমাইল গুদর, আসরের নামাজের পর মাওলানা জুবায়ের আহমদ ও মাগরিবের নামাজের পর মাওলানা আহমদ লাটের বয়ান করার কথা আছেন। এসব বয়ানের বাংলা অনুবাদ করে শোনাবেন বাংলাদেশের মাওলানা ওমর ফারুক।
তাবলিগ জামাতের বিবদমান বিরোধের কারণে এবারও বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে আলাদাভাবে।
মাওলানা জোবায়েরের অনুসারীরা প্রথম পর্বে আজ ১৩ থেকে ১৫ জানুয়ারি বিশ্ব ইজতেমা পরিচালনা করছেন। মাওলানা সা’দ পক্ষের অনুসারীরা ইজতেমা পরিচালনা করবেন আগামী ২০ থেকে ২২ জানুয়ারি। প্রতি পর্বেই শেষ দিনে আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।
স্থান না পেয়ে মুসল্লিদের ঢল মাঠ ছাপিয়ে সড়কে
প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমা শুরুর আগের দিন গতকাল বৃহস্পতিবার মুসল্লিরা ময়দানে স্থান না পেয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ফুটপাত ও মাঠের আশেপাশের খোলা জায়গায় অবস্থান নিয়েছেন। ইতোমধ্যে মুসল্লির আগমনে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে ইজতেমা ময়দান। অনানুষ্ঠানিকভাবে বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজের পর থেকেই প্রাথমিক আ’ম বয়ান শুরু হয়েছিল।
এবার বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের বিশিষ্ট আলেমগণ মূল বয়ানে অংশ নেবেন। তাবলীগের ৬ উসুলের এ বয়ান রোববার আখেরি মোনাজাতের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত চলবে। হেদায়তি বয়ান শেষে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে প্রথম পর্বের ইজতেমা শেষ হবে।
আজ শুক্রবার জুমার নামাজে ইমামতি করবেন বিশ্ব তাবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বি বাংলাদেশের কাকরাইল মসজিদের ইমাম হজরত মাওলানা মুহাম্মদ জোবায়ের। ইজতেমা আয়োজক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী মো. মাহফুজ জানান, আজ টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে দেশের বৃহত্তম জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। ময়দানে ইজেতেমা শুরুর আগে থেকেই উপস্থিত মুসুল্লিদের জমিয়ে রাখতে বৃহস্পতিবার ফজরের পর থেকে আম বয়ান শুরু হয়। ঈমান-আমলের এ বয়ান শুনতে ইজতেমা ময়দানের মুসুল্লিরা মশগুল আছেন। তাবলিগের মুসল্লিরা দলে দলে ইজতেমা ময়দানে এসে নিজ নিজ খিত্তায় এখনো অবস্থান নিচ্ছেন। লাখ লাখ মুসল্লির উপস্থিতিতে ইজতেমা ময়দান পূর্ণ হয়ে গেছে। আখেরি মোনাজাতের পূর্ব পর্যন্ত মুসল্লিদের এ আগমন অব্যাহত থাকবে।
আরব, ইউরোপসহ কয়েকটি দেশের মুসল্লিরাও ইতোমধ্যে ইজতেমা মাঠের বিদেশি মেহমানদের প্যান্ডেলে অবস্থান নিয়েছেন। বিদেশি মুসল্লিদের জন্য মাঠের উত্তর-পশ্চিম কোণে আধুনিক সুবিধা সংবলিত আলাদা থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ইজতেমা ঘিরে ‘পর্যাপ্ত’ নিরাপত্তা ব্যবস্থা
ইজতেমা ঘিরে ‘পর্যাপ্ত’ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনিসুর রহমান বলেন, ‘ইজতেমার কয়েক দিন পুরো টঙ্গীজুড়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা বিচরণ করবেন। ৩০ জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে মোবাইল কোর্ট কাজ করবে। সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে ইজতেমা ময়দান ও আশেপাশের এলাকাগুলো পর্যবেক্ষণ করা হবে। ছিনতাই-পকেটমারসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কার্যকলাপ রুখতে টহল টিমসহ আছে পর্যবেক্ষণ চৌকি।’
টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর আলম জানান, এ হাসপাতালে ইজতেমা উপলক্ষে ৭টি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল মোতায়েন আছে। মুসল্লিদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ৫টি ক্যাম্প স্থাপন করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। ওইসব ক্যাম্প থেকে ২৪ ঘণ্টা মুসল্লিদের বিনামূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হবে।
গাজীপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর মিয়ার জানান, ইজতেমা উপলক্ষে এবার ৩১টি অস্থায়ী ভবনে যে পরিমাণ শৌচাগার স্থাপন করা হয়েছে তাতে একসঙ্গে ৯ হাজার মুসল্লি শৌচকার্য সম্পন্ন করতে পারবেন। এছাড়া ইজতেমা ময়দানের পশ্চিম পাশে তুরাগ নদীর ওপর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ৫টি ভাসমান সেতু নির্মাণ করেছে মুসল্লিদের পারাপারের জন্য।
ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা নিয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম জানান, এবার জিএমপির পক্ষ থেকে ১৪টি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ তৈরি করা হয়েছে। ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকায় ২ পর্বে ১০ হাজারের বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবেন। এ ছাড়া ডগ স্কোয়াড, ভ্রাম্যমাণ টহল দল, বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল, নৌ-পুলিশ ও র্যাবের হেলিকপ্টার টহলে থাকবে।