বিভাগীয় সম্পাদক ● প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাপী চায়ের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় চা পাতা বাল্কে বিক্রি না করে এর মূল্য সংযোজন করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মানুষের রুচি এখন বদলে গেছে। বিভিন্ন ধরনের চা এখন পাওয়া যায়। সুগন্ধি চা তৈরি করুন। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন স্বাদের চায়ের চাহিদা এখন অনেক বেশি। চা উৎপাদনের পাশাপাশি এদিকে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন।’ খবর: বাসস।
প্রধানমন্ত্রী আজ ৪ জুন মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘জাতীয় চা দিবস’ উদযাপন এবং ‘জাতীয় চা পুরস্কার ২০২৪’ প্রদান উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘‘মানুষের রুচির পরিবর্তন ঘটায় এখন বিভিন্ন ধরনের চা পাওয়া যাচ্ছে। ‘হারবাল টি’, ‘মসলা টি’ বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। সেজন্য ‘অ্যারোমা টি’ উৎপাদন করা প্রয়োজন। কারণ, বিভিন্ন অ্যারোমা চায়ের কদর অনেক বেশি। তাছাড়া তুলসি, আদা, লেবু, তেজপাতা, এলাচ, লং, দারুচিনি প্রভৃতির সাহায্যে আমরা যে চা বানাই, সে চা’টাও প্যাকেটজাত করা যায়।’’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি যারা চা মালিক এবং ব্যবসায়ী রয়েছেন, তাদেরকে বিশেষ করে মালিকদের বলবো— আপনারা ভ্যালু অ্যাডেড করেন। বাল্কে চা বিক্রির পরিবর্তে যদি ভ্যালু অ্যাডেড করেন, তাহলে আপনারা ভালো দাম পাবেন। উপার্জন করতে পারবেন প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা এবং বিশ্বব্যাপী এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাট পাতা থেকে চা তৈরিতে গবেষণা চলছে এবং সীমিত আকারে উৎপাদন হচ্ছে। এটি নিয়ে আরও গবেষণা করে এর উৎকর্ষ সাধন প্রয়োজন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চাকে বহুমুখী করা এবং অ্যারোমা টি তৈরি করা, যেটার চাহিদা বিদেশে এখন অনেক বেশি— তাই সেদিকেই আমাদের নজর দেওয়া দরকার। চা পাতা শুধু বাল্কে বিক্রি না করে ভ্যালু অ্যাডেড করে সেটা আমরা রফতানি করবো। এতে আমাদের বৈদেশিক মুদ্র অর্জনের পাশাপাশি উৎপাদকদেরও ভালো উপার্জন হবে।’
তিনি শ্রমিকদের প্রতি আরও যত্নবান হওয়ার এবং তাদের দিকে বিশেষভাবে নজর দেওয়াসহ তাদের সন্তান-সন্ততিদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য চা বাগানের স্কুলগুলোর উন্নয়নে মালিকপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চা বাগানে প্রায় ১ লাখ ৪৫ হাজার শ্রমিক কর্মরত, যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরও অনেকেই রয়েছেন। কাজেই তাদের জীবনমান উন্নত করা, আর্থিক দিক দেখা, ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যৎ দেখা কিন্তু মালিকদের দায়িত্ব।’
প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেন, ‘অভিভাবকের মতো আপনারা সেটা দেখবেন, আমরা সেটাই চাই। পাশাপাশি চা শ্রমিকরা আর ভাসমান থাকবে না, সে বিষয়টিও দেখার দায়িত্ব আমাদের।’
শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি ও শ্রমিকদের মাঝে ৮টি ক্যাটাগরিতে ‘জাতীয় চা পুরস্কার-২০২৪’ প্রদান করেন।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি টিপু মুনশি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম উদ্দিন, চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে চা শিল্পের ওপর নির্মিত একটি ভিডিও-চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে চা মেলারও উদ্বোধন করেন এবং পরে বঙ্গবন্ধু কর্নার এবং চা মেলা পরিদর্শন করেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালের ৪ জুন প্রথম বাঙালি হিসেবে চা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে যোগদান করে বাঙালি জাতিকে সম্মানিত করেন। সেই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে সরকার ২০২১ সাল থেকে ‘জাতিয় চা দিবস’ পালন শুরু করে আসছে। ‘স্মার্ট বাংলাদেশের সংকল্প, রফতানিমুখী চা শিল্প’ শীর্ষক প্রতিপাদ্য নিয়ে দেশে চতুর্থবারের মতো এবছর ‘জাতীয় চা দিবস-২০২৪’ উদযাপন হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী মালিকদের প্রতি বলেন, ‘চা শ্রমিকদের প্রতি যত্নবান হলে তাদের থেকে বেশি কাজ আদায় করিয়ে নিতে পারবেন। তাদের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া, চিকিৎসাসহ নানা বিষয় দেখবেন। চা শ্রমিকদের নাগরিকত্ব দিয়েছেন জাতির পিতা। তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই, আপন ভূমি নেই। আমরা তাদের সেই মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেবো। কেউ ভূমিহীন, গৃহহীন থাকবে না। আমাদের পরিষ্কার কথা।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘চা আমার খুব প্রিয়। আমি চা পান করি। কারণ, জাতির পিতা চা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। আর বিশেষ করে, চা শ্রমিকরা নৌকায় ভোট দেন। অনেকে অনেকভাবে চেষ্টা করেছে, কিন্তু তাদের অন্য দিকে নিতে পারে নাই। তাদের ভালোবাসা ও আন্তরিকতা আমাকে মুগ্ধ করেছে।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘উত্তরাঞ্চল চায়ের যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে—সেটাকে সম্প্রসারণ এবং যত্ন করা, কীভাবে আরও চা উৎপাদন বাড়ানো যায়, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া চা বোর্ড, ক্ষুদ্র চাষিদের প্রযুক্তি সহায়তা, প্রণোদনা, সবদিক থেকে সরকার সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। পঞ্চগড়ের পাশাপাশি লালমনিরহাটেও চা বোর্ডের স্থায়ী অফিস নির্মাণ করা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘পঞ্চগড়ে আঙ্গিনায়ও চা হচ্ছে। তারা তরকারিও ফলায়, চায়ের গাছও লাগায়। আমাদের অর্থকরী ফসল হচ্ছে চা। যেটা দেশের মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা এনে দিতে সহায়তা করছে। চায়ের চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে গবেষণা অব্যাহত রাখতে হবে। গবেষণার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।’
সরকার প্রধান বলেন, তার সরকার চা উৎপাদনে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে ২০২৩ সালে রেকর্ড ১০২ দশমিক ৯২ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়েছিল।