১ ফাল্গুন বসন্তের প্রথম দিন, যুগ যুগ ধরে বসন্ত বাঙালিকে রাঙিয়েছে পলাশ, শিমুলের বর্ণিল রঙে। এবছর এদিন ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসও! এদিন তরুণ-তরুণী, প্রেমিক-প্রেমিকারা, হাতে হাত রেখে ঘুরে বেড়াবে, গল্প-গুজব করবে, একজন অন্য জনকে ফুল, কার্ড, চকলেট ইত্যাদি দিয়ে শুভেচ্ছা জানাবে। দিনটি সম্পর্কে আবার অনেক বিরূপ মন্তব্য আছে। অনেকে দিনটি নিষিদ্ধ করতে উঠে-পড়ে লেগেছে। আমি শুধু বলি, পৃথিবী যতদিন থাকবে ততদিন পৃথিবীতে ভালোবাসা থাকবে।
ভালোবাসা নাকি ক্ষণে ক্ষণে রং বদলায়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে নাকি ভালোবাসার সংজ্ঞা বদলে যায়। যে প্রিয় মানুষটাকে ছাড়া আপনার জীবন অসম্পূর্ণ, যাকে নিজের চেয়ে বেশি ভালোবাসেন তাকে ছাড়া জীবন একদিনেও চলবে না। কিন্তু সে ধারণা একদিন ভুল প্রমাণিত হয়। জীবন প্রবাহমান, কারো অনুপস্থিতে জীবন থেমে থাকে না। রূঢ় শোনালেও অনেক সময়েই স্বার্থ ফুরিয়ে গেলে ‘ব্যস্ততা’ দেখিয়ে মানুষ মানুষকে ভুলে যায়। কাউকে এড়িয়ে চলা, সময় দিতে না চাওয়ার নামই হয়ত ব্যস্ততা। তারপরেও মানুষ-মানুষকে ভালোবাসে, ভালোবাসার মধ্যে অনেক স্বার্থ থাকে, থাকে অনেক কারণ। পৃথিবীতে ভালোবাসা বলতে কিছু কিছু নেই? কথায় বলে, সরকারি চাকরি আর সত্যিকার ভালোবাসা নাকি যোগ্য ছেলেরা পায় না, কথাটা পুরোটা সত্যি না হলেও মিথ্যাও নয়।
মানুষের মন রংধনুর মতো, কখন যে কাকে ভালো লাগে তা আগে থেকে বলা যায় না। কিন্তু সব ভালোলাগা ভালোবাসায় পূর্ণতা পায় না, কারণ ভালো লাগা আর ভালোবাসা এক না। প্রথমে দেখা, দেখা থেকে ভালোলাগা, তারপর চেনা-জানা, নিজেদের মধ্যে বোঝা পড়া, বিশ্বাস সৃষ্টি আর এভাবে ভালোবাসার জন্ম হয়।
ভালোবাসা একটি গাছের মতো, একটি বীজ থেকে যেমন একটি পূর্ণাঙ্গ গাছের সৃষ্টি হয় তিলে তিলে যতেœ। আবার একটি গাছ বেড়ে উঠতেও অনেক সময় লাগে। অনেক কষ্ট পরিশ্রমে করতে হয়, কিন্তু একটা পূর্ণাঙ্গ গাছ নষ্ট করতে মাত্র অল্প সময় লাগে, করাত দিয়ে কাটতে। তেমনি যদি ভালোবাসায় যখন অবিশ্বাস প্রবেশ করে সেই অবিশ্বাস, করাতের মতো ভালোবাসাকে নষ্ট করে দেয়। ভালোবাসা বেঁচে থাকে বিশ্বাসের ওপর। রংধনুতে সাতটি রং থাকে, একারণে রংধনু এত সুন্দর দেখায়, তেমনি ভালোবাসায় দুঃখ-কষ্ট, হাসি-কান্না মিশে থাকে বলে, ভালোবাসা মানুষের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকে।
সাম্প্রতিককালে আমাদের দেশে প্রচলিত হওয়া পাশ্চাত্যের ভ্যালেন্টাইন ডে বা ভালোবাসা দিবস নামকরণের পিছনে রয়েছে এক করুণ ইতিহাস। তৃতীয় শতাব্দীতে রোমে সম্রাট ক্লোডিয়াস (২১৩-২৭০ খ্রী.) এর সময়ে ভ্যালেন্টাইন নামে একজন পুরোহিত ছিল। বিশেষ কারণে তিনি সম্রাটের রোষানলে পড়েন। সম্রাট তখন সেনাবাহিনীতে লোকবল বাড়াতে চাচ্ছেন, কিন্তু যুবকরা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চাচ্ছিল না। কারণ তাদের পরিবার ও স্ত্রী আছে। রাজ্যে বিবাহিত যুবকেরা অবিবাহিত যুবকদের চেয়ে দুর্বল। তাই রাজা ঘোষণা করলেন—যুবকেরা আর বিবাহ করতে পারবে না, যুদ্ধে যেতে হবে। বিষয়টি অমানবিক হলেও প্রতিবাদ করার মতো কারও সাহস ছিল না। এই পরিস্থিতে একজন পুরোহিত এগিয়ে আসলেন এবং গোপনে বিবাহ উপযুক্ত ছেলেমেয়েদের বিবাহ দিতে শুরু করলেন। এই পুরোহিতের নামই ভ্যালেন্টাইন। সম্রাট এই ঘটনা জানতে পেরে তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করলেন। মনে করা হয় ভ্যালেন্টাইন যখন কারাগারে ছিলেন তখন কারারক্ষীর মেয়ে ভ্যালেন্টাইনের প্রেমে পড়েন, প্রায়ই তিনি ভ্যালেন্টাইনকে দেখতে আসতেন। এর কিছু দিন পর ১৪ ফেব্রুয়ারি সম্রাটের নির্দেশে ভ্যালেন্টাইনের শিরচ্ছেদ করা হয়। কথিত আছে, ওই দিনে প্রথম ভ্যালেন্টাইন চিঠির মাধ্যমে মেয়েটিকে তার ভালোবাসার কথা জানান, যেখানে লেখা ছিল, `from your valentines’ যা আজ ও প্রচলিত।
ভালোবাসা নির্দিষ্ট কারো জন্য নয় ভালোবাসা সবার জন্য, বিধাতার সব সৃষ্টির জন্য। ভালোবাসা আমাদের উৎসর্গ করতে শিখায়। শেখায় হাসি আনন্দ ভাগা-ভাগি করে নিতে। সবাইকে বসন্তের শুভেচ্ছা।
নাহিদ বাবু : তরুণ লেখক।