প্রতিভা কখনো ছাইচাপা থাকে না। অনুশীলন এবং অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে সুপ্ত প্রতিভা ধীরে ধীরে জনসম্মুখে বেরিয়ে আসে। আবার কখনো কখনো প্রতিভার প্রদীপ নিভে যেতে পারে অযত্ন অবহেলা, অসহযোগিতার কারণে। পৃথিবীতে প্রতিটি সন্তানই কোনো না কোনো প্রতিভা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। আর সেই প্রতিভাকে বুকে লালন করে এগিয়ে যেতে হয় সামনের পথ। চর্চা এবং লেগে থাকার মাধ্যমে প্রস্ফুটিত করতে হয় প্রতিভার ফুল মানুষের মুক্তাঙ্গনে।
বাংলাদেশের নারয়ণগঞ্জ একটি রত্নগর্ভ জেলা। এখানে যুগে যুগে জন্ম নিয়েছে হাজারো শিল্পী, কবি, রাজনীতিক, সমাজ সংস্কারক। সমৃদ্ধ হয়েছে এ জেলার শিল্প, সাহিত্য, সাংস্কৃতিক অঙ্গন। শীতলক্ষ্মা, বুড়িগঙ্গা নদী বিধৌত এই নারায়ণগঞ্জ জনপদ। এই শহরের ফতুল্লা অঞ্চলটি শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির দিক দিয়ে বড়ই উর্বর। ২০০৩ সালের ১০ই সেপ্টেম্বর, এই ফতুল্লা অঞ্চলে জন্মগ্রহণকারী এক উঠতি শিল্পীর নাম প্রিয়ন্তী সরকার কথা। হাঁটি হাঁটি পা পা করে, মন্থর গতিতে এগিয়ে চলা। সেই প্রিয়ন্তী সরকার কথা’কে নিয়েই আমার আজকের কথার মালা সাজানো।
নারায়ণগঞ্জের মেয়ে প্রিয়ন্তী সরকার কথা। ফতুল্লা পাইলট স্কুলে ১০ম শ্রেণি বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী সে। তার পিতা পিযুষ কান্তি সরকার। বর্তমানে মুনশিগঞ্জের একটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক। শিক্ষকতা পেশায় বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্য তিনি গুণিজন সংবর্ধনা ২০১৭ লাভ করেন। আর এই সম্মানে তাঁকে সম্মানিত করেছেন-বহরাতলা হরিরামপুর মানিকগঞ্জের সংরক্ষণ সাহিত্য পরিষদ। প্রিয়ন্তীর মাতাÑকনিকা রানী সরকার। তিনি গৃহিণীর দায়িত্বে ব্যস্ত থাকেন সারাক্ষণ। তবে প্রিয়ন্তীর পিতা-মাতা দুজনেই বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের জন্য মেয়েকে নিয়ে যান, উৎসাহিত করেন। দুভাই-বোনের মধ্যে প্রিয়ন্তী বড়ো এবং ভাই প্রিতম সরকার কাব্য ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র। সেও বোনের সঙ্গে সঙ্গে তবলা বাদন শিখছে।
প্রিয়ন্তীর শখ গান করা, চিত্রাঙ্কন এবং কম্পিউটার এক্সপার্ট হওয়া। তন্মধ্যে সংগীত চর্চায় সে নিয়মিত এগিয়ে চলেছে সামনের দিকে। কারণ একজন জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী হওয়া তার লক্ষ্য ও স্বপ্ন। কথায় আছে যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে। সংগীতের পাশাপাশি সে পড়াশুনায়ও পিছিয়ে নেই। তাই তো ২০১৪ সালে পিএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ফাইভ পেয়ে সংবর্ধিত হয়। তাকে সংবর্ধিত করে, “সকালের খবর” পাঠকসভা। নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখা কম্পউটার প্রোগ্রামিং ওয়ার্কশপ সফলতার স্বীকৃতি সনদ লাভ করে ২০১৪ সালে। ৪র্থ শ্রেণিতে পড়াকালীন প্রিয়ন্তীর সংগীত চর্চা শুরু। ছোটদের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় তার নিয়মিত অংশগ্রহণ। এত অল্প সময়েই প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে করে, তার সফলতার ঝুড়িতে জমা হয়েছে প্রচুর পুরস্কার ও প্রশংসাপত্র। সফলতার তালিকায় রয়েছে যথাক্রমে-
৫ম শ্রণিতে পড়াকালীন জাতীয় শিশু-কিশোর পুরস্কার প্রতিযোগিতা ২০১৩, নারায়ণগঞ্জ সদর নারায়ণগঞ্জ আয়োজিত দেশাত্ববোধক গানে প্রথম গান গেয়েই ১ম স্থান। আর এই পুরস্কারই তাকে অনুপ্রাণিত করেছে সম্মুখসমরে এগিয়ে চলার। অনুশীলনের পাশাপাশি একটার পর একটা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতেই থাকে।
২০১৪-২০১৬ বাংলাদেশ শিশু একাডেমি নারায়ণগঞ্জ আয়োজিত ৩ বছরের সংগীত প্রশিক্ষণ কোর্সে ২য় স্থান অধিকার।
২০১৫-২০১৭ বাংলাদেশ শিশু একাডেমি আয়োজিত ৩ বছরের চিত্রাঙ্কন প্রশিক্ষণ কোর্সে সফলতা অর্জন।
জাতীয় শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ২০১৫ বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর মেলা, নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখা আয়োজিত বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান গেয়ে, খ বিভাগে ২য় স্থান লাভ।
২০১৫ সালে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ আয়োজিত, সংগীত প্রতিযোগিতা খ- বিভাগে ২য় স্থান অধিকার এবং ঢাকাস্থ বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে সনদপত্র ও মেডেল গ্রহণ।
সংস্কৃতি মঞ্চ আয়োজিত ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে, সংগীত প্রতিযোগিতা ২০১৫ পুরস্কার লাভ।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার জেলা তথ্য অফিস নারায়ণগঞ্জ ‘শিশুমেলা ২০১৬’ সংগীত প্রতিযোগিতায় খ বিভাগে ৩য় স্থান লাভ।
নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবের আয়োজনে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৭তম জন্মদিবস ও জাতীয় শিশু দিবস ২০১৬ উপলক্ষে, ‘বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক’ সংগীত প্রতিযোগিতায়, গ বিভাগে বিশেষ পুরস্কার।
বাংলাদেশ শিশু একাডেমি জেলা পর্যায়ে, জাতীয় শিশু পুরস্কার ২০১৬, সংগীত প্রতিযোগিতায় ক বিভাগে ৩য় স্থান।
বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর মেলা, জাতীয় শিশু-কিশোরসংস্কৃতি প্রতিযোগিতা ২০১৬, পল্লিগীতি শাখায় গ বিভাগে ২য় স্থান।
জাতীয় শিশু-কিশোর পুরস্কার প্রতিযোগিতা ২০১৬, নারায়ণগঞ্জ সদর, নারায়ণগঞ্জ ‘ক’ বিভাগ পল্লিগীতি ১ম স্থান।
ভক্তিবেদান্ত ন্যাশনাল স্টুডেন্টস্ কম্পিটিশন ২০১৬, ঢাকা বিভাগে ভজন কীর্তনে ১ম স্থান।
জাতীয় শিশু-কিশোর পুরস্কার প্রতিযোগিতা ২০১৭, নারায়ণগঞ্জ সদর, নারায়ণগঞ্জ আয়োজিত দেশাত্ববোধক, পল্লিগীতি ও নজরুল সংগীত তিনটি বিভাগেই ২য় স্থান অধিকার করে।
দি লিজেন্ড অর্গানাইজেশন আয়োজিত, স্কুল স্টার সাস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ২০১৭, সংগীত বিষয়ে খ বিভাগে ২য় স্থান।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আয়োজিত, ২০১৭ শুদ্ধ জাতীয় সংগীত দলীয় প্রতিযোগিতায় ১ম স্থান।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মদিবস ও জাতীয় শিশুদিবস ২০১৮ উপলক্ষে, “বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক” সংগীত প্রতিযোগিতায়, ঘ বিভাগে বিশেষ পুরস্কার।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, সংগীত বিষয়কমন্ত্রণালয় সংগীত উৎসব ২০১৮, সংগীতে পুরস্কার লাভ।
বিজয় ফুল ২০১৮ সংগীত প্রতিযোগিতায়, দলীয়ভাবে ১ম স্থান লাভ। উল্লেখ্য, সেখানে দলনেতার দায়িত্বে ছিল প্রিয়ন্তী সরকার কথা।
প্রিয়ন্তীর বাবা-মা সংগীতের অনুপ্রেরণাদাতা। প্রিয়ন্তীর পিতার ইচ্ছা ছিল সংগীত শিল্পী হওয়া। কিন্তু শৈশবেই তাঁর পিতৃবিয়োগ হওয়াতে সেই শখ আর পূরণ হয়নি। তাই পিতা পিযূষ কান্তি সরকারের ইচ্ছা তাঁর মেয়ে যেন একজন স্বনামধন্য সংগীত শিল্পী হয়। কন্যা প্রিয়ন্তীরও স্বপ্ন সে সংগীত শিল্পী হবে। পাশাপাশি সে একজন গীতিকারও হতে চায়। ইতোমধ্যে বেশকিছু গানও লিখে ফেলেছে। শিল্পী হওয়ার অভিপ্রায় থেকেই তার স্বপ্নের পথে পথচলা। পাশাপাশি সে স্থনীয় ‘চৈতন্য সমাজ উন্নয়ন শিল্পীগোষ্ঠী’র সমাজকল্যাণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছে। ২০১৬-২০১৯ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি নারায়ণগঞ্জ ৪ বছরের কোর্সে সংগীত বিভাগে ৪র্থ বর্ষ চলছে। তাছাড়া ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তন নজরুল সংগীত বিভাগেও অধ্যয়নরত। প্রিয়ন্তী সরকার কথার সঙ্গ কথা বলতে গিয়ে জানতে পারি, তার প্রিয় শিল্পীর তালিকায় রয়েছেÑসাবিনা ইয়াসমিন, প্রয়াত সুবীর নন্দী, ইউসুফ খান এবং কনকচাঁপা। জীবনের বাঁকা পথগুলো অতিক্রম করে, এগিয়ে যাক প্রিয়ন্তী সরকারের জীবনযাত্রা। সফল হোক তার আগামীর স্বপ্ন। এই প্রত্যাশা আমাদেরও।
চঞ্চল মেহমুদ কাশেম / সাপ্তাহিক সময়ের বিবর্তন