সম্প্রতি মাননীয় স্বরাষ্টমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, রাঙ্গামাটি সফরকালে সেখানে পাহাড়ি নেতাদের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি-পাহাড়ি কীভাবে মিলেমিশে বসবাস করবে এ বিষয়টি তুলে ধরেন। সেখানকার পাহাড়ি নেতারা নিজেদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন। বর্তমান সরকারের সাথে পাহাড়ি নেতাদের যে শান্তি চুক্তি হয় তার আলোকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প অনেকটাই সরিয়ে ফেলা হয়। ক্ষুদ্র নৃতাত্তি¡ক গোষ্ঠীর সমস্ত দাবি দাওয়া সরকার প্রায়ই মেনে নিয়েছেন। তারপরও পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্তির আগুন লেগে আছে। অপহরণ, হত্যা, গুম, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি প্রায় প্রতিদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনোভাবেই পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না। ক্ষুদ্র নৃতাত্তি¡ক গোষ্ঠীরা একাধিক দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে অরাজকতা করে যাচ্ছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা অপরাধীদের দমন করার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু ততটা সাফল্য পাচ্ছে না। কারণ পার্বত্য চট্টগ্রাম এতটাই দুর্গম অঞ্চল যে, সব জায়গায় আইন প্রয়েগকারী সংস্থার সদস্যরা যেতে পারে না। সেই সুযোগটাই ক্ষুদ্র নৃতাত্তি¡ক গোষ্ঠীর সন্ত্রাসীরা কাজে লাগাচ্ছেন। হত্যা, ধর্ষণ করার পর তারা ভারতের ত্রিপুরা ও মিজোরাম রাজ্যে পালিয়ে যায়। সেখানে রয়েছে তাদের স্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র ও সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বিষয়টি ভারত সরকারকে জানানো হয়েছে। কিন্তু তারপরও সমস্যার কোনো সমাধান আসেনি। পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্ষুদ্র নৃতাত্তি¡ক গোষ্ঠীরা দীর্ঘদিন থেকে বিশ্ববাসীর কাছে প্রমাণ করতে চাচ্ছে যে, বাংলাদেশের আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। তাদের এই মিথ্যাচার ইউরোপের একাধিক দেশ তাদের প্রতি সহানুভ‚তি দেখাচ্ছে।
যে কারণে তারা ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব তিমুরের মতো পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে একটি স্বাধীন দেশ করারা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। একাধিক বিদেশী এনজিও, প্রতিবেশী দুটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থা এই ক্ষুদ্র নৃতাত্তি¡ক গোষ্ঠীর সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা করছে। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামবাসী আবারও পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়ে আসছে। এর ফলে পাহাড়ি অঞ্চলে শান্তি ফিরে আসবে। চাকমা সম্প্রদায়ের এক নারী যার নাম ওগাষ্টিন চাকমা, কানাডার টরেন্টো নগরী থেকে তার ইউটিউব চ্যানেলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। যার ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণের কাছে তাদের প্রাণের স্বাধীনতা রক্ষায় পূর্ব শর্ত হচ্ছে দুর্গম অঞ্চলে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করা, একই সাথে অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ক্যাম্প স্থাপন। ক্ষুদ্র নৃতাত্তি¡ক গোষ্ঠীর কোনো সমস্যা যদি থেকে থাকে তাহলে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত। তা না হলে দেশ-বিদেশের ষড়যন্ত্রকারীরা পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্তির আগুন জ্বালাতেই থাকবে। দেরী হয়ে গেলে এই অশান্তির আগুন আর নেভানো যাবে না।
গত একযুগে একাধিকবার পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রায় প্রতিটি উপজেলায় দুর্গম অঞ্চলে সফর করা সুযোগ হয়েছে। নিরীহ ক্ষুদ্র নৃতাত্তি¡ক গোষ্ঠীর বক্তব্য একটাই, আমরা শান্তি চাই কিন্তু এই ক্ষুদ্র নৃতাত্তি¡ক গোষ্ঠীর সবকিছু পেলেও শান্তি খুঁজে পাচ্ছেন না। কারন প্রতিবেশী দুটি দেশের উস্কানীতে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃতাত্তি¡ক গোষ্ঠী সব সময় আতঙ্কের মধ্যে থাকেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম অঞ্চলে যেখানে এখনো কাঁচা রাস্তা রয়েছে তা যদি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে রাস্তা নির্মাণের দায়িত্ব দেয়া হয়, তাহলে সেনা সদস্যরা ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সদস্যরা যেকোনো সময় যেকোন দুর্গম জায়গায় সন্ত্রাস দমনের জন্য অভিযান চালাতে পারবেন । আরও প্রয়োজন স্থায়ী হেলিপ্যাড যেখান থেকে অস্ত্রসজ্জিত হেলিকপ্টার যেকোনো সময় সন্ত্রাসীদের আস্তানায় অভিযান চালাতে পারবে। সারা বংলাদেশে উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছে গেলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে কিছু সন্ত্রাসীদের কারণে উন্নয়ন থেকে পাহাড়ী অধিবাসীরা উন্নয়ন বঞ্চিত থাকবে, এটা হতে পারে না।
সৈয়দ রশিদ আলম : কবি ও লেখক।