পরীক্ষায় ভালো ফল করা শুধু মেধা বা সারাদিন বই নিয়ে পড়ে থাকা নয়। নিয়মিত ভালো ফলাফল করে, এমন শিক্ষার্থীদের আসলে কিছু অভ্যাস থাকে যা তাদের ভালো ফল করতে সাহায্য করে। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল সবারই কাম্য। পরীক্ষায় কাক্সিক্ষত সাফল্য অর্জনের জন্য কিছু কৌশল অনুসরণ করতে হয়। এরকম কয়েকটি কৌশল-
পড়াগুলোকে সুবিন্যস্ত করে সাজিয়ে পড়া শুরু করা
মন থেকে পরীক্ষাভীতি ঝেড়ে ফেলে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে পড়া শুরু করতে হবে। পড়াগুলোকে নিজের মতো করে সাজাতে হবে। পরীক্ষার রুটিন অনুযায়ী কোনদিন কী পড়ব তা আগে থেকে ঠিক করে নিতে হবে। এতে পড়তে সুবিধা হয়, পড়া মনেও থাকে বেশি।
পড়ে না দেখে লেখার অভ্যাস করা
আমরা যা পড়ি তা কখনোই পুরোপুরি মনে থাকে না বলে পরীক্ষার খাতায় হুবহু নির্ভুল লেখা অনেক সময়ই সম্ভব হয়ে উঠে না। কিন্তু পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাওয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছে নির্ভুল লেখা। পরীক্ষায় নির্ভুল লেখার জন্য পড়ার পরে না দেখে লেখার অভ্যাস করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। পড়ার পর তা না দেখে লিখলে ভুলগুলো সহজেই ধরা যায় এবং পরবর্তীতে সেই ভুল হবার সম্ভাবনা কমে যায়।
গুছিয়ে রাখুন পড়ার জিনিস
সবসময় পড়ার জিনিস গুছিয়ে রাখুন যাতে যা খুঁজতে সময় ব্যয় না হয়। ক্লাস থেকে এসে প্রতি বিষয়ের নোট আলাদা রঙের ফোল্ডারে গুছিয়ে রাখুন। অন্তত পড়ার টেবিলের ড্রয়ারে বা ব্যাকপ্যাকটা গুছিয়ে রাখার অভ্যাস করুন।
দ্রুত পড়ার অভ্যাস করুন
শুধু বই সামনে নিয়ে বসে থাকলে পড়া হয় না। দ্রুত পড়ার অভ্যাস গড়ে তুললে আপনি কম সময়ে অনেক বেশি পড়তে পারবেন। প্রথম একটি বইয়ের সূচিপত্র পড়ে নিন, এতে আপনি বুঝতে পারবেন বইটি কী বিষয়ের ওপরে লেখা। এরপর আপনি এতে থাকা ছবি এবং ছক দেখতে পারেন। এরপর বইটি দ্রুত পড়ে নিতে পারেন। এ পদ্ধতিতে আপনার মাথায় তথ্যগুলো ভালোভাবে বসে যাবে।
সময় ভাগ ভাগ করে নিন
বিভিন্ন বাড়ির কাজ বা অ্যাসাইনমেন্ট শেষ করার জন্য ভাগ ভাগ করে কাজ করতে হয়। অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেবার শেষ তারিখটা জেনে নিয়ে এর আগেই শিডিউল করে ফেলুন কবে কতটুকু লিখবেন। যদিও সবসময় এত গুছিয়ে কাজ করা যায় না, কখনো ডেডলাইনের আগের রাত্রেই কাজ শেষ করতে হয়। তারপরেও একটি শিডিউল করা থাকলে কাজটা ভালো হয়।
ভুল থেকে শেখা
ভুল করে শেখা জিনিস অনেকদিন মনে থাকে। তাই ‘কোথায় ভুল হচ্ছে? কেন ভুল হচ্ছে? কী বুঝতে পারছিনা?’ এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করতে হবে। এগুলো সমাধান করলেই পরীক্ষায় ভালো করার হার অনেক গুণ বেড়ে যাবে।
গ্রুপ স্টাডি করা
ভালো ফলাফল করার জন্য গ্রুপ স্টাডি খুব গুরুত্বপূর্ণ। কোনো বিষয় একসাথে গ্রুপ করে পড়লে সেই বিষয়ের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট হয়। এতে করে পড়াগুলো আয়ত্ত করা যেমন সহজ হয়, তেমনি আলোচনার মাধ্যমে জটিল বিষয়গুলো সম্পর্কে বিশদ ধারণা লাভ করা যায়।
ক্লাস লেকচার ফলো করা
ক্লাসে নিয়মিত উপস্থিত হতে হবে ও মনোযোগ দিয়ে লেকচার শুনতে হবে। কেননা পরীক্ষায় কী আসবে বা কী আসতে পারে তা নিয়ে শিক্ষকরা ক্লাসেই কিছু না কিছু ধারণা দিয়ে থাকেন। এছাড়া কঠিন বিষয়গুলো ক্লাসেই শিক্ষকের কাছ থেকে বুঝে নিলে তা অনেকদিন পর্যন্ত মনে থাকে। তাই নিয়মিত ক্লাস লেকচার ফলো করলে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া সহজ হয়।
নোট তৈরি করা
নোট করে পড়া ভালো ফলাফলের জন্য বেশ কার্যকর। ভালো নোট পাঠে মনোযোগ বাড়ায় এবং পাঠকে আকর্ষণীয় করে তুলে। তাছাড়া নোট করলে পরীক্ষার আগেই একবার বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। এতে প্রস্তুতি নিতে বেশ সুবিধা হয়।
মেমরি টেকনিক ব্যবহার করা
কিছু কিছু বিষয় থাকে যা মুখস্ত করতেই হয়। সেক্ষেত্রে মেমরি টেকনিক ব্যবহার করা যেতে পারে। ছড়া দিয়ে অথবা বাস্তব জীবনের উদাহরণ দিয়ে পড়া মনে রাখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে ছবি এবং ছকও অনেক কার্যকরী।
ক্লাসে সাড়া দিন
শিক্ষক কী বুঝাচ্ছেন তা বুঝতে না পারলে তা পুনরায় জিজ্ঞেস করতে ভুলবেন না। এতে আপনিও যেমন বিষয়টা ভালোভাবে বুঝতে পারেন, তেমনি শিক্ষকও আপনাকে ভালো চোখে দেখবেন।
খাতায় সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা
কথায় আছে, প্রথমে দর্শনধারী পরে গুণবিচারী। পরীক্ষার খাতায় সুন্দর হাতের লেখা এবং গোছানো উপস্থাপন শিক্ষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, যা অধিক নম্বর পেতে সহায়ক। প্রস্তুতি অনেক ভালো হবার পরও যদি তা খাতায় ঠিকমত উপস্থাপন করা না হয় তবে সেই প্রস্তুতির কোনো মূল্য নেই। পরীক্ষার হলে টাইম ম্যানেজমেন্ট করাও এজন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।
এডুকেশন ডেস্ক