দেশে যেন ধর্ষণের মচ্ছব চলছে। হঠাৎ করে দেশে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় সর্বমহলে আতঙ্ক ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। শিশু থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রি, গৃহবধূরা ধর্ষকদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। করোনা মহামরির মধ্যেও দেশে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। সারা বিশ্বে কোভিড-১৯ আতঙ্কে দেশের মানুষ যখন নিজেকে এবং পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষা নিয়ে চিন্তিতÑএমন ভয়াবহ দুর্যোগের সময়েসময়েও নারী-শিশুরা নিজেদের রক্ষা করতে পারছে না। নরপিশাচদের যৌন লিপ্সা চরিতার্থ করার জন্য তাদের দৌরাত্ব থেমে নেই। ধর্ষণের পর হত্যাও করা হচ্ছে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মাঝে বেড়েছে চরম উদ্বেগ। এর প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন ভুক্তভোগীদের পরিবার, স্বজন ও সহপাঠিরা। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী ধর্ষণের ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। মাঝে মাঝে বৃদ্ধারাও ধর্ষণের মতো জঘন্যতার শিকার হচ্ছেন। এছাড়া কর্মক্ষেত্রগুলোও এর বাইরে নয়। বিভিন্ন সময় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার যৌন নিপীড়ণের শিকার হয়েছেন অধস্তন কর্মচারীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধেও যৌন নিপীড়ণের অনেক অভিযোগ রয়েছে। এর বাইরে নয় ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এবং মসজিদের ইমামরাও। কিন্তু লোকলজ্জার ভয়ে অধিকাংশ ঘটনাই প্রকাশ পাচ্ছে না। বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমরা প্রতিদিন যে পরিমাণে ধর্ষণের খবর দেখি প্রকৃত ধর্ষণের ঘটনার সিংহভাগই প্রকাশ হয় না ধর্ষিতা হয়ে প্রকাশ করে ক’জন? এ লজ্জার কথা জানাতে পার ধর্ষণের শিকার ভিকটিমরা। ধর্ষণের বিচার চাইতে গিয়ে আরও এক দফা হয়রানি ও নানা অপমানজনক কথাবার্তা শুনতে হয় বলে ভিকটিম বা তাদের পরিবার থানা আদালত পর্যন্ত যেতে চায় না। তাই সিংহভাগ ধর্ষণের ঘটনা অপ্রকাশিতই থেকে যায়। বর্তমান অবস্থায় ধর্ষণের নোংরা এই মহামরি থেকে রেহায় পায়নি ভাই থেকে বোন, শিক্ষক থেকে ছাত্রী, ছাত্র থেকে শিক্ষিকা, পুলিশ থেকে বিচারপ্রার্থী নারী। বাংলাদেশ এমন সংবাদও দেখেছে করোনায় আক্রান্ত নারীও চিকিৎসা নিতে গিয়ে ধর্ষিত। ভোট না দেওয়ায় জনসম্মুখে ধর্ষণ। ত্রাণ নিতে ধর্ষণ। ছেলে-মেয়ের সামনে মাকে, ভাইয়ের সামনে বোনকে, স্বামীর সামনে স্ত্রীকে, মায়ের সামনে মেয়ে।
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ সিলেটের ঐতিহ্যবাহ এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে এমনই একটি ন্যাক্কারজনক ঘটে গেছে। ওই দিন নবপরিণীতা এক গৃহবধূ বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এঘটনা সমগ্র জাতির বিবেককে নাড়িয়ে দেয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে স্বামীর কাছ থেকে ওই গৃহবধূকে জোর করে তুলে নিয়ে ছাত্রাবাসে ধর্ষণ করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় কলেজের সামনে তার স্বামীকে বেঁধে রাখা হয়। এ ঘটনায় ভিকটিমের স্বামী বাদী হয়ে শাহপরান থানায় মামলা করেন। মামলায় ছাত্রলীগের ছয় নেতাকর্মীসহ অজ্ঞাত আরও তিনজনকে আসামি করা হয়। আমি যখন এ লেখাটা লিখছি তখন এক বৃদ্ধা ধর্ষিতা হওয়ার খবর দেখে মনটা আরও বিষণœ হয়ে গেল। ৩ অক্টোবর, ২০২০ কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, মুন্সীগঞ্জে ৭২ বছরের এক বৃদ্ধা ধর্ষিতা হয়েছেন। ধর্ষক কাদের শেখ (৩৮) বৃদ্ধাকে ১০টি ডিম ও এক শ টাকার বিনিময়ে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। ২ অক্টোবর রাতে এশার নামাজের জন্য ওজু করতে গিয়ে মুন্সীগঞ্জ পৌর এলাকার পূর্ব শীলমন্দির এলাকায় ধর্ষণের শিকার হন ওই বৃদ্ধা। ধর্ষিতা এখন মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অভিযুক্ত কাদের শেখ একই এলাকার মৃত আমির শেখের পুত্র। ধর্ষিতা বৃদ্ধা ও পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে এশার নামাজ পড়ার জন্য ওজু করতে ঘর থেকে বের হন পূর্ব শীলমন্দির এলাকার ৭২ বছর বয়সের ওই বৃদ্ধা। এ সময় এলাকার চিহ্নিত মাদকসেবী কাদের শেখ (৩৮) তার মুখ চেপে ধরে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরে বৃদ্ধার ছেলেদের হত্যার হুমকি দিয়ে একই রাতে আবারো অভিযুক্ত কাদের ১০টি ডিম ও ১০০ টাকার বিনিময়ে বৃদ্ধাকে ঘটনা ধামাচাপা দিতে বলে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি ধর্ষিতা ওই বৃদ্ধা মামলা করেছেন। অন্যদিকে ধর্ষকের পক্ষের লোকজন মামলা তুলে নেয়ার জন্য বৃদ্ধার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।
‘‘বাংলাদেশে ধর্ষণের ঘটনার সংখ্যা, তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এখানে দেশে বর্তমানে ‘ধর্ষণের সংস্কৃতি’ বিরাজ করছে। ‘ধর্ষণের সংস্কৃতি’ বলতে এমন এক সংস্কৃতিকে বোঝানো হয়, যেখানে সমাজের প্রত্যেক নারী, শিশু কিংবা কিশোরী বালিকা ধর্ষণের মতো পরিস্থিতির শিকার হতে পারে। শুধু পুলিশ পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে ২০১৯ সালে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৫৪০০টি। এ তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ধর্ষণের হার ৩.৮০ অর্থাৎ প্রতি ১ লাখ নারী-নারীর মধ্যে প্রায় ৪ জন নারী-শিশুকেই ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে, যা স্মরণকালের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। আমরা দেখতে পাই ১৯৯১, ২০০১, ২০১১ ও ২০১৮ সালে প্রতি লাখে ধর্ষণের হার যথাক্রমে ০.৩৯ জন, ২.৩৭ জন, ২.৩৮ জন ও ২.৪৫ জন। শুধু পরিসংখ্যান বিবেচনায় ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে ধর্ষণের এ হার বাড়ার পরিমাণ প্রায় প্রতি লাখে ১.৩৫ জন বা এক-তৃতীয়াংশ। যদিও নারী ও শিশুর প্রতি সার্বিক সহিংসতা বা নির্যাতনের প্রকাশিত ঘটনার মাত্রা আরও অনেক বেশি। ২০১৭ ও ২০১৮ সালে যথাক্রমে প্রতি লাখে এ হার ৮.১৮ জন ও ৭.২১ জন। আর ২০১৯ সালের প্রথম ৬ মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ১০ হাজার ১৫৯টি এবং হার বৃদ্ধির কথা বিবেচনা করলে প্রায় এটা আগের প্রায় দ্বিগুণ। অন্যদিকে, আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বলছে, ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে ধর্ষণের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৮ সালে যেখানে মোট নারী ও শিশু ধর্ষণের সংখ্যা ছিল ৭৩২টি, সেখানে ২০১৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪১৩টি (আসক, ২০২০)। প্রকৃত ঘটনা এর চেয়েও আরও অনেক বেশি। পরিসংখ্যান বিবেচনায় বাংলাদেশে যে ধর্ষণের সংস্কৃতি বিরাজমান, তা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ এসব পরিসংখ্যান দেয় না।’’ —৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দৈনিক প্রথম আলো।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ৪ হাজার ৬২২ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১ হাজার ৭০৩ জন। ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ২৪৫ জনকে। অপহরণের শিকার হয়েছে ১৪৭ জন। নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে ২৬৪ জন। ফতোয়ার শিকার হয়েছে ২৪ জন। শুধু বর্তমানের চিত্র নয় ২০০১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ধর্ষণের পরিসংখ্যান দেখলে আতঙ্কিত হতে হয়। বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’র তথ্যানুসারে এই সময়ে মোট ধর্ষণের শিকার ১৩ হাজার ৬৩৮ জন, দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ২ হাজার ৫২৯ জন এবং ধর্ষণের শিকার শিশুর সংখ্যা ৬ হাজার ৯২৭। ধর্ষণ পরবর্তী খুন ১ হাজার ৪৬৭ এবং ধর্ষণ পরবর্তী আত্মহত্যা ১৫৪ জনের।
এই সব সংখ্যা কি শুধুই নারীর নিরাপত্তাহীনতার চিত্র তুলে ধরে? তা কি আমাদের নৈতিক ও সাংস্কৃতিক অবক্ষয়ের এক লজ্জাজনক দলিল নয়? রাষ্ট্রক্ষমতার পরিবর্তন হলেও কিন্তু একটা বিষয়ে অভিন্নতা আছে তা হলো, নারীর ওপর এই সহিংস আক্রমণ, ধর্ষণ, হত্যার সঙ্গে যাদের নাম উঠে আসে তাদের অনেকেই ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত। তাহলে রাষ্ট্র ও সমাজের নাগরিক হিসেবে স্বাধীন ও স্বচ্ছন্দ বিচরণের অধিকার নিশ্চিত না করতে পারলে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
সমাজবিজ্ঞানীরা বর্তমান সময়ে ধর্ষণকে ব্যাধি হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। আর এ ব্যাধির জন্য দায়ী করেছেন পরিবার, সমাজ ও পারিপাশ্বিক মূল্যবোধের অবক্ষয়কে। তাঁদের মতে, বর্তমানে সমাজে যে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছে তা অব্যাহত থাকলে আগামীতে এর কুপ্রভাব সমাজের ভিত্তিমূলকে নাড়িয়ে দিতে পারে। দেশে পর্নোগ্রাফি-সংক্রান্ত আইন থাকলেও কোড অব কন্ডাক্ট, ইন্টারনেট কারা ব্যবহার করবে এবং এর নজরদারির বিষয়গুলো সঠিকভাবে মানা হচ্ছে না। তবে দিন দিন যেভাবে অবক্ষয়ের মাত্রা বেড়ে চলেছে, সে হিসেবে এ ধরনের প্রতিটি অপরাধের ক্ষেত্রে সরকারকে দ্রুত বিচার এবং শাস্তির ব্যবস্থাকে নিশ্চিত করতে হবে। শুধু আইন করে বসে থাকলে চলবে না। আইনের প্রয়োগ ও বাস্তবায়নকে নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে অপরাধীকে দ্রুত কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে মনে করেন। আইনবিদরা বলছেন, এ পরিস্থিতির উন্নতির জন্য মামলার সঠিক তদন্ত ও আইনের কঠোর প্রয়োগ প্রয়োজন।
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. সালমা আলী গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে বলেন, মাদকাসক্ত যারা তাদের মাদক গ্রহণের পর নিজের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তেমনি যারা ভার্চুয়াল জগতে পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত তাদেরও মাথায় থাকে না যে তারা কোন জগতে আছে। আমাদের এটি বুঝতে হবে যে যৌনতা সম্মানজনক একটি বিষয়। মানুষের মধ্যে যৌনতা থাকা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু কুরুচিপূর্ণ কিছু মানুষ যৌনতাকে এখন বিকৃত পর্যায়ে নিয়ে গেছে। ধর্ষণ এখন মহামারী আকার ধারণ করেছে। লোক-লজ্জা বা সম্মানের ভয়ে প্রকাশ করেনি ভুক্তভোগীরা। ধর্ষণের পর বিচার চাইতে গিয়ে যা হয় তা তো গণধর্ষণ! নারীর সুরতহাল রিপোর্ট করেন পুরুষ ডাক্তার, পুলিশ। সঠিক বিচার পেলে এ কষ্টও না হয় ভুলে যেত নারী। তাতো হয় না। তাহলে আমাদের নারী কি ধর্ষিত হতেই থাকবে? কুরুচিশীল নিষ্ঠুর মানুষই ধর্ষণ করে। ধর্ষকরা আবার খুনিও হয়। অমানুষগুলোই ধর্ষণ আর ধর্ষণের পর খুনের মতো ঘটনা ঘটাতে পারে। ধর্ষকদের প্রকাশ্যে বিচারের আওতায় আনা হোক। প্রকৃত সত্যটা হলো এই, এদেশে ধর্ষণ মামলায় আইনের প্রয়োগ খুব কম। তাই ধর্ষকরা বেপরোয়া হয়ে ওঠছে। শহর-গ্রামগঞ্জ সর্বত্রই ধর্ষিত হচ্ছে নারী। বাড়িতে কর্মস্থলে পথে ধর্ষিত হয় নারী। ধর্ষকদের কাছে শিশু বৃদ্ধাও রেহাই পায় না। কিছুতেই ধর্ষণ থামছে না। ধর্ষণের এ ব্যাপকতার পেছনে অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে, মূল্যবোধের অবক্ষয় আর অপরাধীর শাস্তি না হওয়া। দেশে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে যথেষ্ট শক্তিশালী আইন থাকা সত্ত্বেও নির্যাতনকারীরা রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়সহ বিভিন্ন উপায়ে পার পেয়ে যায় বলেই ধর্ষণ থামছে না। নিত্যই ব্যভিচার ও ধর্ষণকামিতার ঘটনা ঘটেই চলেছে। এক্ষেত্রে থাকছে না বয়স, স্থান, কাল, পাত্রের ভেদ। রাত-বিরাতে নয় শুধু, দিনদুপুরে প্রকাশ্যে ধর্ষণের ঘটনাও ঘটছে। অপসংস্কৃতি আর আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসন আমাদের সমাজকে কতটা ক্ষতবিক্ষত করছে তা হাল আমলের ধর্ষণের চিত্র দেখলেই বেশ বোঝা যায়। যৌন হয়রানি শুধু নারীর বিরুদ্ধে নয়, মানবতার বিরুদ্ধেও চরম অপরাধ। ভারত ও বাংলাদেশে ধর্ষণের অপরাধ বেশি হয়ে থাকে। খুন, ধর্ষণ বর্তমান পৃথিবীর নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। আমাদের দেশে এর মাত্রা যেন সব সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ধর্ষণের এ ব্যাপকতার পেছনে অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে, মূল্যবোধের অবনতি আর অপরাধীর শাস্তি না হওয়া। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্লিপ্ততাই এ জন্য দায়ী। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে যথেষ্ট শক্তিশালী আইন থাকা সত্ত্বেও নির্যাতনকারীরা বিভিন্ন উপায়ে পার পেয়ে যায়।
পরিশেষে বলতে চাই, ধর্ষণের ঘটনা নতুন কোনো বিষয় নয়। যুগ যোগ ধরেই সারা পৃথিবীতে তা চলে আসসে। তবে বর্তমানে সহজলভ্য স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেটের অপব্যবহারে দেশে ধর্ষণ বেড়ে চলেছে। এ অবক্ষয়ের হাত থেকে বাঁচাতে হলে সমাজ থেকে ধর্ষণ ও সামাজিক অপরাধগুলো প্রতিরোধের দায় শুধু পরিবারের নয়। দায়িত্বশীল মহলকেও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। ধর্ষণ রোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে। অবাধ মেলামেশার সুযোগ, লোভ-লালসা-নেশা, উচ্চাভিলাষ, সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতিকে রুখতে হবে কেননা, এই অপসংস্কৃতি মানুষকে প্রবলভাবে ব্যভিচারে প্ররোচিত করে, ধর্মীয় শিক্ষা ও যৌন শিক্ষাগ্রহণ করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অপসংস্কৃতিচর্চার পরিবর্তে শিক্ষণীয় বিনোদনমূলক ও শালীন সংস্কৃতিচর্চার নিশ্চিত করতেই হবে। ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে চরম নৈতিক অবক্ষয়, আকাশ সংস্কৃতির বিরূপ প্রভাব, মাদকের বিস্তার, বিচারহীনতা, বিচার প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা ধর্ষকদের বিচার না হওয়ার কারণে সমাজে ধর্ষণের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। তাই বিচারহীনতা বা বিচারের নামে দীর্ঘসূত্রিতা পরিহার করে ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূল শাস্তির আওতায় আনতে পারলেই এ অপরাধপ্রবণতা রোধ করা অনেকটাই সম্ভব হবে।
মাহবুবুল আলম : কবি-কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও গবেষক।