দেশে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ কমার কোনো লক্ষণ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। সরকারি হিসাবে বলা হচ্ছে গত চব্বিশ ঘণ্টায় নতুন করে ১৭০৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে শনিবার জানানো হয়, এ মাসের ১৭ দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতলে ভর্তি রোগীর যে সংখ্যা তা জুলাই মাসের সংখ্যার দ্বিগুণ।
এবার ডেঙ্গু মৌসুম দীর্ঘায়িত হবে কিনা?
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের গবেষণা জানিয়েছে, জুলাই মাসে রোগীর সংখ্যা ছিলো ১৬ হাজার ২শ ৫৩ জন, যা আগস্ট মাসের ১৭ তারিখ পর্যন্ত হয়েছে ৩৩ হাজার ১৫ জন।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি হওয়ার কারণে উদ্বেগ অনেক বেশি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার ডেঙ্গুর মৌসুম দীর্ঘায়িত হবার সম্ভাবনা কম বলে মনে করে জানান, ‘‘বাংলাদেশে ১৯৫৩ সালের পর এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। তার কারণে বছরের শুরুতে এডিস মশার ঘনত্ব অনেক বেড়েছে। সেটা ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত আরো বেড়েছে। ফলে জুন-জুলাইতে বাংলাদেশে এডিস মশার একটি বড় কম্যুনিটি ডেভেলপ করেছে। আর ডেঙ্গু ভাইরাস যেহেতু ঢাকায় আগে থেকেই ছিল, সেটা ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ডেঙ্গুর এখন যা পরিস্থিতি, তার থেকে খুব বেশি বাড়বে বলে মনে হয় না। তবে এটি খুব কমে যাবে এটাও বলা যাবে না। সরকারের নেয়া নানা রকম উদ্যোগ এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ায় ডেঙ্গু না বাড়ার কারণ হতে পারে।’’
তবে সরকারের মশা মারার ওষুধ আনা এবং বিতরণ নিয়ে নানা রকম সমালোচনাও রয়েছে। তবে বাংলাদেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে। এর মধ্যে জুলাই মাসের শেষের দিকে ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া যেতে শুরু করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে আক্রান্ত রোগীদের প্রায় সবাই ঢাকা থেকে গেছেন, কিংবা তাদের মাধ্যমে অন্যদের মধ্যে ডেঙ্গু ছড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেব বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ১৭০৬ জন মানুষ ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭৩৪জন। আর জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৪০জন মানুষ মারা গেছেন বলে বলছে স্বাস্থ্য বিভাগ। যদিও বিভিন্ন বেসরকারি হিসেব ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে মৃত্যুর সংখ্যা এর চেয়ে বেশি বলা হচ্ছে।
ঈদের ছুটিতে শহর এলাকার বাসিন্দাদের গ্রামে যাওয়া এবং বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে থাকার ফলে বিশেষ করে ঢাকায় ডেঙ্গু বাড়তে পারে এমন একটি আশংকার কথা বলছেন অনেকে।
সরকারের সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক ডা. সানিয়া তাহমিনা জানান, ‘‘গ্রাম থেকে শহরে ফেরা মানুষের জন্য বর্তমান সপ্তাহটি বিশেষভাবে সচেতন থাকতে হবে। ধরুন যিনি ঢাকার বাইরে গেছেন, যাওয়ার আগে হয়ত বাড়িঘর সব পরিষ্কার করে গেছে। কিন্তু এরপর তো বৃষ্টি হয়েছে, বিভিন্ন জায়গায় পানি জমেছে।
সুতরাং ঢাকায় ফেরার পর তাকে যেটি করতে হবে, তা হলো বাড়িঘরে যেসব জায়গায় পানি জমে থাকতে পারে সেসব জায়গা পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। যাতে করে এডিস মশা জন্মাতে না পারে। কারণ এডিস মশার জীবন চক্রই এরকম যে একটি মশাও বাসার চার পাঁচজনকে আক্রান্ত করে ফেলতে পারে। যে কারণে এডিস মশা থেকে নিজেকে দূরে রাখার সমস্ত উপায় অবলম্বন করা প্রয়োজন।’’
বিবর্তন ডেস্ক রিপোর্ট