বাইরে ধুলো বালি মেখে খেলাধুলা অনেক আগেই বন্ধ। স্বাভাবিক কর্মজীবনে ফিরে আসার চেষ্টায় মা-বাবাকে কাজে বেরতে হচ্ছে। যদিও বাচ্চাদের কোভিডের আশঙ্কা বড়োদের চেয়ে অনেক কম। কারণ যে বিশেষ রিসেপটরে ভর করে শরীরে হানা দেয় কোভিড-১৯, সেই এসিই-২ রিসেপটর, প্রাপ্তবয়স্কদের শ্বাসনালি, ফুসফুস, অন্ত্র, পাকস্থলী ইত্যাদি জায়গায় থাকলেও, শিশুর শরীরে এর সংখ্যা অনেক কম। ফলে তাদের রোগ কম হয়, জটিলতাও হয় না বিশেষ। তবুও নিউ নর্ম্যাল সময়ে বাচ্চাদেরকেও রাখতে হবে বাড়তি সতর্কতায়।
যতই সুরক্ষা থাক-না কেন, শিশুদের সংক্রমণ একেবারে হয় না, এমন নয়। তার ওপর স্কুল কিংবা পার্ক আজীবনের জন্য বন্ধ থাকবে এমন নয়। ভাইরাস বিদায় নেওয়ার আগেই সে সব খুলে দেওয়া হবে। ফলে বাচ্চাদের বিপদ বাড়বে, যদি না এখন থেকেই সুরক্ষার নিয়ম শেখানো হয় তাদের।
সুরক্ষার নিয়ম
● সংক্রমণ ঠেকানোর সবচেয়ে বড়ো উপায় হলো পরিচ্ছন্নতা। বাচ্চাকে এখন বেশিক্ষণ হাতের কাছে পাচ্ছেন। এই সুযোগে সেসব শিখিয়ে দিন। যেমন খাওয়ার আগে ও শৌচাগার থেকে এসে হাত ঘষে ঘষে সাবান দিয়ে ধোওয়া, বাইরে থেকে এসে হাত-পা সাবান দিয়ে ধোওয়া, দাঁত দিয়ে নখ না-কাটা, আঙুল না-খাওয়া, কথায় কথায় মুখে-নাকে-চোখে হাত না-দেওয়া, কারও সর্দি-কাশি হলে তার কাছে না-যাওয়া ইত্যাদি যেন তার মাথায় গেঁথে যায় মনে রাখতে হবে।
● মায়েদের নিজেদেরও কিছু অভ্যাস পালটানো দরকার। যেমন আঁচল বা ওড়না দিয়ে বাচ্চার মুখ-নাক না-মোছানো, মুখে মুখ লাগিয়ে আদর না-করা, পরিচ্ছন্ন না হয়ে বাচ্চাকে কোলে না-নেওয়া ইত্যাদি। এতে সংক্রমণের আশঙ্কা কম থাকে।
● বাচ্চাদের বন্ধুদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে খেলাধুলা করতে পারবে না, তা বুঝতে অনেক সময় লেগে যাবে। ধৈর্য ধরে, নিজেদের উদাহরণ দিয়ে ধীরে ধীরে বোঝান। নিজেরাও যে বিপদ এড়াতে সবার সঙ্গে দূরত্ব রেখে মিশছেন, সেটা যেন সে বোঝে। বাড়ির বয়স্ক সদস্যের সঙ্গে খেলতে পারে সে। তবে আত্মীয় বা বন্ধুদের বাড়ি যাতায়াত বন্ধ রাখুন। রোগ ঠেকাতে বেশিরভাগ সময় যে বাড়িতে থাকতে হবে, তা যেন ধীরে ধীরে বাচ্চা বুঝতে শেখে।
● বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে কোনো জনবহুল জায়গায় যাবেন না। বাইরের কোনো জিনিসে হাত দিতে দেবেন না।
● অ্যালার্জিজনিত হাঁচি বা হাঁপানি থাকলে সাবধানে রাখুন। দরকার হলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধপত্র বা ইনহেলার ব্যবহার করুন।
● দিনে দু-বার জীবাণুনাশক দিয়ে ঘর মুছে নিন। বাচ্চা যাতে কিছু মুখে না দিয়ে ফেলে সেদিকে খেয়াল রাখুন।
● ছোট বাচ্চাদের মলত্যাগের পর তাকে ভালো করে পরিষ্কার করুন।
● কথায় কথায় বাইরের খাবার খাওয়াবেন না। ঘরোয়া পুষ্টিকর খাবারের অভ্যাস গড়ে তুলুন।
● সর্দি-কাশি ও জ্বর হলে দুশ্চিন্তা করবেন না। বাচ্চাদের কোভিডের উপসর্গ একটু অন্যরকম হয়। পেটের গোলমাল, ডায়ারিয়া, বমি থাকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। তবে উপসর্গ যা-ই হোক-না কেন, বাচ্চা অসুস্থ হলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।
● শিশুদের সব সময় মাস্ক পরিয়ে রাখার প্রয়োজন নেই। স্কুল খুলে গেলে পরতে হবে। কাজেই অভ্যাস তৈরি করে রাখতে হবে।
ফিচার ডেস্ক