সঠিক ও কার্যকরী পরিকল্পনাই ফিরিয়ে আনতে পারে সেবার মান
¯^াস্থ্যসেবা মানুষের মৌলিক মানবিক চাহিদাগুলোর মধ্যে অন্যতম। জনসাধারণের ¯^াস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সাংবিধানিকভাবইে বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য। কিন্তু এদেশে এখনও জনসাধারণের জন্য সরকারের প্রদত্ত ¯^াস্থ্যসেবা অপ্রতুল। দেশের ১৬ কোটি ৪৪ লাখ মানুষের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষ গ্রামে বাস করে। সরকারি হাসপাতালসমূহে চিকিৎসক সংকট ছাড়াও সিনিয়র স্টাফ নার্সসহ অন্যান্য বিভাগের লোকবল চরম সংকটে। জেলা সদর ও উপজেলার বেশির ভাগ হাসপাতালে এক্স-রে মেশিন, ডেন্টাল যন্ত্রপাতি, প্যাথলোজিস্ট যন্ত্রপাতি, অর্টি বিভাগের যন্ত্রপাতিসহ মূল্যবাস চিকিৎসা সরঞ্জাম ব্যবহারের অভাবে অকেজো হয়ে পড়ছে। এই সুযোগে দেশজুড়ে গড়ে উঠেছে সরকার অনুমোদিত ও অনুমোদনহীন অসংখ্য বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার। দেশে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিদিন গড়ে ৫টি করে বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র গড়ে ওঠছে। সেবার নামে অনেক প্রতিষ্ঠানেই অত্যাধিক অর্থ আদায়, প্রতারণা, ভুল চিকিৎসা ও নিয়ন্ত্রণহীনভাবে কার্যক্রম চলছে। কিন্তু সেখানে ভোক্তা¯^ার্থ কতটা রক্ষিত হচ্ছে সেটা দেখার কেউ নেই। দেশের বেশির ভাগ চিকিৎসকের বাণিজ্যিক মন মানসিকতার প্রবণতা থাকায় সাধারণ মানুষ সরকারি হাসপাতালে সঠিক চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না। এরই সুযোগে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক বা স্থানীয় কোন হাতুরে অনভিজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা সেবার জন্য জনসাধারণ ঝুঁকে পড়েন।
সরকারি হাসপাতালগুলোতে ব্যবস্থাপনার মান নানান চাপে দিন দিন খারাপ হয়েছে, তবুও এই সরকারি হাসপাতালগুলোই গরিব মানুষের ভরসা। গত দেড় দশকে চিকিৎসাশিক্ষা খাতে দুর্নীতি এবং রাজনীতিকরণ এমন মাত্রায় বেড়েছে যে সাধারণ মানুষের জন্য চিকিৎসাসেবা এখন সেবা নয়। মানুষ পয়সা দিয়ে চিকিৎসা কিনছে।
বেসরকারি খাতে চিকিৎসাবাণিজ্য বড় আকারে বিস্তার লাভ করলেও এই বাণিজ্য নিয়ে মানুষের অভিযোগের অন্ত নেই। ডাক্তাররা ডায়াগনস্টিক সেক্টরের সঙ্গে যোগসাজসে বিপুলতর টেস্ট করান। ওষুধ কোম্পানির ব্যবসা বাড়াতে ডাক্তাররা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ওষুধ লেখেন। ওষুধের দাম ভয়ানকভাবে বেড়ে চলেছে। এটা নিয়ন্ত্রণের কোনও কার্যকরী ব্যবস্থা দেশে সচল নাই। চিকিৎসা ব্যয় বাড়লেও মানুষের ভোগান্তি কমছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারেরর ভ্রান্ত নীতি ও কার্যকর মনিটরিং এবং ব্যবস্থাপনার অভাবেই এই নিয়ন্ত্রণহীন চিকিৎসা বাণিজ্যের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ফলে চিকিৎসা খরচ মানুষের কাছে এক ভীতিকর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দেশের রাস্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সচিব, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদসহ ¯^চ্ছল জনগোষ্ঠীর বড় অংশ যেকোনও রকম রোগেই বিদেশি চিকিৎসাব্যবস্থার শরণাপন্ন হন। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার ব্যবস্থাপনার মান প্রযুক্তি নির্ভর, ¯^চ্ছ ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতেই হবে। এই ‘আস্থা’ ফিরিয়ে আনার কাজটিই করতে হবে সর্বাগ্রে।
সরকারি চিকিৎসা সেবাখাতে চাপ বেড়েছে বহুগুণ কিন্তু সেই তুলনায় জনবল এবং অবকাঠামোগত সুবিধা বাড়েনি। বিনিয়োগ বাড়েনি। সরকারি চাকুরিরত ডাক্তারদের কর্মপরিবেশ, পদোন্নতি, পারিশ্রমিক বিষয়েও নতুন করে ভাবা দরকার। তাদের কর্মনীতিও নতুন ও যুগোপযোগী করা দরকার। একটা ¯^য়ংক্রিয়, সার্থক, কার্যকর, ¯^চ্ছ, জবাবদিহিতামূলক ব্যবস্থাপনাই সরকারি ও বেসরকারি ¯^াস্থ্যখাতে শৃংখলা আনতে পারে। ¯^াস্থ্যসেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্ত জবাবদিহিতার আওতায় আনা দরকার। জাতীয় ¯^ার্থে এ সংক্রান্ত আইন বাস্তবায়ন ও সেবা নিশ্চিত করতে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগকে আরো তৎপর হওয়ার বিকল্প নেই। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসকদের জনসাধারণের মাঝে যথাযথ ¯^াস্থ্যসেবা প্রদানের মানবিক মানসিকতার বিষয়ে সচেতন করে তুলতে হবে। তবেই সাধারণ মানুষের নিরবিচ্ছিন্ন ¯^াস্থ্যসেবা পাওয়ার বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত হতে পারে।