প্রায় পাঁচ বছর আগে ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক এই সময়’ পত্রিকায় এই শীতে বান্দরবানে ও এই শীতে পাহাড়ী জনপদে, শিরোনামে আমার দুটি লেখা প্রকাশিত হয়েছিল। পাঠক মহলে লেখা দুটি ব্যাপক সারা ফেলেছিল। শীত মানেই পাহাড়ের ডাকে, অরণ্যের ডাকে, সাগরের ডাকে বেড়িয়ে পড়া। কিন্তু এর বাইরেও অনেক দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণপ্রেমিরা পৌঁছে যান। কেউবা ঢাকার কাছাকাছি কোনো দর্শনীয় স্থান, রিসোর্টে ছুটে যান। ভ্রমণের ওপর অনেক লেখাই লিখেছি। এবার ময়মনসিংহের দরজা প্রকৃতির নগরী ভালুকাকে নিয়ে আমাদের আয়োজন।
ঢাকার মহাখালী থেকে যেকোনো পরিবহণে দু-ঘণ্টায় ভালুকায় পৌঁছে যাবেন। ভালুকায় পৌঁছার পর মেঘ মাটি রিসোর্ট, তেপান্তর রিসোর্টে থাকতে পারেন। আর যারা হোটেল এ থাকতে চান তারা ভালুকা বাজার রোডে আওয়াল শপিং সেন্টারে আবাসিক হোটেল, হোটেল নিরব ইন্টারন্যাশনাল এ থাকতে পারেন। এই হোটেলে উন্নতমানের সেবার সাথে সাথে নিরাপত্তাও পাবেন। হোটেল থেকে নীচে নেমেই পেয়ে যাবেন উন্নত মানের খাবার হোটেল। নিরব ইন্টারন্যাশনাল আবাসিক হোটেলের ম্যানেজার মো. মোখলেছুর রহমান আপনাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন।
এবার ভালুকার দর্শনীয় স্থানের পরিচয় দিচ্ছি। প্রথমেই ঘুরে আসতে পারেন মল্লিক বাড়ি ব্রিজ, কিছু দূর গেলেই পেয়ে যাবেন মল্লিক বাড়ির বিখ্যাত মালাই চায়ের দোকান। যেতে পারেন ভালুকা ইউনিয়নের চির সবুজ মেদিলা ও ধলিয়া গ্রামে। এখানে গিয়ে গ্রাম বাংলার সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারবেন। যারা নির্জনতা পছন্দ করেন তারা উথুরায় স্বাপেক্ষে কুমির খামার, মাল্টার বাগান, ড্রাগন ফলের বাগান নিজের চোখেই দেখতে পাবেন। এই দুটি বিদেশী ফল কীভাবে ভালুকায় উৎপাদিত হচ্ছে তা দেখে আসতে পারবেন। অরণ্যপ্রেমিরা যেতে পারেন কাদিগর জাতীয় উদ্যানে। এই নির্জন উদ্যানে মুখ পোড়া বানর, রেসাস বানর, কয়েক প্রজাতির সাপ, অগণিত দেশি ও বিদেশি অতিথি পাখি দেখতে পাবেন। দেখতে পাবেন সেখানে বসবাসরত কোচ আদিবাসীদের সংগ্রামী জীবন।
যেতে পারেন দেশের প্রথম সৌদি খেজুর বাগান, পারাগাও গ্রামে মোতালেব ভাই এই সৌদি খেজুর বাগান তৈরি করেছেন। শত শত দর্শনার্থী এই খেজুর বাগান পরিদর্শনে যান। দেখে আসতে পারেন ভালুকার প্রাণ খিরু নদী। এই খিরু নদীকে নিয়ে চলচ্চিত্রের গান যেমন চিত্রায়িত হয়েছে তেমনি কবিরা কবিতায় খিরু নদীকে নিয়ে এসেছেন। যদিও এই খিরু নদী তার নাব্যতা হারিয়েছে। দেখে আসতে পারেন ভালুকার গর্ব ওয়াহেদ টাওয়ার। এই ওয়াহেদ টাওয়ার এ গিয়ে, ডকরোজ ক্যাফেতে ফাস্টফুড ও চাইনিজ খাবারের স্বাদ গ্রহণ করতে পারেন। নৌকা ভ্রমণ এ যেতে পারেন হারলা বিলে। এই হারলা বিলে কয়েক রংয়ের শাপলা ফুল দেখতে পাবেন।
ভালুকার যেখানেই যাবেন সেখানেই গ্রাম বাংলার সৌন্দর্য্যকে উপভোগ করতে পারবেন। ভালুকার রমনীরা পিঠা তৈরি করতে যথেষ্ট পারদর্শী। এই শীতে ভালুকায় গিয়ে বিভিন্ন দোকানে শীতের পিঠা খেতে পারবেন। ভালুকার তৈরি শীতের পিঠার সুনাম দেশব্যাপী।
ভালুকায় যখনই যাবেন দলবদ্ধ হয়ে যাবেন। যদি থাকতে চান কয়েকদিন তাহলে রিসোর্ট বা হোটেলে বুকিং দিয়ে তবেই যাবেন। ঢাকা থেকে ভালুকা পৌঁছাতে আপনার মাত্র দু-ঘণ্টা সময় ব্যয় হবে। যেদিন যাবেন সেদিনই যদি ফেরত আসতে চান তাহলে একজনের সর্বোচ্চ খরচ প্রায় দুই হাজার টাকা ব্যয় হবে। আর যদি রিসোর্ট বা হোটেলে থাকেন তাহলে তার খরচ আলাদা। এই শীতে নিশ্চয়ই আপনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া যেকোনো প্রান্তরে ছুটে যাবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এবার এই শীতে আপনার সফর-সূচিতে ভালুকাকে অন্তর্ভুক্ত করুন। দেখে আসুন প্রকৃতির নিজের হাতে তৈরি করা ভালুকা নগরীকে।
সৈয়দ রশিদ আলম