সপ্তাহের প্রথম দিন, সেই স্ত্রীলোকেরা খুব ভোরে ঐ সমাধিস্থলে এলন। তাঁরা যে গন্ধদ্রব্য ও মসলা তৈরি করেছিলেন তা সঙ্গে আনলেন। তাঁরা দেখলেন সমাধিগুহার মুখ থেকে পাথরখানা একপাশে গড়িয়ে দেওয়া আছে; কিন্তু ভিতরে ঢুকে সেখানে প্রভু যীশুর দেহ দেখতে পেলনা। তাঁরা তখন অবাক বিস্ময়ে সেই কথা ভাবছেন, সেই সময় উজ্জ্বল পোশাক পরে দুজন ব্যক্তি হঠাৎ করে তাদের সামনে দাঁড়ালেন, ভয়ে তারা নিচু ও নতজানু হয়ে রইলেন। ঐ দুজন তাদের বললেন , তোমরা তাঁকে মৃত্যদের মাঝে খুঁজছ কেন? তিনি এখানে নেই তিনি পুনরুত্থিত হয়েছেন। তিনি যখন গালীলে ছিলেন তখন তোমাদের কী বলেছিলেন! মনে করে দেখ? তিনি বলেছিলেন, মানবপুত্রকে অবশ্যই পাপী মানুষদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হবে ; তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ হতে হবে ; আর তিনদিনের দিন তিন আবার মৃত্যুদের থেকে জীবিত হয়ে উঠবেন। তখন যীশুর সব কথা তাদের মনে পড়ে গেল। তারপর তারা সমাধিগুহা থেকে ফিরে এসে সেই এগারো জন প্রেরিতদের ও তাঁর অনুগামীদের এই ঘটনার কথা জানালেন (লূক ২৪:১-১০) কারণ প্রভু যীশু পুনরুত্থিত হবেন তিনি তা পূর্বেই বলেছিলেন। তাঁ এই কথার পূর্ণতা পেল।
ইস্টার সানডে কী?
প্রভু যীশু ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার তিনদিন পর পুনরুত্থিত হয়ে এই ধরাতে আবার আগমন করেন। যীশু খ্রীষ্টের এই পুনরুত্থান/আগমনের দিনটিকে খ্রীষ্ট বিশ্বাসীগণ ইস্টার সানডে হিসাবে পালন করে। বাংলাদেশে ইস্টার সানডে উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করেন প্রাণপ্রিয় খ্রীষ্টভক্তগণ। ইস্টার সানডে হলো ৪০ দিন উপবাসের শেষ দিন। গুড ফ্রাইডে পালনের পরই আসে ইস্টার সানডে। এ সময়ে উপবাসসহ প্রার্থনা করা হয় ,কারণ এই দিনে সবকিছুর উপর বিজয় লাভ করে যীশু পূনরুত্থিত হয়েছেন।
রবিবার পবিত্র ইস্টার সানডে। এই দিনে ২০০০ বছরেরও বেশি সময় পূর্বে যীশু খ্রীষ্ট কবর থেকে পুনরুত্থিত হয়েছিলে বাইবেল মতে ঈশ্বরের দক্ষিণ পাশে বসে আছেন এবং শেষ বিচার করতে আসবেন। খ্রীষ্টের এই পুনরুত্থানের সংবাদ খ্রীষ্ট সমাজের জন্য খুবেই আনন্দের এবং তাৎপর্যপূর্ণ।এই দিনটি সকল খ্রীষ্টানেরা ইস্টার সানডে হিসাবে পালন করে।এই দিনটি সকল পাপীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তাদের স্বর্গে যেতে আর কোণো বাধা রইল না।
দিনটির তাৎপর্য
সাধু পৌল বলেন, ‘‘হে আমার প্রিয় ভ্রাতৃগণ সুস্থির হও, নিশ্চল হও, প্রভুর কার্য সর্বদা উপচিয়া পড়ে ,কেননা তোমরা যান যে, প্রভুতে তোমাদের পরিশ্রম নিষ্ফল নয়” (১ম করি ১৫:৫৮)
আমাদের চলমান গতির ধারায় বারবার চলে আসে নানা পর্ব নানা আচার অনুষ্টান। এ সব আচার অনুষ্ঠানের মধ্যে কোনটি জাতীয় কোনটি ভাষাগত। তেমনি ধর্মীয় অনেক পর্ব বা অনুষ্ঠান রয়েছে, তাদের মধ্যে যেমন ইস্টার সানডে পর্ব। যীশু খ্রীষ্টের পুনরুত্থান অন্যতম। প্রমাণটি হচ্ছে তাঁর বিশ্বাসী ম-লীর খ্রীষ্টিয় সমাজের অস্তিত্ব। যীশুর পুনরুত্থান ব্যতিরেকে খ্রীষ্ট বিশ্বাসীর বিশ্বাস ও জীবন নিরর্থক ও প্রশ্নবোধক। খ্রীষ্ট যদি পুনরুত্থিত না হয়ে থাকেন। তাহলে মিথ্যাই তোমাদের বিশ্বাস; তোমরা আজও তোমাদের সেই পাপী অবস্থাতেই পড়ে আছ! যীশুর পুনরুত্থান সকল পাপ ও মন্দতার ওপর সুনিশ্চিত বিজয়। যীশু খ্রীষ্টের পুনরুত্থান উৎসবের
ঐকান্তিক কামনা হোক মৃত্যুঞ্জয়ী খ্রীষ্টের সাথে কবর থেকে উঠে পুনরুত্থিত জীবন শুরু করা। পুনরুত্থিত খ্রীষ্টের জ্যোতিতে উদ্ভাসিত হয়ে নতুন মানুষে রূপান্তরিত হওয়া।
খ্রীষ্ট আমাদের নিস্তার পর্বের মেষশাবক যিনি, তিনি কি বলিরূপে উৎসর্গকৃত হননি? সুতরাং এসো অমরা এই উদ্যাপন করি পুরোনো খামির দিয়ে নয়, ধৃষ্টতাও অধর্মের খামি নিয়ে নয় বরং আন্তরিকতা ও সত্যনিষ্ঠার খামি বিহীন রুটি নিয়ে (১ম করি. ৭-৮)। খ্রীষ্টিয় জীবন তো নেতিয়ে পড়া, ঝিমিয়ে পড়া জীবন নয় বরং অন্ধকারের পথ পরিহার কর আলোর পথে এগিয়ে চলা। মৃতদের মধ্যে থেকে খ্রীষ্ট যেমন পিতার মহিমাশক্তিতে পুনরুত্থিত হয়েছেন, তেমনি আমরাও যেন এক নব জীবনের পথে চলতে পারি;(রোমীয় ৫: ৩-৭)এই বাণীর বাস্তবায়নই প্রতিদিন আমাদের ব্যক্তি জীবনে পুনরুত্থান ঘটায়।যেখানে অন্যায়-অন্যায্যতা ও পাপময়তা ঘটছে, সেখানেই যীশু ক্রুশবিদ্ধহয়ে মত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুর বাস্তবতা খুবই প্রকটভাবে অনুভূত হচ্ছে। দেশের মধ্যে চলমান প্রতিহিংসা, ধ্বংসযজ্ঞ, জীবন বিনাশ অত্যন্ত নির্মমভাবে মৃত্যুর সত্যতা ব্যক্ত করেছে। পুনরুত্থান আমাদের ক্ষমাশীল ব্যক্তি ও আলোকিত মানুষ হওয়ার প্রেরণা দান করে। কেননা প্রভু যীশু সব কিছুর উপর বিজয়ী হয়েছে, তাই আমরা ও বিজয়ী, পুনরুত্থানের বারতা তো স্বাধীন ও মুক্ত হওয়ার আহ্বান আমরা তো দুর্নীতির জয়গান গাইতে পারব না। আমরা আলোর পথেই চলব। আমাদের জীবনে খ্রীষ্টর পুনরুত্থান কী আবেদন সৃষ্টি করে? এটাই আমাদের অনুধ্যানের বিষয়। পুনরুত্থানের চেতনা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে কর্মপ্রেরণা হয়ে উঠুক। পুনরুত্থান উৎসব পালনের মধ্যে দিয়ে সকলের হৃদয়-মনে মনে এই প্রতিজ্ঞা বদ্ধপরিপর হোক সমাজের কলুষতা দূরীভূত করে, দুর্নীতির সকল শৃঙ্খলা ভেঙে ঘটাবো শুভ শক্তির উদ্ভব। পুনরুত্থান আমাদের ক্ষমাশীল ব্যক্তি ও আলোকিত মানুষ হওয়ার প্রেরণা জাগাক।
নাহিদ বাবু : তরুণ লেখক ও খ্রীষ্টিয় ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে অধ্যয়নরত।