ইসরাইল গত চল্লিশ বছর থেকে প্রতিবেশী আরব দেশগুলোকে পরাস্ত করার জন্য একের পর এক সমরাস্ত্রর ভাণ্ডর গড়ে তুলছে যে কারণে প্রতিবেশী দেশগুলো কোনোভাবেই ইসরাইলকে পরাস্ত করতে পারছে না। ইজরাইলের অন্যতম মিত্র ব্রিটেন বিশ বছর আগেই ইসরাইলকে পরমাণু অস্ত্রের প্রযুক্তি দিয়েছে। ইসরাইলের পরমাণু বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে প্রায় দুইশত পরমাণু বোমা তৈরি করেছেন। এছাড়া ইসরাইলের তিন বাহিনীকে সর্বশক্তি দিয়ে পরাশক্তিগুলো আঞ্চলিক পরাশক্তিকে পরিণত করেছেন। অতি সম্প্রতি ইসরাইল, ইরানকে মোকাবেলার লক্ষ্যে লেজার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ইরানের যেকোনো দূরপাল্লার মিসাইল ও চালকবিহীন গোয়েন্দা বিমানকে এই লেজার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রতিরোধ করবে। এই লেজার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দীর্ঘ দূরত্বের টার্গেটে আঘাত হানতে সক্ষম। এমনকি মেঘ ও ঘূর্ণিঝড়ের মাঝেও এটি কার্যকর। ইসরাইলের তৈরি আয়রন ডোম মিসাইল একই কাজ করতে সক্ষম।
ইরানের সাথে ইসরাইলের দূরত্ব ১৭০০ কিলোমিটার। কিন্তু ইরানের শাহাব-৩ দূরপাল্লার মিসাইল ইসরাইলের যেকোনো নগরীতে হামলা করতে সক্ষম। ইরানের এই মিসাইলের দূরত্ব ২০০০ কিলোমিটার। এই মিসাইল প্রচলিত অস্ত্র ছাড়াও পরমাণু বোমা বহন করতে সক্ষম। অপরদিকে আমাদের প্রতিবেশী ভারত চীনকে মোকাবেলা করার জন্য একাধিক দেশ থেকে সমরাস্ত্র ক্রয় করছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাইশটি এ্যাপাচি ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী হেলিকপ্টার ক্রয় করেছে। প্রতিটি এ্যাপাচি হেলিকপ্টার ১৬টি করে হেলফায়ার ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী মিসাইল বহন করে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে সাবমেরিন ধ্বংস করতে সক্ষম ‘পি-৮ আই’ বিমান সরবরাহ করবে। এই বিমান যেকোনো সাবমেরিনকে ধ্বংস করতে সক্ষম। সমুদ্র উপকূলে নজরদারী, শত্রু জাহাজের উপস্থিতি শনাক্ত করতে এই বিমানের কোনো তুলনা নেই। এই সাবমেরিন বিধ্বংসী বিমানটি ‘হারপুন ব্লক-২’ ক্ষেপনাস্ত্র বহন করে। ‘হারপুন ব্লক-২’ ক্ষেপনাস্ত্রর গতি ২২০০ কিলোমিটার অর্থাৎ ২২০০ কিলোমিটার দূর থেকেই শত্রু পক্ষের যেকোনো সাবমেরিনকে ধ্বংস করতে ‘পি-৮ আই’ বিমান সক্ষম। এছাড়া এই বিমানকে ভারত লাদাখ সিমান্তে মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর ভারতও নিজস্ব প্রযুক্তিতে একাধিক মিসাইল তৈরি করেছে। এর মধ্যে অগ্নি-৪ ও অগ্নি-৫ অন্যতম। এই মিসাইলগুলো পরমাণু বোমা বহনে সক্ষম। এছাড়া ফ্রান্স থেকে ভারত রাফাল জঙ্গি বিমানের প্রথম চালান পেয়েছে। এই জঙ্গি বিমানগুলোকেও লাদাখ সিমান্তের কাছাকাছি রাখা হয়েছে। ভারত নিজস্ব প্রযুক্তিতে চালকবিহীন গোয়েন্দা বিমান ‘যোদ্ধা’ নির্মাণ করেছে। এই চালকবিহীন গোয়েন্দা বিমান ২৬ হাজার ফিট উচ্চতা পর্যন্ত উড়ার ক্ষমতা রাখে। একটানা আঠার ঘণ্টা আকাশে চলতে সক্ষম ‘যোদ্ধা’ চালকবিহীন গোয়েন্দা বিমান। ভারতের একমাত্র বিমানবাহী রণতরী আই এন এস বিক্রমাদিত্যতে নতুন মডেলের মিগ-২৯ ও এসইউ-৩০ জঙ্গি বিমান মোতায়েন করা হয়েছে। লাদাখ সীমান্তে ভারত দূরপাল্লার মিসাইল, চালকবিহীন গোয়েন্দা বিমান, ট্যাঙ্ক ও সাজোয়া গাড়ি মোতায়েন করেছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে চীনকে পরাস্ত করা। ভারতের এই সামরিক প্রস্তুতি দেখে চীন ও ভারতকে মোকাবেলা করতে সক্ষম পঞ্চম প্রজন্মের জঙ্গি বিমান জে-২০, লাদাখে মোতায়েন করেছে। ভারতের কোনো জঙ্গি বিমানের পক্ষে জে-২০ জঙ্গি বিমান মোকাবেলা করা সম্ভব নয় বলে সামরিক বিষেশজ্ঞা মনে করেন। এছাড়াও চীন চারপাশ থেকে ভারতকে ঘেরাও করার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। ভারতের শেষ সীমানা আন্দামানেও চীনের সাবমেরিন পৌঁছে যায়। ভারতের কোনো রাডার চীনের সাবমেরিনকে শনাক্ত করতে পারে না।
মধ্যপ্রাচ্য থেকে নিয়ে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো পরস্পরের বিরুদ্ধে যে সমরাস্ত্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে তার মূলে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কিছু দেশ। তারাই চায় এই অঞ্চলগুলোতে সংঘাত লেগে থাক। সংঘাত যতদিন থাকবে ঐ দেশগুলো সমরাস্ত্র বিক্রি করতে পারবে। তা না হলে একবার যদি শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় পরাশক্তিগুলো অর্থনৈতিকভাবে ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে।
লেখক পরিচিতি: সমরাস্ত্র বিশ্লেষক।