জেমস রহিম রানা, বিশেষ সংবাদদাতা ● পা দিয়ে লিখে কৃতিত্বে সঙ্গে এসএসসি পাস করা যশোরের আদম্য মেধাবী তামান্না নূরার পর এবার প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা পাচ্ছে যশোরের আরেক আদম্য মেধাবী স্কুল ছাত্রী লিতুন জিরা। হাত-পা ছাড়া জন্ম নেওয়া যশোরের শারীরিক প্রতিবন্ধী লিতুন জিরার পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি লিতুন জিরার পড়াশোনা ও চিকিৎসার জন্য তাকে ৫ লাখ টাকা অর্থসহায়তা দিচ্ছেন।
আগামী ৩ এপ্রিল রবিবার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে শেখ হাসিনা নিজ হাতে লিতুন জিরাকে আর্থিক সহায়তার চেক প্রদান করবেন। এর আগে ৩ মার্চ শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা পোষণ করে চিঠি লিখেন লিতুন জিরা। সেই চিঠি পেয়েই প্রধানমন্ত্রী লিতুনের খোঁজ খবর নেন।
লিতুন জিরা যশোরের মনিরামপুর উপজেলার শেখপাড়া খানপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান ও জাহানারা বেগম দম্পতির মেয়ে। দুই ভাই-বোনের মধ্যে ছোট লিতুন।
এর আগে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শারীরিক প্রতিবন্ধী তামান্না নূরার কৃতিত্ব দেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহেনা তার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এবং তাকে সহযোগিতা করেন।
গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে প্রবেশের অনুমতি ও ৫ লাখ টাকা অর্থসহায়তা পাওয়ার বিষয়ে একটি চিঠি এসেছে লিতুন জিরার বাড়িতে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লিতুন জিরার বাবা হাবিবুর রহমান।
লিতুন জিরা যশোরের মনিরামপুর উপজেলার শেখপাড়া খানপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান ও জাহানারা বেগম দম্পতির মেয়ে। দুই ভাই-বোনের মধ্যে ছোট লিতুন। তার বাবা মনিরামপুর উপজেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এ আর মহিলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক।
জন্ম থেকেই লিতুন জিরার দুটি পা নেই। দুই হাতও নেই কনুইয়ের ওপর থেকে। তবু লেখাপড়ার অদম্য চেষ্টা মেয়েটির। লেখার জন্য ডান হাতের বাহুর আগা দিয়ে কলম চেপে ধরে চোয়ালে। এভাবে লিখেই কৃর্তিত্বের সঙ্গে প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে পড়াশুনা করছে মাধ্যমিকে। এবার সে উপজেলার গোপালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জেএসসি পরীক্ষা দেবেন। এর আগে, ২০২০ সালের খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পাওয়ার সঙ্গে বৃত্তি পায় লিতুন জিরা।
এক প্রশ্নের জবাবে হাবিবুর রহমান বলেন, লিতুনের জন্য বর্তমানে প্রচুর খরচ। সে নিজে চলাফেরা করতে পারে না। তাই তার একটি গাড়ির দরকার সবসময়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া অর্থসহায়তার টাকায় তার চলাফেরার জন্য একটি গাড়ি ও পড়াশোনার জন্য কিছু টাকা তিনি সঞ্চয় রেখে ভর্বিষ্যতে কাজে লাগাতে চান।
লিতুন জিরার পাশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এগিয়ে আসায় ভীষণ খুশি মা জাহানারা বেগম। লিতুনের কিছুটা সংগ্রামের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, লিতুনের জন্মের পর তাকে দেখে অনেক কেঁদেছিলাম। পরে সিদ্ধান্ত নেই তাকে কারও বোঝা হতে দেব না। সেই পণ থেকে ছোটবেলায় ওকে টুলের সামনে বসিয়ে রাখতাম। টুলের ওপর লেখার স্লেট রেখে হাতে দিতাম খড়িমাটি। খড়িমাটি ডান হাতের বাহুর মাথা দিয়ে ডান চোয়ালে চেপে ধরে নিচু হয়ে মেয়েটা স্লেটে লিখত। এভাবে নিজে নিজেই লেখা শিখেছে। একইভাবে কলম ধরে খাতায় লিখে প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে এখন সে মাধ্যমিকে। সে এবার জেএসসি পরীক্ষা দেবে। তার প্রস্তুতিও ভালো।